যেকোনো সময় গ্রেফতার ! মামলাজালে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর বিচারপতি খায়রুল হক

নিউজ ডেক্স : মামলার জালে জর্জরিত হয়ে পড়ছেন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেটি খারিজ হয়ে গেলে থানায় দায়ের করা হয়েছে আরেকটি মামলা। এ ছাড়া সরকারিভাবে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে লিগ্যাল নোটিশও দেয়া হয়েছে। থানায় দায়েরকৃত মামলায় যেকোনো সময় তিনি গ্রেফতারও হতে পারেন বলে জানা গেছে। আইনজীবীরা বলছেন, প্রধান বিচারপতি পদের কলঙ্ক এবিএম খায়রুল হক মানবতাবিরোধী এতো অপরাধ করেছেন যে, তার বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
গতকাল রোবার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে এসব মামলা দায়ের করা হয়। পাশাপাশি আইনজীবীরা তার বিচার দাবি করেন।
শেখ হাসিনার মাফিয়াতন্ত্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, আওয়ামী উচ্ছিষ্টভোগী সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বিচার করতে হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এ দাবি তুলেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নেতৃবৃন্দ। গতকাল সুপ্রিমকোর্ট এনেক্সভবনের সামনে সংবাদসম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। সংগঠনের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, গণতন্ত্র হত্যা করে দেশে স্বৈরশাসনের পথ তৈরি করে দেয়ার অপরাধে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করতে হবে। কারণ গণতন্ত্র হত্যার জন্য শেখ হাসিনা ও এবিএম খায়রুল হক সমানভাবে অপরাধী। তাদের দু’জনের বিচারই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করতে হবে। এটিই আইনজীবী সমাজের দাবি।
কায়সার কামাল বলেন, এই এবিএম খায়রুল হককে অনেকে সাবেক প্রধান বিচারপতিও বলতে চান না। ‘প্রধান বিচারপতি’ শব্দটাকে তিনি অপমান করেছেন। গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিলেন এই খায়রুল হক। বিচারপতি নামের কলঙ্ক এবিএম খায়ররুল হককে বিচারের মুখোমুখি করতেই হবে। যেন খায়রুল হকের মতো আর কুলাঙ্গার বিচারপতির জন্ম না হয়। এ সময় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজলসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জাতীয় আইন কমিশন থেকে পদত্যাগকৃত সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। গতকাল রোববার অ্যাডভোকেট ইমরুল হাসান বাদী হয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ বিথীর আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আর্জিতে এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়।
আর্জিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছিলো। এরপর থেকে নির্বাচনের সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে পরবর্তী সরকার গঠিত হয়। ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম.সলিম উল্লাহসহ কয়েকজনের রিট আবেদনে ২০০৪ সালে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ বলে ঘোষণা করে রায় দেন।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিট আন্দোলনকারী পক্ষই আপিল বিভাগে আপিল করেন। তবে এম সলিম উল্লাহ অসুস্থতার কারণে ইন্তেকাল করায় অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান নামের আরেক আইনজীবী রিট আবেদন এগিয়ে নিয়ে যান। ২০১০ সালের ১ মার্চ আপিল বিভাগে এর শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে আপিল আবেদনকারী এবং সরকারপক্ষ ছাড়াও অ্যামিকাস হিসেবে শীর্ষস্থানীয় ৮ জন আইনজীবী বক্তব্য দিয়েছিলেন। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। অনেকেই এরপক্ষে মত দেন। এমনকি তৎকালিন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এর পক্ষে মত দেন। তবে অ্যামিকাস কিউরিদের বক্তব্য বিচারপতি খায়রুল হক আমলে না নিয়ে তার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে- এজন্য তড়িঘড়ি করে আপিল বিভাগের ৭ জন সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের মতামতের ভিত্তিতে রায়ের জন্য নির্ধারণ হলে ৬ বিচারপতির তিন জনই অ্যামিকাস কিউরিদের পক্ষে একমত হন। কিন্তু অপর তিন বিচারপতি ভিন্ন মত তুলে ধরলে মামলার ফলাফল টাই হয়। ফলে প্রধান বিচারপতি হিসেবে এ বি এম খায়রুল হকের হাতে এ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ছিলো। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেন।
