বেবিচক : প্রকৌশল বিভাগে দেড়যুগ যাবত পদোন্নতি বন্ধ, ডিপিসি হচ্ছে না, একজন জেলখাটা দুদকের মামলার আসামীকে পদোন্নতি দেয়ার পায়তারা! এবার প্রধান প্রকৌশলী পদে প্রকৌশল বিভাগ থেকে আউট হওয়া প্রকৌশলীর জন্য ‘দুদকের ক্লিয়ারেন্স’ চেয়ে চেয়ারম্যানের দাপ্তরিক চিঠি, অন্য প্রকৌশলীদের দুদক ক্লিয়ারেন্স অলস পড়ে আছে ৬ মাস যাবত: বেনামি চিঠির গডফাদার কেরানি এসকে( শাজাহান কবীর) এখনও বহাল, যোগদান করছেন না সিলেট বিমানবন্দরে

স্টাফ রিপোর্টার : বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ- বেবিচকে প্রকৌশল বিভাগে গত দেড়যুগ ধরে এক পদে চাকরি করলেও পদোন্নতি বন্ধ, ডিপিসি হচ্ছে না, এরা বৈষম্যের শিকার, এরা পদোন্নতি না পেয়ে মানসিক যন্ত্রনায় ভুগছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রশাসনের কিপয়েন্ট সচিবালয়সহ সব সেক্টরে বৈষম্যদের পদোন্নতি দেয়া হলেও বেবিচকে এর ব্যতিক্রম। এর আগে সিনিয়র প্রকৌশলীদের ডিঙিয়ে কতিপয় জুনিয়র প্রকৌশলীদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ চলতি নির্বাহী/ তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্বে আছে ১০-১২ বছর ধরে।
দুদকের মামলার আসামি জেলখাটা ইএম বিভাগের এক সংখ্যালঘু প্রকৌশলীকে পদোন্নতি দিতে না পেরে পদোন্নতি বোর্ড ডিপিসি বন্ধ করে দিয়েছে। বলা হচ্ছে তাকে আগে পদোন্নতি দেয়া হবে এরপর অন্যদের পদোন্নতি দেয়া হবে। দুদকের মামলা শেষ হয়ে ফাইনাল রায় হতে হতে আরো ১২ বছর লাগতে পারে, তাহলে কি অন্য প্রকৌশলীরা এই ১২ বছর পদোন্নতি না পেয়ে শেষ পর্যন্ত শূন্যহাতে বাড়ি ফিরে যাবেন- এ প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।
এ দিকে প্রকৌশল বিভাগ থেকে আউট হওয়া, এফএসআর বিভাগে কর্মরত এক তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী( সিভিল) কে ডিপিসি করে প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি প্রদানের জন্য তাকেসহ আরো ৩ জনের জন্য ‘দুদক ক্লিয়ারেন্স’ চেয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান গত ২৭ আগস্ট/২০২৪ তারিখে দুদকে এক দাপ্তরিক চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠির বিষয়বস্ত হচ্ছে: ‘দুর্নীতি সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন সরবরাহকরণ ‘ ওই ক্লিয়ারেন্স চাওয়া দাপ্তরিক চিঠিতে ইএম বিভাগের প্রকলপ থেকে আসা ২ প্রকৌশলীর নামও রয়েছে। আর দুদকের মামলার আসামির জন্যও দুদকের ক্লিয়ারেন্স চাওয়া হয়েছে। দুদকের মামলার আসামির জন্য আবার নতুন করে দুদকের ক্লিয়ারেন্স?

১১ বছর একই পদে : ১১ বছর একই পদে চাকরি করছেন সহকারি প্রকৌশলী ( সিডি-১) জহির। তাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না। মাহফুজুর রহমানকে ডিপিসিতে এসডিই করা হয়েছে আর   ইসমাইল হোসেনকে চলতি দায়িত্বের এসডিই করা হয়েছে। সিডি-১-এ  বৈষম্যের শিকার সিভিল ডিভিশনের প্রকৌশলী আল মামুন, নিজাম। আর ইএম  ডিভিশনের হাসান, মিজান, সিরাজুল ইসলাম, ফারুক হোসেন। এদের জুনিয়র জাকিয়া সুলতানা,অহিদুজ্জামানকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। আবার সিডি/ইএম-এর ৬ জনকে এসডিই করা হয়েছে, দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলীর। সিডি-১-্এর  তারেককে সহকারি প্রকৌশলী  করা হয়েছে। ইসমাইলকে এবার চলতি দায়িত্বের নির্বাহী প্রকৌশলী করা হতে পারে।
সূত্রমতে আগে কাজের প্রশাসনিক অনুমোদন পরে এপিপি।  এবার নাকি আগে প্রশাসনিক পরে এপিপি হবে। বেবিচক  চেয়ারম্যান  বিভিন্ন এয়ারপোর্টের
গত বছরের এপিপির  বাইরে  বিভিন ঠিকাদারি কাজ কেটে দেবার নির্দেশ দিয়েছেন,  চলতি অর্থ বছরে এপিপিতে এ কাজগুলোর তালিকাভুক্ত করে  ওঠানো হচ্ছে না।

চলে গেছেন, নতুন মেম্বার এফএসআর হিসেবে গ্রুপ ক্যাপ্টেন মুকিতউল আলম বেবিচকে যোগদান করেছেন। গ্রুপ ক্যাপ্টেন মুকিতউল আলম ইতিপূর্বে এফএসআর পরিচালক হিসেবে বেবিচকে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বদলির পরও মেম্বার অপস এখনও বহাল, তিনি বেবিচক ছেড়ে যাচ্ছেন না। এ দিকে নতুন মেম্বার অপস এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খানও বেবিচকে যোগদান করেননি।


