একুশে বার্তা রিপোর্ট : বিগত সরকারের দোসর ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, দলীয়করন, ওভারটাইম বাণিজ্য ও আবাসন বাণিজ্যের মাধ্যমে গত চার বছরে বেবিচকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী শাহ্ মখদুম বিমান বন্দরের ম্যানেজার মোসা: দিলারা পারভীনের বিরুদ্ধে। জামাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক নেতা, সে সুবাধে পারভীন গোপালি বউ, এই দাপটেই গত ৪ বছরে রাজশাহী বিমানবন্দর কুপোকাত। শতকরা ২০-২৫ ভাগ ঘুষ ছাড়া তিনি ঠিকাদারি কাজের প্রত্যয়ন দেন না বলেও অভিযোগ ওঠেছে। তার খারাপ আচরণে কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ ঠিকাদাররা অতিষ্ঠ, তার কাছে ঢাকা থেকে আগত ঠিকাদাররা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। বেবিচকের সদর দপ্তর থেকে থাকে অন্যত্র বদলি করা হয় না, বেবিচক প্রশাসন ও পরিচালক মানব সম্পদ তাকে আগলে রেখেছে।মাসে মাসে মোটা অংকের নজরানা বেবিচকের হেড অফিসে চলে আসে বলেও শোনা যায়্।
ম্যানেজার দিলারা পারভীনের কার্যক্রম বাস্তবায়নে গড়ে তুলেছেন ৫ সদস্যের সিন্ডিকেট।এদের মধ্যে হিসাবরক্ষক মিজানুর রহমান সিন্ডিকেড প্রধান।
ম্যানেজার পারভীনের স্বামী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষক নেতা। শ্বশুর বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ার সুবাদে অধস্তন সকল- কর্মচারীকে তটস্থ করে রাখেন তিনি। দুই বছর পর পর বদলীর নিয়ম থাকলেও গোপালগঞ্জের পরিচয়ে কোন রকম বদলী ছাড়াই প্রায় ৪ বছর ধরে স্বপদে বহাল আছেন শাহ্ মখদুম বিমান বন্দরের ওই দাপুটে ম্যানেজার দিলারা পারভীন।
জানা যায়, শাহ্ মখদুম বিমান বন্দরের ম্যানেজার মোসা: দিলারা পারভীন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে দূর্নীতি সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তুলেছেন। সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, এয়ারপোর্ট ফায়ার অপারেটর নাজমুল হক, সুপারভাইজার মাহফিজুর রহমান ও আর্মড সিকিউরিটি গার্ড খাদিমুলের মাধ্যমে কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করেন তিনি।
ঠিকাদাররা অভিযোগ করে বলেন, শাহ্ মখদুম বিমান বন্দরের প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিত ঠিকাদারদের কাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হারে চাঁদা আদায় করে থাকেন এয়ারপোর্ট ফায়ার অপারেটর নাজমুল হক ও আর্মড সিকিউরিটি গার্ড খাদিমুল। কেনাকাটা ও প্রতিষ্ঠানের পুরাতন সরঞ্জামাদি বিনা টেন্ডারে বিক্রি এবং টাকার বিনিময়ে সাধারণ যাত্রিদের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সুপারভাইজার মাহফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। বিমান বন্দরের ৪ জন কর্মকর্তা মূল কাজ সম্পাদন করলেও মানেজারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। তার পরামর্শেই সকল ধরনের দূর্নীতিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন দিলারা পারভীন।
বিমান বন্দরের অফিসারদেরকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে ম্যানেজার মোসা: দিলারা পারভীনের বিরুদ্ধে। নিজের মনপুত না হলে কোন কারন ছাড়াই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শোকজ, সাময়িক বরখাস্ত ও বদলি করেন তিনি। বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকলেও ম্যানেজার দিলারা পারভীন নিজের পছন্দের লোক দিয়ে ওইসব দপ্তর পরিচালনা করে থাকেন তিনি। বিমান বন্দরে প্রায় ১০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রোস্টারভিত্তিক দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ১০-২০ গ্রেডের কর্মরত: ৭৫-৮০ জন অফিসার ওভারটাইম ডিউটি করে থাকেন। প্রত্যেকের জন্য মাসে ২০০ ঘন্টা ওভারটাইম বরাদ্দ থাকলেও অধিকাংশ অফিসারের কাছ থেকে কর্মঘন্টা কেটে অর্থের বিনিময়ে নিজের আস্থাভাজনদের দিয়ে ডিউটি করিয়ে থাকেন। ওভারটাইম সংক্রান্ত রেজিস্টারে কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর নেয়ার বিধান থাকলেও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন তিনি।
শাহ্ মখদুম বিমান বন্দরের অফিসারদের জন্য আবসিক বাসভবনের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে রয়েছে অব্যবস্থাপনা। সিনিয়রিটি অনুযায়ী বাসা বরাদ্দ না দিয়ে নিজের পছন্দসই ব্যক্তিগণকে বাসা ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। এমনকি মহিলা অফিসারকে বাসা না দিয়ে চাটুকার কর্মচারীদের বিনা ভাড়ায় বাসায় থাকতে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে অনেক অফিসার বিমান বন্দরের বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকলেও অধিকাংশ ডরমেটরি বহিরাগতদের দখলে। আবার ব্যাচলর আবাসিক কক্ষ ফ্যামিলি হিসেবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে দিলারা পারভীনের নির্দেশে।
এ ছাড়াও নিয়মিত অফিস না করে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, ইচ্ছাকৃতভাবে চিঠিপত্রে স্বাক্ষর না করা, বিমানবন্দরের অপারেশনাল গাড়ি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পারিবারিক কাজে ব্যবহার করে থাকেন তিনি। বিমানবন্দরে কোন সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয় না। অফিসিয়াল মিটিং হলে সেখানে কোন অফিসারদের না রেখে পছন্দের কর্মচারীদের রাখেন। এমনকি বিরাগভাজন অফিসারদের পেছনে কর্মচারীদের দিয়ে গুপ্তচর হিসেবে লাগিয়ে রাখেন। কোন অসঙ্গতি দেখলেই ওই অফিসারকে হিসাব শাখায় ডেকে নিয়ে ম্যানেজার দিলারা পারভীন ও সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বদলী, বরখাস্তসহ নানা রকম ভয়-ভীতি দেখিয়ে শাসন করে থাকেন।
আওয়ামী লীগপন্থী এ কর্মকর্তা গোপালগঞ্জের বউ হওয়ার সুবাদে অন্য মতাদর্শের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হয়রানিতে লিপ্ত আছেন দীর্ঘ ৪ বছর যাবত। বৈষম্যের শিকার অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ২৫০০ হাজার কোটি টাকা প্রকল্পে কমিশন বাণিজ্যে প্রায় শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এ আগেও তাঁর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হলেও শুধুমাত্র গোপালগঞ্জের বউ হওয়ার সুবাদে স্বামীর ক্ষমতায় এখনো রয়েছেন বহালতবিয়তে।
এসব বিষয় কথা বলতে শাহ্ মখদুম বিমানবন্দরের ম্যানেজার দিলারা পারভীন বলেন, আমি কোনো গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবো না। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।