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্য আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিমি কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রেখেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনসহ জনমনে অসন্তুষ্টি দেখা দেয়ায় তিনি আর স্বাক্ষর করেননি । নথি নিজ জিম্মায় বাসায় নিয়ে যান। ২০১২ সালের ১৭ মে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। রায় প্রদানের ১৬ মাস ৩ দিন পর পরে ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্যে আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রেখেছিল। কিন্তু প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক অবসরে গিয়ে রায় ঘোষণার ১৬ মাস ৩ দিন পর যে রায় প্রকাশ করলেন সেখানে তিনি এ অংশটি রাখেননি।
মামলায় বলা হয়, অসাধুভাবে প্রধান বিচারপতির পদ ব্যবহার করে প্রতারণামূলকভাবে বিশ্বাসভঙ্গ ও জালিয়াতির মাধ্যমে এ রায় প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, এ বি এম খায়রুল হক তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান কর্তৃক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আর্জিকারীর জবানবন্দী গ্রহণ শেষে ম্যাজিস্ট্রে আদালত পরে মামলার আদেশ দেবেন বলে জানান। দুপুরের পর তিনি মামলাটি খারিজ করে দেন।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, দেশের বর্তমান দুরবস্থার জন্য দু’টি ব্যক্তিই দায়ী। একজন শেখ হাসিনা, আরেক জন এবিএম খায়রুল হক। খায়রুল হক এক রায় দিয়ে বিচার বিভাগসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছেন। তাই আজকের ছাত্রদের যে রক্তপাত, যে গণহত্যা শেখ হাসিনা চালিয়েছেন এ জন্য শেখ হাসিনার পাশাপাশি এবিএম খায়রুল হকেরও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার হওয়া জরুরি। খায়রুল হকের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবিএ খায়রুল হকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আছে। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা কেন দায়ের করা হবে ? আইনজীবীদের উচিৎ ভেবে চিন্তে এ ধরণের মামলাগুলো দায়ের করা।
এদিকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা খারিজ হওয়ার পর গতকাল সন্ধ্যায় এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা বাতিল করে বেআইনি রায় প্রদান ও জাল রায় তৈরির জন্য দন্ডবিধির ২১৯ ও ৪৬৬ ধারায় অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বিচারপতি খায়রুল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় প্রভাবিত হয়ে এবং তার অবসর পরবর্তী ভালো পদায়নের জন্য লোভের বশবর্তী হয়ে দুর্নীতিমূলকভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুশি করার অভিপ্রায়ে ২০১১ সালের ১০ মে সংক্ষিপ্ত আদেশটি পরিবর্তন করে বেআইনিভাবে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর উক্ত আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন।
এ ছাড়া গতকাল বিকেলে এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়েছে। ‘ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড)’র চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ এ নোটিশ দেন। অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের আইন উপদেষ্টা ও আইনসচিবকে নোটিশের ‘প্রাপক’ করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর হঠাৎ পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি বিচার বিভাগের সামনে আনা হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান অপ্রাসঙ্গিক ও অসাংবিধানিক কথা বলেন। তার অবসরের ১৬ মাস পর রায় প্রকাশ হয়। এই রায় বাংলাদেশে কুৎসিত সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে।
খায়রুল হক দেশের সব অস্থিরতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার স্থপতি দাবি করে নোটিশে আরও বলা হয়, তিনি শুধু সংবিধানের বিধানই লঙ্ঘন করেননি, বরং সব ঘৃণার বিষবৃক্ষ, দুর্নীতি ও বর্বরতার বীজ রোপণ করেন। সব প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের মনোবল হ্রাস, বিচার বিভাগকে দুর্নীতিগ্রস্ত ও পক্ষপাতদুষ্টে পরিণত করেন।
এসব অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে খায়রুল হকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
যে কারণে খায়রুল হককে মনে রাখবে মানুষ : এ বি এম খায়রুল হক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাকে ৩ বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ওই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে পুনর্নিয়োগ দেয়া হয়।
‘সামাজিক খাদ্য নিরাপত্তাবলয়’ অংশ হিসেবে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারের একটি ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচি রয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ের দারিদ্রপীড়িত মানুষকে সহযোগিতা করাই মূল লক্ষ্য। কিন্তু অনুরূপ একটি সহযোগিতা গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। অবশ্য এ সহযোগিতাটি তিনি পেয়েছিলেন বিশেষ কিছু ‘কাজ’র বিনিময়ে। কিন্তু কি সেই ‘কাজ’ ?
