বেবিচকে উড়োচিঠির গডফাদার শাজাহান কবীরকে এখনও বরখাস্ত করেনি বেবিচক, বিভাগীয় মামলা করেই ক্ষান্ত! শাজাহানের শেষ অস্ত্র উড়োচিঠি সিএটিসির প্রিন্সিপালকে কুপোকাত করতে পারেনি, শাজাহানের দোসর রায়হান এখনও ধরাছোয়ার বাইরে!

একুশে বার্তা রিপোর্ট : বেবিচকে উড়োচিঠির গডফাদার শাজাহান কবীর এখনও বহাল, তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। সিলেট বিমানবন্দরে বদলি করে লঘু শাস্তি দেয়া হয়েছে মাত্র। বিভাগীয় মামলা দেয়া হলেও তার কার্যক্রম ঢিলেঢালা। ফলে বেবিচকের একজন সংখ্যালঘু পরিচালকের বিরুদ্ধে উড়োচিঠি দিয়ে কুপোকাত করতে গিয়ে শাজাহান নিজেই ধরা খেয়েছে। উল্টো তদন্তে শাজাহান কবীর দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। কিন্ত তাকে লঘু শাস্তি দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এসকে ( শাজাহান কবীরের) উড়োচিঠি নিয়ে একুশে বার্তার অনলাইন সংস্করণে সংবাদ প্রকাশিত হয়। নড়েচড়ে বসে বেবিচক কর্তৃপক্ষ, তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।
এখনও এসকে (শাজাহান কবির) বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সহকারী সমন্বয় কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। মাস গেলে বেতন পান ঠিকঠাক, বাড়তি উপরিও কামান দেদার। কিন্তু এতেও হচ্ছিল না তার। টাকার নেশায় সম্প্রতি তিনি ‘উড়োচিঠির’ বাণিজ্যে নামেন। বেবিচকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তার পদ থেকে সরাতে হলে সেই কর্মকর্তার প্রতিপক্ষরা যোগাযোগ করেন শাজাহানের সঙ্গে। এরপর মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভিকটিম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সত্য-মিথ্যা লিখে অভিযোগ আকারে সেই চিঠি পোস্ট অফিস বা কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠান বিভিন্ন দপ্তরে, দপ্তরে।

এ তো গেল প্রথম পর্ব, পরের ধাপে শাহজাহানের সঙ্গে ভিকটিম কর্মকর্তা-কর্মচারী আপসের জন্য যোগাযোগ করলে তার কাছ থেকেও হাতিয়ে নেন টাকা। এভাবে তিনি নির্ধারিত বেতনের পাশাপাশি উড়োচিঠির ফাঁদে ফেলে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে হাতিয়েছেন বিপুল পরিমাণে টাকা। প্রতারণার এই ফাঁদ জমাতে তিনিসহ বেবিচকে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে গড়ে তুলেছেন একটি বিশাল সিন্ডিকেট। এই ধান্ধার উড়োচিঠি আতঙ্ক এখন বেবিচকে।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, সর্বশেষ বেবিচকের ট্রেনিং সেক্টরের প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্যের উড়োচিঠির অভিযোগ দায়ের করে ফেঁসে গেছেন এসকে শাহজাহান। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত হাতে পেয়েও বরখাস্ত না করে এই চক্রের অন্যতম সদস্য বেবিচকের এই সহকারী সমন্বয় কর্মকর্তাকে সদর দপ্তরের ট্রেনিং সেন্টার থেকে প্রত্যাহার করে একই পদে সংযুক্ত করা হয়েছে সিলেট বিমানবন্দরে। রহিত করা হয় তার ২টি ইনক্রিমেন্ট।
অভিযোগ উঠেছে, শাহজাহানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হলেও এই চক্রের মূলহোতা বেবিচকের সিভিল ডিভিশন-১ দপ্তরে ইএম বিভাগের স্টোর কিপার মুহাম্মদ রায়হান মিয়ার টিকিটিও ছুঁতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বহালতবিয়তে আছেন তিনি।