ডেস্ক রিপোর্ট: ত্রিশ বছর ধরে ৬০টি পরামর্শক পদে বেসামরিক লোকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে আসছিল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এদের পেছনে মাসে খরচ প্রায় কোটি টাকা। বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই রাজনৈতিক কানেকশনে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অবশেষে এসব পদে নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিধি ভেঙে নিয়োগ পাওয়া এমন অন্তত ৫৪ জন পরামর্শকের চুক্তি আর নবায়ন করছে না মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি চুক্তিভিত্তিক পরামর্শকদের চুক্তি নবায়ন করতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল বেবিচক। তবে চিঠিটি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যাওয়ার পর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নবায়ন না করার নির্দেশনা আসে। নির্দেশনা সম্বলিত ওই চিঠিতে বলা হয়Ñ সরকারি ক্রয় বিধিমালায় উল্লিখিত বুদ্ধিভিত্তিক এবং পেশাগত সেবা ও ক্রয় সংক্রান্ত বিধিবিধান অনুসরণ করে নিয়োগ প্রদানের পরামর্শসহ একটি সারসংক্ষেপ ফেরত পাঠানো হলো।
এই প্রসঙ্গে বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নবায়ন করা যাবে না। যাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তারা আর চাকরি পাবে না। এ ছাড়া সামনের দিনগুলোতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল (পিপিআর) মেনে এই পদগুলোয় নিয়োগ দেওয়া হবে।
বেবিচক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন বিভাগে বর্তমানে ৫৪ জন সিনিয়র কনসালট্যান্ট, কনসালট্যান্ট, বিশেষ পরিদর্শক, জুনিয়র কনসালট্যান্ট, ডিএফওআই, ডিএমই, অ্যাভিয়েশন আর্টনিসহ পরামর্শক খাতে ৬০টি পদ থাকলেও বর্তমানে চুক্তির
ভিত্তিতে কর্মরত আছেন ৫৪ জন। এর মধ্যে ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশনস বিভাগেই কর্মরত রয়েছেন ৪৯ জন, অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি বিভাগে চার ও ফাইন্যান্স বিভাগে একজন পরামর্শক কর্মরত আছেন। এসব কর্মকর্তাদের অনেকেরই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন আছে। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক নেতাদের তদবিরে অনেকে নিয়োগ পেয়েছেন।
এ বিষয়ে বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, তাদের পেছনে প্রায় কোটি টাকা খরচ হয় প্রতি মাসে। এমনকি এর মধ্যে তাদের বেতনও বৃদ্ধি করা হয়েছিল। ওই সময় বেতন বৃদ্ধি না করতে আমরা নিষেধ করেছিলাম। এসব পরামর্শকদের পরিবর্তে ভালো কর্মকর্তাদের ব্যবহার করতে পারলে রাষ্ট্রের অর্থ বেচে যায়। কিন্তু বেবিচকের সিন্ডিকেটের কারণে তা আর সম্ভব হয়ে উঠে না। তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী সামনের দিনগুলোতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দেওয়ার সম্ভবনা আছে। বেবিচকের নিয়মিত কর্মকর্তারা বলছেন, একই কাজ করেও তারা পরামর্শকদের চেয়ে অনেক কম বেতন-ভাতা পান।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ পরিদর্শক (এভিয়েশন পাবলিক হেলথ), বিশেষ পরিদর্শক (অপারেশনস), বিশেষ পরিদর্শক (এভিয়েশন পাবলিক হেলথ) ও বিশেষ পরিদর্শক (এসএমএস)-এর মাসিক বেতন ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা করে। বিশেষ পরিদর্শক (সিনিয়র ফ্লাইট অপারেশনস ইন্সপেক্টর-ফিক্সড উইং) মাসিক বেতন ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা করে বেতন পান এভিয়েশন এটর্নি, বিশেষ পরিদর্শক (পারসোনাল লাইসেন্সিং), বিশেষ পরিদর্শক (অপারেশনস) ও বিশেষ পরিদর্শক (অপারেশন-এআইআর)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, এসব পদে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগে কোনো ধরনের নিয়মনীতি মানা হয়নি। অযোগ্য, অদক্ষ এবং বিমান চলাচলে কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা নেইÑ এ রকম কনসালট্যান্টদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সময়ে।