২০০৯ সালের ২১ জুন শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ হিসেবে রায় দেন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। রায়ে বলা হয়, জিয়া নয়, শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক। এমন অনেক রাজনৈতিক বিষয়কে তিনি সানন্দে আদালতের ঘাড়ে টেনে নেন। যার প্রায়সবগুলোর সুবিধাভোগী ছিলো তৎকালিন আওয়ামীলীগ সরকার। যার পুরস্কারস্বরূপ তাকে বেশ কয়েকজন সিনিয়র বিচারপতিকে ডিঙিয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি করা হয়। আপিল বিভাগেও তিনি বিভিন্ন রায় প্রদান করে আলোচিত ও বিতর্কিত হন।
পুরনো ঢাকার ওয়াইজঘাটে মুন সিনেমা হলের মালিকানার দাবি নিয়ে দায়ের করা একটি মামলাকে কেন্দ্র করে তিনি সংবিধানের ‘পঞ্চম সংশোধনী বিল’ বাতিল করে রায় দেন। সামরিক ফরমানের মাধ্যমে সংশোধিত সংবিধানকে তিনি অবৈধ ঘোষণা করেন। আবার পঞ্চম সংশোধনীর নিজের পছন্দমত কিছু ধারাকে বৈধতাও দেন।
আপিল বিভাগেও তিনি অনেক রায় দিয়েছেন। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি নিয়ে দায়ের করা লিভ টু আপিল না শুনেই তিনি উত্থাপিত হয়নি-মর্মে খারিজ করে দেন। প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর তিনিই প্রথম সুপ্রিমকোর্টে প্রধান বিচারপতির দফতরে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি স্থাপন করেন। এর আগে সুপ্রিমকোর্টে প্রধান বিচারপতির দফতরে কখনও কোনো রাজনৈতিক নেতার ছবি টাঙানো হয়নি। সর্বশেষ প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিদায়ের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তার রায়ের পর দেশে আবার রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
আওয়ামীলীগ সরকারের মনোরঞ্জনে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক সব সময়ই ছিলেন নিবেদিত। বিপরীতে শেখ হাসিনা যত রকম সুবিধা দেয়া যায়-সব ধরণের সুবিধাই এই বিচারপতিকে দিয়েছেন। যার নিকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত হলো, চিকিৎসার কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে একাধিকবার অর্থ গ্রহণ। প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছিলেন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। তৎকালিন একজন তরুণ আইনজীবী ওই টাকার চেক খায়রুল হকের দফতরে পৌঁছে দেন। চেকটি পাওয়ার পর তিনি নিজের অ্যাকাউন্টে জমা দেয়ার জন্য দিলে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের চেকের মাধ্যমে টাকা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা দিলে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে। ২০০৯ সালের ২৭ জুলাই সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিমকোর্ট শাখায় বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে এ টাকা জমা হয়। তখন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার দিনেই তিনি ৯ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। সোনালি ব্যাংকে তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের হিসাবে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ২৭ জুলাই অ্যাকাউন্ট পে চেকের ১০ লাখ ৩৭ হাজার ২৫০ টাকা ট্রান্সফারের মাধ্যমে জমা হয়েছে। পর দিন্ ২৮ জুলাই নগদ ২০ হাজার টাকা নগদ উত্তোলন করা হয়। একই দিন অপর একটি অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে ৩৮ হাজার ৬০০ টাকা তার হিসাব থেকে ‘ ডেবিট’ হয়।
এবিএম খায়রুল হক নামের এই ব্যক্তি ছিলেন মূলত: বিচারপতির আবরণে আওয়ামীলীগের বিচারিক সেবাদাস। আ’লীগ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে আদালত থেকে যখন যে রায় এবং নির্দেশনা চেয়েছে- সেটাই পেয়েছে। আর এসব কারণেই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত এবিএম খায়রুল হক নামের এই বিচারপতিকে মানুষ যুগ যুগ মনে রাখবে।ইণকিলাব