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া জানায়, বিভিন্ন সময়ে বেবিচকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বেনামি বা উড়োচিঠি এলেও তা আমলে নিয়ে তদন্ত করা হয়। কিছু অভিযোগের সত্যতা মিললেও বেশির ভাগই পরে ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে কয়েক কর্মকর্তা একই পদে থেকে অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এটা রুটিন প্রক্রিয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেবিচকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান,বেবিচকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে চিঠি দেওয়ার ঘটনা সম্প্রতি বেড়েই চলেছে। গুটিকয়েক বেবিচকের সহকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা, মন্ত্রণালয় ও বেবিচকের চেয়ারম্যান বরাবার মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন উড়োচিঠি দিয়ে। এভাবে হয়রানি ও টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের মূলহোতা ইএম বিভাগের স্টোর কিপার রায়হান মিয়াসহ চক্রের অন্য সদস্যরা। সম্প্রতি এমন উড়োচিঠি দেওয়ার ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় সহকারী সমন্বয় কর্মকর্তা শাহজাহানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বেবিচক কর্তৃপক্ষ। তবে স্টোর কিপার রায়হান মিয়া আছেন বহালতবিয়তে। এই চক্রের উড়োচিঠি আতঙ্কে ভুগছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিষয়টি রফা করতে গিয়ে এক শ্রেণির কর্মকর্তা আর্থিক সুবিধা দিতে হচ্ছে। এতে সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে বেবিচকের।
সরকারী সার্কুলারে উড়োচিঠির তদন্ত বন্ধে নির্দেশনা জারি করা হলেও বেবিচক অতি উৎসাহিত হয়ে উড়োচিঠির তদন্ত করছে। ফায়দা লুটছে তদন্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, গত ২১ অক্টোবর বেবিচক চেয়ারম্যানের দপ্তরে দায়ের হওয়া লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, স্টোরের কিপার পদে অন্য দপ্তরের কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করছে। তাদের স্ব স্ব দপ্তরে বদলি করলেও তারা যোগদান করেনি। এ ছাড়া পদোন্নতি হলেও কেউ কেউ স্টোর কিপারের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু এই তথ্যের সত্যতা মেলেনি। অপর এক বেনামি চিঠিতে বলা হয়, ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বছরের পর বছর ধরে পদোন্নতি হওয়ার পরও একই পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের স্ব স্ব পদে দায়িত্ব পালনের জন্য বদলি করা হয়। খোঁজ নিয়ে এর সত্যতাই পাওয়া যায়নি। ট্রেনিং সেক্টরের প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অভিযোগ করেছিলেন অভিযুক্ত সমন্বয় কর্মকর্তা শাহজাহান। বিষয়টি ধরা পড়ার পর তার ২টি ইনক্রিমেন্ট রহিত করা হয়। এরপর বিভাগীয় মামলা হয়। সেখানেও তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। এরপর রহস্যজনক কারণে তাকে বরখাস্ত না করে শাস্তিমূলকভাবে বদলি করা হয় সিলেটে।
অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে সাফাই গাইছেন এসকে , তিনি জানান, তিনি কারও বিরুদ্ধে কোনো উড়োচিঠি দেননি। ইচ্ছা করেই বদলি হয়েছেন। বিগত সরকারের সময়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দেওয়া হয়।
এসকে বেবিচক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনলেও তিনিই যে, বেবিচকে উড়োচিঠি/বেনামি চিঠির কারিগর এ কথা বেবিচকের বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এক সময় তার বস ছিল বর্তমান ফ্লাইট সেফটি পরিচালক নূরুল ইসলাম।তার আসকাড়াতেই এসকে উড়োচিঠির কারিগর বনে যান। এক সময় এসকে স্টোরের দায়িত্ব পালনকালে স্টোরের পণ্য এধার-ওধার করতেন বলেও শোনা যায়। পরে তাকে স্টোর থেকে সরিয়ে সিএটিসিতে বদলি করা হয়। কিন্ত সেখানেও তার অপরাধ প্রবণতা থেমে থাকেনি, সেখানেও খোদ পরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির উড়োচিটি সাপ্লাই করেন। একজন রিপোর্টারকে দিয়ে একটি পত্রিকায় ওই কথিত দুর্নীতির রিপোর্টও করান। কিন্ত বিধি বাম, ফেসে যান শজাহান কবীর। কিন্ত বেবিচক তাকে আগলে রেখেছে, তাকে এখনও বরখাস্ত করেনি বেবিচক।