ইফায় ১৫৮ আওয়ামী কর্মীর নিয়োগ নবায়ন , প্রেতাত্মারা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বহাল তবিয়তে

ডেক্স রিপোর্ট : ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের পর দেশের সর্বত্র পরিবর্তনের হাওয়া লাগলেও সে হাওয়া স্পর্শ করেনি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে। ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ আখ্যা দিয়ে পতিত হাসিনার পক্ষে মানব-বন্ধন কর্মসূচি পালন করিয়ে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে কর্মরত হাসিনার প্রেতাত্মারা। ফ্যাসিবাদী পলাতক হাসিনার প্রেতাত্মা ধর্ম সচিব আব্দুল হামিদ জমাদ্দার এখনো বহাল তবিয়তে। ধর্ম সচিবের নির্দেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক ডিজি বশিরুল আলমের মাধ্যমে গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ আখ্যা দিয়ে ফ্যাসিবাদী হাসিনার পক্ষে চীন- মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের কাছে আওয়ামী সমর্থিত ইফার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে মানব-বন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছিল। ইসলামিক ফাউন্ডেশন জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (৫৩৪) সভাপতি এম এ বারি ইনকিলাবকে বলেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনার প্রেতাত্মারা এখনো ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইফায় বহাল তবিয়তে। বঙ্গবন্ধু পরিষদের লোকেরা ইসলামিক ফাউন্ডেশনে দাপটে চলছে। তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর যাবত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বৈষম্যের শিকার হয়ে নানাভাবে নিগৃহীত হয়ে ঢাকার বাইরে কর্মরত তাদের ব্যাপারে কোনো কথাই আমলে নিচ্ছে না ইফা কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, ইফার সচিব অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হলেও ধর্ম সচিবের নির্দেশে তাকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে আউটসোর্সিং কর্মীর নামে ১৫৮ আওয়ামী লীগ কর্মীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নবায়ন করছে ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। এদের সবাই বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ লাভ করেছিল। এদের মধ্যে ৪/৫ জনকে নতুনভাবে ঢুকানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব কর্মীদের নিয়োগের সময় পত্রিকায় কোন বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি, কোন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার প্রয়োজন হয়নি এবং বয়সের কোন বাধ্যবাধকতা ছিল না। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মীরা বিগত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সরকারের পক্ষে লাঠি নিয়ে মাঠে নামেন। বিগত ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে মানব-বন্ধন করে। এখনো তারা সমান দাপটের সঙ্গে আগারগাঁও ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফিসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব আউটসোর্সিং কর্মীদের চাকরি নবায়নের ক্ষেত্রে তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তাদের মতামত ও নেয়া হয়নি। এসব আউটসোর্সিং কর্মীদের নিয়োগ নবায়নের জন্য উপর মহলকে খুশি করতে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করা হয়েছে বলেও গুজব রয়েছে। জানা গেছে, ১১তম বিসিএস এর কর্মকর্তা ধর্ম সচিব আব্দুল হামিদ জমাদ্দার এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কর্মরত ২৪ তম বিসিএস এর উপ-সচিব আশরাফুল মুবিন খান প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মীদের চুক্তি নবায়নে কাজ করছেন। আশরাফুল মবিন খান কিছুদিন আগে আইসিটি মন্ত্রণালয় বদলি হয়েছেন। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় তাকে রিলিজ দেয়নি। উপরন্তু অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলির পরেও তাকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও মার্কেটের পরিচালক পদে অফিস আদেশ জারি করেন। এ নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে যে আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত এদের কয়েকজনকে শুধু ইসলামিক ফাউন্ডেশনে নয়, সম্প্রতি ধর্ম সচিবের নির্দেশে মন্ত্রণালয়ে ধর্ম উপদেষ্টার দপ্তরে ও পদায়ন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের উপজেলা পর্যায়ের একজন আওয়ামী লীগ কর্মী মিজানুর রহমান মিজানকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে আউটসোর্সিং পিয়ন হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তাকে ধর্ম উপদেষ্টার ড্রাইভার হিসেবে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। তিনি ধর্ম উপদেষ্টা আ.ফ.ম.খালিদ হোসেনের গাড়ি চালাচ্ছেন। অথচ সরকারি বিধান অনুসারে রাজস্ব খাতে স্থায়ী চাকুরীজীবী ছাড়া ভিআইপিদের গাড়ি কেউ চালাতে পারে না। ড্রাইভার মিজানের শ্যালক টিটু ধর্ম সচিবের দপ্তরে গাড়ি চালান। মিজানের অপর শ্যালক ড্রাইভার জাহাঙ্গীর ইসলামিক ফাউন্ডেশনে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা হিসাবে পরিচিত। টিটু এবং জাহাঙ্গীর এরা ২ ভাই মাদারীপুরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান খানের কর্মী হিসেবে পরিচিত।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে যাদের চুক্তি নবায়ন করা হবে তাদের মধ্যে ক্যাটাগরি ১-এ রয়েছে ৬১ জন এবং ক্যাটাগরির ২ -এ রয়েছে ৯৭ জন। তাদের বেতন বাবদ প্রতি মাসে ব্যয় হবে ২৭ লাখ ৪৯ হাজার ১শ’ টাকা। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ২৭ লক্ষ টাকা। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে আউটসোর্সিং খাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ৩ টি ফেইজে প্রায় ৪ শত আওয়ামী লীগ কর্মী নিয়োজিত আছেন। তাদের পিছনে প্রতি মাসে ব্যয় প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। অথচ এদের কোন সুনির্দিষ্ট কাজ নেই। সদ্য অবসরে যাওয়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইনকিলাবকে জানান, অবসরে যাওয়া কর্মকর্তার কর্মচারীদের পেনশন দেওয়ার মত টাকা ইসলামিক ফাউন্ডেশনে নেই। অথচ আউটসোর্সিং নামে আওয়ামী লীগ কর্মীদের পিছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করার অর্থ কি আমাদের নিকট বোধগম্য নয়। দেশের সর্বত্র পরিবর্তনের হাওয়া বইলে ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কোন পরিবর্তনের হাওয়া লাগেনি। এখনো ইসলামিক ফাউন্ডেশন চালাচ্ছে আওয়ামীলীগের লোকজন। বঙ্গবন্ধু পরিষদের আওয়ামী দলীয় কর্মীরা এখনো বহাল তবিয়তে। উল্লেখ্য, অতিসম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল প্রকার অপব্যয় এবং অপচয় কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন।