একুশে বার্তা রিপোর্ট : বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানকে তার পদ থেকে সরাতে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান তুষার বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের ৫ জন আইনজীবীর পক্ষে এ নোটিশ প্রদান করেন।
নোটিশে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেবিচকের চেয়ারম্যান ও প্রধান প্রকৌশলীকে বিবাদী করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের অনুসন্ধানে এই লুটপাটের সঙ্গে প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। এ ঘটনায় হাবিবুর রহমানসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, প্রধান প্রকৌশলীর মতো পদে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই তদন্ত কাজ ব্যাহত হবে। তিনি সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত ধ্বংস করতে পারেন বা সরিয়ে ফেলতে পারেন। তাই তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া জরুরি। তিনি পদে থাকলে স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকাটা স্বাভাবিক।
নোটিশে আরও বলা হয়, প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকে অনিয়ম-দুর্নীতির আরও একাধিক অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশের সব বিমান ও স্থলবন্দরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বেবিচকের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলায় ইতোমধ্যে আসামি হয়েছেন— সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিমান সচিব মহিবুল হক, যুগ্মসচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক ও বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) আওতাধীন দেশের বিমানবন্দরগুলোর উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে বলে জানা যায়। ইতোমধ্যে থার্ড টার্মিনালসহ দেশের ৮ বিমানবন্দরে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৯০০ কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে মামলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান তুষার বলেন, বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগে অন্ত নেই। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে একাধিক দুর্নীতির মামলা হয়েছে। তিনি তার পদে বহাল থাকলে মামলার তদন্ত কাজ প্রভাবিত করতে পারেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাকে তার পদ থেকে সরানোটা জরুরি। সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সুপ্রিম কোর্টে রিট দায়েরসহ অন্যান্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এ দিকে ২৩ মার্চ তার ( প্রধান প্রকৌশলীর) চাকরির মেয়াদ শেষ, ২ বছরের এক্সটেনশনের আবেদন নাকোচ,সংস্থার চেয়ারম্যান আবেদনে সুপারিশসহ সই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাননি বলে জানা যায়। তার আগেই তিনি দুদকের ৪ মামলায় ফেসে যান।
কে হচ্ছেন বেবিচকের প্রধা প্রকৌশলী- এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা , হিসাব-নিকাশ, চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। বেবিচকে প্রধান প্রকৌশলীর পদে বসার যোগ্য আপাতত নেই বললেই চলে। সিভিল থেকে কয়েক দিন আগে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে একজন স্থায়ী হয়েছেন, তার বিরুদ্ধেও দুদকের মামলা আছে। ইএম-এর আরেক তত্বাবধায়ক প্রকৌশীর বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলছে, অনুসন্ধানে দুর্নীতি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। তিনি আবার থার্ড টার্মিনালের পিডি।
বাইরে থেকে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী পদ পুরণের প্রক্রিয়া চলছে বলে শোনা যায়। আর এটা বাস্তবায়ন হলে বেবিচকে ৬ মেম্বারের মতো প্রধান প্রকৌশীর পদটিও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।