অবশেষে আমবাগানে ও সিএটিসিতে মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে না : বেবিচকে ৩০০ কোটি টাকার কাজ ভেস্তে যাচ্ছে

একুশে বার্তা রিপোর্ট :  কোন কাজের প্রাক্কলন, কোনটার প্রশাসনিক অনুমোদন আবার  কোনটার টেন্ডার সম্পন্ন করে মূল্যায়ন করে কার্যাদেশ প্রদান-এমন প্রায় ৩শ’ কোটি টাকার টাকার কাজ বেবিচকে ভেস্তে যাচ্ছে। এর সাথ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা পথে বসে বসার উৃপক্রম হবে বলে জানা যায়। এতে উন্নয়ন থমকে যাবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঠিকাদারসহ বেবিচকের। নতুন করে এ সব কাজের প্রক্রিয়ায় ডবল অর্থ খরচ করতে হবে।

তবে এ সব  কাজে পূর্ত কাজের কার্যাদেশ হলেও এর সাথে সংশ্লিষ্ট ইএম কাজের কোন খবর নেই। একটি ভবন নির্মানে পূর্ত কাজের পাশাপাশি ইএম কাজও থাকা উচিত, ইএম কাজ ছাড়া ভবনে বাতি জ্বলবে কেমনে?

ধর্মীয় কাজে ব্যবহ্ত দুটি মসজিদও নির্মাণ করা হচ্ছে না। যদিও এই মসজিদ দুট নির্মাণে  বৈষম্য বিরোধী কর্মচারিরা স্মারকলিপিসহ মানববন্ধন করেছে। এর আগে  বেবিচক সাবেক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান মসজিদ দুটি নির্মাণে শুভ উদ্ধোন করেন।

৩শ’ কোটি টাকার কাজ বাতিলে পরিচালক পরিকল্পনা, সদস্য অপসসহ উর্ধতনদের হাত রয়েছে বলে জানা যায়। এরা সব কাজ বাতিলের পক্ষে নাকি মতামত প্রদান করেছেন। অডিট বিভাগের আপত্তি রয়েছে। যে কর্মকর্তার অডিট আপত্তি ছিল তাকেই আবার অডিট বিভাগের পরিচালক করা হয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কার্যাদেশের চুক্তির পরও শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের কয়েকটি বিমানবন্দরের প্রায় ৩শ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বাতিল করতে যাচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। চলতি মাসে এসব কাজের চুক্তি বাতিল করে সরকার। নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নতুনভাবে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এদিকে, সব কিছু ঠিক হওয়ার পরও বেবিচকের কার্যাদেশ বাতিলের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানিয়েছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা।

বেবিচকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাধ্যবাধকতা, ডিপিপি না মানা, ফিজিবিলিটি স্টাডি না হওয়া এবং বীমা সংক্রান্ত নথিপত্র জমা না দেওয়ায় এসব উন্নয়নমূলক কাজের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। ঠিকাদারদের অভিযোগ, এতে বিভিন্ন বিমানবন্দরের জরুরি প্রয়োজনীয় অনেক কাজ থমকে যাবে। পাশাপাশি বেবিচকও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, আবার নতুন করে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু করতে অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় বাড়বে।

কার্যাদেশ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া ৩শ কোটি টাকার কাজের মধ্যে রয়েছে কুর্মিটোলার ইর্শাল কলোনিতে ১৪ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ, কাওলায় ১৪ তলা আবাসিক ভবন, থার্ড টার্মিনালের সাউথ সাইডে স্টেকহোল্ডারদের জন্য অফিস ভবন, সিএটিসি কমপ্লেক্স-এ নতুন মসজিদ, বেবিচক হেড অফিসের ইস্ট সাইডে ৬ তলা অফিস ভবন, বেবিচকের প্রশাসনিক এলাকায় সেমসুর অফিস কমপ্লেক্স, ওয়ার্কশপ ও ওয়্যারহাউজ, তেজগাঁওয়ে ২টি ৬তলা ভবন, আমবাগানে নতুন মসজিদ ও অন্যান্য কাজ এবং কুর্মিটোলায় বেবিচক কলেজের পাশে অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে ৬ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ, সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে সেন্ট্রাল স্টোর, অভিযোগ সেন্টারসহ নানা অফিসের জন্য ভবন, সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে ১৪ তলা ভবনের ১০তলা আবাসিক ভবন, ৬তলা কোয়ার্টার ভবন, কক্সবাজার বিমানবন্দরে ডি টাইপ কোয়ার্টার, বাগেরহাট খানজাহান আলী বিমানবন্দরে অফিস ভবন কাম রেস্ট হাউজ, কার পার্কিং, কানেক্টিং এবং অভ্যন্তরীণ রাস্তা ভূমি উন্নয়ন, ড্রেনেজ সিস্টেমের নির্মাণ কাজ, ওসমানী বিমানবন্দরে ১০তলা আবাসিক ভবন, ৬তলা কোয়ার্টার এবং কক্সবাজারে ডি টাইপ কোয়ার্টার নির্মাণ কাজ।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, বিগত আর্থিক বছরে বেবিচকের নিজস্ব তহবিল থেকে এসব ভবন, অবকাঠামো ও স্থাপনা নির্মাণখরচ বহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী বেবিচকের বর্ধিত জনবলের দাপ্তরিক, আবাসন, ধর্মীয় উপাসনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি সুবিধাদী সৃষ্টির প্রয়োজনে এ সব কাজ জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা থাকায় দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় কাজ এখনও শুরু হয়নি। এ ছাড়া এসব কাজের ডিপিপি অনুমোদনের জন্য গত বছর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেয়। তবে এগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ব্যতীত নতুন আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন এবং অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে।

বেবিচকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কার্যাদেশ দেওয়া কাজগুলোতে শুধুমাত্র পূর্ত কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, ই/এম কাজ অন্তর্ভুক্ত নেই। ফলে কাজ বাস্তবায়নে জটিলতা হতে পারে এবং যেহেতু ডিপিপি প্রণয়ন/অনুমোদন না করে কাজসমূহের প্রশাসনিক অনুমোদন, দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ, কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে; যা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও পরিকল্পনা শৃঙ্খলার পরিপন্থি। যেহেতু চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে পরিচালন বাজেটের আওতাধীন ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত কাজের অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিধি-নিষেধ রয়েছে এবং ঠিকাচুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সাধারণ বীমা করপোরেশন হতে তালিকায় বর্ণিত কাজগুলোর ইনস্যুরেন্স ডকুমেন্টস পাওয়া যায়নি এবং দাপ্তরিক/আবাসিক/মসজিদ/কলেজ অ্যাকাডেমিক ভবনসংশ্লিষ্ট কাজগুলোর ক্যাপাসিটি যথাযথ ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পাদনের মাধ্যমে পুনর্নির্ধারণ করা প্রয়োজন, সেহেতু এসব কাজের প্রশাসনিক অনুমোদন ঠিকাচুক্তি বাতিল করে নতুনভাবে সরকার নির্ধারিত যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক কাজসমূহ বাস্তবায়নে  অনুমোদনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বেবিচক  চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূইয়া বলছেন, তালিকাভুক্ত কাজগুলোর মধ্যে বেশকিছু কাজ এই মুহূর্তে প্রয়োজন নেই। নতুন করে এ বিষয়ে তালিকা করে বিমান মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। মন্ত্রণালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।