এ দিকে বেবিচক থেকে বদলি করা হচ্ছে না সরকারের দুই যুগ্ম/অতি. সচিব মেম্বার এডমিন ও মেম্বার অর্থকে। এদের বিরুদ্ধে ব্যানার সাটিয়ে মানব বন্ধন করা হলেও এরা এখনও বেবিচকে বহাল। বেবিচকের বাতাসে ভেসে বেড়ায় মেম্বার এডমিন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী পলককে পালাতে সহায়তা করার সময় তা ষোলকলা পূর্ন হয়নি, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা বেবিচকের সহায়তায় পলককে ধরে ফেলে। পলকের বাড়ি আর মেম্বার এডমিনের বাড়ি বৃহত্তর রাজশাহীতে।
এ দিকে মেম্বার অর্থ আওয়ামী দোসর হলেও তাকে এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত সচিব করা হয়েছে। তিনি  রাষ্ট্রপতির  একান্ত সচিব দিদারুল আলমের ঘনিষ্ঠ। বেবিচক ঠিকাদাররা জানান, শতকরা ১ ভাগ ঘুষ ছাড়া ঠিকাদারি কাজের ফাইলে স্বাক্ষর করেন না মেম্বার অর্থ। আর এই ঘুষের টাকা আদায় করে থাকেন একযুগ ধরে মেম্বার অর্থের পিএগিরি করা হাফিজ নামের এক কেরানি।
এডমিনে ঘুষের ছড়াছড়ি : বেবিচকের এডমিন বিভাগে ঘুষের ছড়াছড়ি, ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়েচড়ে  না। ১০-১২ বছর ধরে এডমিনে বসে এ ঘুষের টাকা আদায়ে ভুমিকা রাখছেন গোপালগন্ঞজের বাসিন্দা এডি তিরান হোসেন, ডিডি আবিদুল ইসলাম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম, কেরানি রুকনুজ্জামান, মোমেন, জাহিদ। এদেরকে রহস্যজনক কারণে এডমিন থেকে বদলি করা হয় না।
এসকে (শাজাহান কবীর) বেনামি চিঠির গডফাদার : পরিবহনের জ¦ালানি তেল চুরি, স্টোর থেকে পণ্য এধার-ওধার, বেনামি চিঠির গডফাদার, বৈষম্যোর শিকারদের আওয়ামী দোসর বানানোর কারিগর এসকে ( শাজাহান কবীর) ধরা খেয়ে শাস্তিস্বরূপ সিলেট বিমানবন্দরে বদলি হলেও এখনও বহাল।ঢাকায় বসে ছড়ি ঘুরাচ্ছে, দ্বিতীয় বেনামি চিঠি ছাড়ার পায়তারা করছে। তাকে তিনবার বদলির পরও তাকে আরো বড় রকমের শাস্তির চিন্তাভাবনা করছেন পরিচালক এডমিন। তথ্য ফাসের অভিযোগে তাকে সাসপেন্ড করা হলো না কেন? ইতিপূর্বে তথ্য ফাসের অভিযোগে একজন প্রকৌশলীকে সাসপেন্ড করা হলেও এসকে এর ব্যতিক্রম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই এসকে ( শাজাহান কবীর) গত ১৫ বছর যাবত বেবিচকে যারা বৈষম্যের শিকার তাদেরকে আওয়ামী দোসর বানিয়ে বেনামি চিঠি তৈরি করে বিভিন্ন দপ্তরে সরকারি ডাকযোগে পাঠাচ্ছে। এ জন্য খিলক্ষেত পোস্ট অফিসের পিয়ন আব্দুল কাদেরকে টাকাপয়সা দিয়ে বেনামি চিঠি বিতরনের জন্য দায়িত্ব দেয় এই এসকে। কিন্ত বিধি বাম, ওই পোস্ট অফিস পিয়ন কাদির বেবিচকের সদর দপ্তরে চিঠি বিতরণ করতে এসে ধরা পড়ে, এসকের (শাজাহান কবীর) নাম বলে দেয়। পরে মুচলেকা দিয়ে ওই পিয়ন ছাড়া পায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শাজাহান কবীর সিএটিসিতে কর্মরত থাকার পর সিএটিসির পরিচালক প্রশান্ত কুমারের দুর্নীতির কল্পকাহিনী বানিয়ে দুদকে বেনামি চিঠি দিয়ে হয়রানি করায়, গণমাধ্যমে রিপোর্ট করায়, পরে তদন্তে ধরা পড়ে এসকে-কে সিলেট বদলি করা হয়। কিন্ত এসকে এখনও সিলেটে যোগদান করেননি। কোন কোন কর্মকর্তা তাকে ব্যবহার করে ঈন্ধন যুগাচ্ছে, বেনামি চিঠিতে বৈষম্যের শিকারদের আওয়ামী দোসর বানানো হচ্ছে, আবার আওয়ামী দোসরদের বৈষম্য শিকার বানানো হচ্ছে। এই এসকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের অপমান করারও পায়তারা করছে। এত কেউ কেউ ঈন্ধন যুগাচ্ছে।
সরকারি সার্কুলারে বেনামি চিঠি আমলে নেয়ার নির্দেশনা না থাকলেও বেবিচক কর্তৃপক্ষ অতি উৎসাহী হয়ে তা আমলে নিয়ে কাউকে কাউকে ফাসিয়ে দিচ্ছে। সিএটিসির পরিচালকের বেনামির চিঠির কারিগর এসকের নাম ফাস হলেও এসকের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আইওয়াশের জন্য তাকে সিলেটে বদলি করা হয়েছে মাত্র। এই এসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে বেবিচকের অনেক কর্মকর্তার চরিত্র হনন করতে পারে বলে অনেকে আশংকা করছেন।