ডেস্ক রিপোর্ট: রাজস্ব প্রশাসনের সংস্কারের বিষয়ে যৌক্তিক প্রস্তাবগুলো মূল্যায়ন করা হোক
রাজস্ব প্রশাসনের সংস্কারে বিষয় বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মতামত যথাযথভাবে গ্রহণ করা হয়নি, তাঁদের মতামতকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। এমন অভিযোগ তুলে গত ২৭ এপ্রিল ২০২৫ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের উপেক্ষা এবং বিশেষায়িত জ্ঞানের অবমূল্যায়নের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, বি সি এস (কাস্টমস এ্যান্ড ভ্যাট) এসোসিয়েশন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রস্তাবিত ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ায় অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের উপেক্ষা এবং বিশেষায়িত জ্ঞানের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
গত রোববার (২৭ এপ্রিল ২০২৫) বিকেলে বি সি এস (কাস্টমস এ্যান্ড ভ্যাট) এসোসিয়েশন প্রেসিডেন্ট কাজী মোস্তাফিজুর রহমান এবং সেক্রেটারি জেনারেল একে এম নুরুল হুদা আজাদের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিবৃতিতে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজস্ব সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য যাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও বিশেষায়িত দক্ষতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল, সেই সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতামত যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। ফলে একদিকে যেমন কর-জিডিপি অনুপাত উন্নয়নের স্বপ্নে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে রাজস্ব প্রশাসনের টেকসই উন্নয়নের পথও হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত।
আরো বলা হয়, কর-জিডিপি অনুপাত উন্নয়নে অতিমূল্যায়িত জিডিপি, রাজস্ব প্রশাসনের শীর্ষপদে বাস্তব অভিজ্ঞতার ঘাটতি এবং রাজস্ব আহরণে সর্বনিম্ন বিনিয়োগ বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা সরকারের কাছে রাজস্ব আহরণে অধিক বিনিয়োগ এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মনোযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। বি সি এস (কাস্টমস এ্যান্ড ভ্যাট) এসোসিয়েশন, মনে করেন, রাজস্ব সংস্কার শুধু নীতি ও বাস্তবায়ন পৃথক করলেই যথেষ্ট নয় বরং রাজস্ব প্রশাসনের সামগ্রিক শক্তিশালীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন অপরিহার্য। আরও জানায়, সরকার গঠিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির আহ্বানে বি সি এস (কাস্টমস এ্যান্ড ভ্যাট) এসোসিয়েশন এবং বিসিএস (ট্যাক্সেশন) এসোসিয়েশন যৌথভাবে মতামত পেশ করেছেন।
তবে সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত অধ্যাদেশের খসড়া পর্যালোচনা করে এসোসিয়েশন দুটি লক্ষ্য করেছে যে, তাদের প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ মতামত সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। আলোচনা সভায় বিসিএস কাস্টমস ও ভ্যাট এসোসিয়েশন নিম্নলিখিত পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে, রাজস্ব নীতি বিভাগের শীর্ষপদে কর-রাজস্ব আহরণে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের পদায়নের প্রস্তাব থাকলেও খসড়ায় ‘যে কোনো সরকারি কর্মকর্তা’ নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে।
রাজস্ব নীতি বিভাগের মৌলিক পদে বিশেষায়িত ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের সুনির্দিষ্টভাবে নিয়োগের বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে। কর আইন প্রয়োগ ও আহরণ পরিস্থিতি পরিবীক্ষণের ক্ষমতা নীতি বিভাগকে দেওয়ার প্রস্তাবকে সাংঘর্ষিক হিসেবে অভিহিত করা হয়।
রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র সচিব নিয়োগে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ কর-রাজস্ব কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার না দেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রশাসনিক পদসমূহে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
আরও বলেন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণে মাঠপর্যায়ের বাস্তব অভিজ্ঞতার গুরুত্ব অপরিসীম। অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের বাদ দেওয়া হলে প্রশাসনিক দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা চরম ব্যাহত হবে। একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের কর্মস্পৃহা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
বিসিএস কাস্টমস ও ভ্যাট এসোসিয়েশন মনে করে, কর-রাজস্ব আহরণ, ব্যবস্থাপনা এবং রাজস্ব নীতি প্রণয়নে বিশেষায়িত ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে প্রস্তাবিত বিভাগ দুটিকে ব্যবসা-বান্ধব, গতিশীল ও জনমুখী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে হবে। কোনো বিশেষ মহলের প্ররোচনায় জনআকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তা কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, বিসিএস (ট্যাক্সেশন) এসোসিয়েশন ও বিসিএস (কাস্টমস ও ভ্যাট) এসোসিয়েশন দীর্ঘদি ধরেই এ দাবি করে আসছিল, রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব নিয়োগে রাজস্ব প্রশাসনে সরাসরি কাজ করা অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই নির্বাচন করা উচিত। তাদের প্রস্তাব ছিল, ‘রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মরত কর্মকর্তাদের’ মধ্য থেকে সচিব নিয়োগ করা হবে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত খসড়ার অনুচ্ছেদ ৪(৩)-এ বলা হয়েছে, ‘উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোনো সরকারি কর্মকর্তা’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। এতে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে বলে মনে করছেন সংগঠন দুটি। এসোসিয়েশন দুটির কথা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত, যা রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত কল্যাণকর। রাজস্ব আহরণের স্বার্থে রাষ্ট্র এবং জনগণের কল্যাণের জন্য অ্যাসোসিয়েশন দুইটির কথা মূল্যায়ন করা রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Share this:
- Click to share on Facebook (Opens in new window)
- Click to share on Twitter (Opens in new window)
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window)
- Click to share on Tumblr (Opens in new window)
- Click to share on Pinterest (Opens in new window)
- Click to share on Pocket (Opens in new window)
- Click to share on Reddit (Opens in new window)
- Click to share on Telegram (Opens in new window)
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window)
- Click to print (Opens in new window)