স্টাফ রিপোর্টার: বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ -বেবিচক অবশেষে পরিচালক মানব সম্পদ মোহাম্মদ নূরুল ইসলামকে বদলি করেছে। সদস্য অপসের একক প্রচেষ্টায় তাকে বদলি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। প্রায় আড়াইযুগ পর নূরুল ইসলামকে ব্লাকবল পদ থেকে বের করে এনে বদলি করা হলো। এতোগুলো বছর তিনি প্রশাসনের কি- পয়েন্টে বসেছিলেন। বেবিচক তার জন্য পরিচালক মানব সম্পদ পদ সৃষ্টি করে তাকে ওই পদে পদায়ন করে। এর আগে তাকে এডি প্রশাসন এবং ডিডি প্রশাসনে দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োজিত করে বেবিচক। তাকে গত ৮ সেপ্টেম্বর বদলি করে প্রঙাপন জারি করেছে বেবিচক।
ওই প্রঙাপনে পরিচালক প্রশাসন আবু সালে মোহাম্মদ জংগি মুছা, সেই উপপরিচালক- সাধন কুমার মোহন্ত যাকে ব্যবসায়ীরা ভাড়ার টাকা আত্মসাত করাসহ নানা অভিযোগে মেম্বার অপসের রুমে লান্ঞিত করে।
এডি আনোয়ার হোসেনকেও বদলি করা হয়েছে। তার বদলি আইওয়াশ মাত্র। তিনি যেখানে কর্মরত-পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও মনিটরিং বিভাগ,সিএএবি সদর দপ্তর, ঢাকা- এখানেই কর্মরত রেখে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সহকারি পরিচালক এটিএম , সদস্য পরি: পরি:-এর দপ্তর, সিএএবি সদর দপ্তর, ঢাকায় বদলি করা হয়।
ডিডি সাধন কুমার মোহন্ত শাহজালাল বিমানবন্দরে বিভিন্ন লাউন্ঞ এবং বিঙাপনি সংস্থার কাছ থেকে বেবিচকের নামে টাকা আদায় করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবসায়ীরা তাকে সদস্য পরি: পরি:’র রুমে লান্ঞিত করেন। এই কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসায়ীদের থেকে ভাড়া বাবদ লাখ লাখ টাকা আদায় করে বেবিচকের ভাড়া পরিশোধ না দেখিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আত্মসাত করেন বলে অভিযোগ। এই ব্যবসায়ীদের টাকায় বিমান টিকিটে সাধন কুমার মোহন্ত স্বপরিবারে আমেরিকা ভ্রমণ বিলাস করেন।
সাধন মোহন্ত আওয়ামী দোসরদের নামে কোটি কোটি টাকার লাউন্ঞ নবায়ন করে দেন। বেবিচক বোর্ড কর্তৃপক্ষ নবায়ন অনুমোদন দিয়েছে বলে তিনি জাহির করে বেড়ান। বদলিই কি তার শাস্তি। তার ব্যাপারে কোন তদন্ত কমিটি গঠিত হয়নি, তাকে সাসপেন্ড করা হয়নি। এ যেন গুরু পাপে লঘুদন্ড।
সাধন কুমার মোহন্ত ইতিপূর্বে ৪ বিমানবন্দর- যশোহর, সৈয়দপুর, কক্সবাজার এবং চট্রগাম বিমানবন্দরের ম্যানেজারগিরি করেছেন। এসব বিমানবন্দরে দায়িত্বকালিন সময়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। তার চাই চাই খাই খাই স্বভাব আছে বলে জানা যায়। এবার তিনি মেম্বার অপসের অধীনে শাহজালাল বিমানবন্দরের সম্পত্তি দেখভাল করতেন। তার ২ ছেলে বিদেশে পড়াশুনা করছে বলে জানা যায়।
এ দিকে মোহন্ত উইকেট পড়ে গেলেও তার দোসর মিজান-আলামিন এখনও সম্পত্তি শাখায় বহাল। এরা টেন্ডার দুর্ণীতিসহ নানা অপকর্মে জড়িত বলে জানা যায়। টেন্ডারে কে কাজ পেল কে পেল না তা এরা অগ্রিম জানিয়ে দেন, টেন্ডারে ঘষামাজা করণেও তারা সিদ্দহস্ত বলে জানা যায়। শাহজালাল বিমানবন্দর, এর আশপাশে কার্গো আমদানি, রপ্তানি ভিলেজে দোকানপাট বসার সুযোগ করে দিয়ে এরা রীতিমত চাদাবাজি করে থাকে বলে জানা যায়। এদের নেতৃত্বে ইজারায় বরাদ্দ্কৃত জায়গার পাশে আরো জায়গা দখল করার সুযোগ করে দিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকে বলে জানা যায়। যেমন বিমানবন্দর গোলচত্বর হোটেল ওয়ান্ডার ইন। ইজারাকৃত জায়গায় বাইরে আরো প্রায় ১ বিঘা জায়গা দখল করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের মেয়ের জামাই নায়ক মাহফুজ ও আওয়ামী দোসর শমী কায়সারের ফার্ম ধানসিড়ি-নকসিকাথার নামে শাহজালাল বিমানবন্দরে লাউন্ঞ বরাদ্ধ তা আবার এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আর্থিক সুবিধা নিয়ে নবায়ন করা হয়েছে ডিডি মোহন্তের নেতৃত্বে।
চট্রগাম শাহ আমানত বিমানবন্দর , কক্সবাজার, সৈয়দপুর , সিলেট, রাজশাহী বিমানবন্দরেও শমী-মাহফুজের প্রতিষ্ঠান নকসিকাথা এবং ধানসিড়ির নামে লাউন্ঞ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং নবায়ন করার প্রক্রিয়া চলছে। সাবেক সচিব মহিবুর রহমান এবং বেবিচকের একজন ততা¡বধায়ক প্রকৌশলী এ ব্যাপারে কলকাঠি নাড়েন।
এ দিকে আওয়ামী দোসর, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ, রাষ্ট্রপতির পিএস দিদারুল আলামের সাথে সম্পৃক্ত বেবিচকের সদস্য এসএম অর্থ লাবলুর রহমানের বদলি দাবিতে ৯ সেপ্টেম্বর সদর দপ্তরের সামনে বেবিচক কর্মচারিরা দিনভর মানববন্ধন- সমাবেশ করেছে। উক্ত সমাবেশ থেকে কর্মচারিরা এই আওয়ামী দোসরকে বেবিচক থেকে বদলি করার জন্য জোরালো দাবি জানান।
অন্য দিকে কর্মচারিরা পরিচালক নূরুল ইসলামের বদলি বাতিলের দাবিও জানান।
এর আগে মেম্বার অর্থ’র বদলির দাবিতে বেবিচক কর্মচারিরা প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি প্রদান করেন এবং বেবিচক সদর দপ্তরে ব্যানার টানিয়ে দেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে রিপোর্টও প্রকাশিত হয়। কিন্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার ( মেম্বার অর্থ) ব্যাচমেট হওয়ায় সদস্য অর্থকে বেবিচক থেকে বদলি করে মন্ত্রণালয়ে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে না বলে জানা যায়।
এ দিকে সদস্য অর্থ রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব দিদারুল আলম, (জননিরাপত্তা বিভাগ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, বংগভবন, ঢাকা)- এর সাথে সংশ্লিষ্ট বলে জানা যায়। বেবিচকে আসার আগে লাভলুর রহমান সেতু বিভাগ এবং আনসারে চাকরি করেছেন বলে জানা যায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে যেখানে আওয়ামী দোসরদের ওএসডি করা হচ্ছে সেখানে বেবিচকে কর্মরত আওয়ামী দোসর, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ সরকারের যুগ্ম সচিব পদ থেকে এসএম লাভলুর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত সচিব করা হয়েছে। তিনি এখনও বেবিচকে বহাল।