সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে ধুম্রজাল, নেট দুনিয়ায় তোলপাড় : জনতার চোখকে প্রেসিডেন্টের ‘না’ , আইন উপদেষ্টার প্রতিবাদ : গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রেসিডেন্টের সে দিনের সেই বক্তব্য

একুশে বার্তা রিপোর্ট : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে ধুম্রজাল শুরু হয়েছে, নেট দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে। মানব জমিনের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘জনতার চোখকে’ শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র নেই বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এ নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। কোন কোন গণমাধ্যমে সেদিনের প্রেসিডেন্টের সেই ভাষণ প্রচার করেছে। ‘একুশে বার্তার’ পাঠকদের জন্য এখানে মানব জমিনের জনতার চোখে প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধূরীকে দেয়া প্রেসিডেন্টের সাক্ষাতকার , আইন উপদেষ্টার প্রতিবাদ এবং গত ৫ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাবার পর ৩ বাহিনী প্রধানকে সামনে রেখে প্রেসিডেন্টের বিটিভিসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত ও প্রকাশিত সে দিনের সেই বক্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো : এ দিকে ছাত্র নেতারা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করেছেন। ড. ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের আহবান জানিয়েছেন তারা। ছাত্রনেতারা হলেন: কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম এবং গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান।

উনি তো কিছুই বলে গেলেন না

মতিউর রহমান চৌধুরী , নেপথ্যের গল্প : ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন কি করেন নি এই নিয়ে বিতর্ক এখনো জারি রয়েছে। হয়তো অনেক দিন থাকবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় একাধিকবার দাবি করেছেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান মিডিয়ার সামনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর জানিয়েছিলেন।
প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রী যদি পদত্যাগ করে থাকেন তাহলে সেটা গেল কোথায়? কারও কাছে এই প্রশ্নের জবাব নেই। তিন সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছি। খোঁজ নিয়েছি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও। যেখানটায় প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র থাকার কথা। কোথাও নেই। শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের মুখোমুখি হলাম। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তিনি আমাকে অভ্যর্থনা জানালেন।
শেখ হাসিনার জমানায় বঙ্গভবন ছিল আমার জন্য নিষিদ্ধ। স্যার, আপনি কেমন আছেন? ভাই, আপনি আমাকে স্যার বলবেন না। আমরা তো দু’জনই একসঙ্গে সাংবাদিকতায় এসেছিলাম। আমি পাবনায় আর আপনি ঢাকায়। বাংলার বাণীতে দু’জনই কাজ করেছি। পুরনো স্মৃতি স্মরণ করে আবেগ জায়গা করে নিলো অনেকক্ষণ। স্বাভাবিক হতেই প্রশ্ন করলাম আপনার কাছে কি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্রটা আছে? আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি। ৫ই আগস্ট সকাল সাড়ে দশটায় বঙ্গভবনে ফোন এলো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে। বলা হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে আসবেন মহামান্য প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। এটা শুনেই প্রস্তুতি শুরু হলো বঙ্গভবনে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফোন এলো তিনি আসছেন না।
প্রেসিডেন্ট বললেন, চারদিকে অস্থিরতার খবর। কী হতে যাচ্ছে জানি না। আমি তো গুজবের ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারি না। তাই সামরিক সচিব জেনারেল আদিলকে বললাম খোঁজ নিতে। তার কাছেও কোনো খবর নেই। আমরা অপেক্ষা করছি। টেলিভিশনের স্ক্রলও দেখছি। কোথাও কোনো খবর নেই। এক পর্যায়ে শুনলাম, তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আমাকে কিছুই বলে গেলেন না। যা সত্য তাই আপনাকে বললাম। যাই হোক, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার যখন বঙ্গভবনে এলেন তখন জানার চেষ্টা করেছি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন কি না? একই জবাব। শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। মনে হয় সে সময় পাননি জানানোর। সব কিছু যখন নিয়ন্ত্রণে এলো তখন একদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এলেন পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহ করতে। তাকে বললাম, আমিও খুঁজছি। এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট বললেন, এ নিয়ে আর বিতর্কের কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন এটাই সত্য। তারপরও কখনো যাতে এ প্রশ্ন না উঠে সে জন্য সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়েছি।
প্রেসিডেন্টের পাঠানো রেফারেন্সের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ৮ই আগস্ট এ সম্পর্কে তাদের মতামত দেন। এতে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক শূন্যতা দূর করতে এবং নির্বাহী কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলীকে শপথবাক্য পাঠ করাতে পারবেন বলে আপিল বিভাগ মতামত দেন। এর আগে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অবস্থান করছেন। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ভারত সরকার তাকে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছে। তা দিয়ে তিনি অন্য কোনো দেশে যেতে পারবেন। যদিও তার রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। বলা হচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত তাকে নিরাপত্তাজনিত কারণে আশ্রয় দিতে রাজি হচ্ছে না। কাতার ও সৌদি আরব আগেই অপারগতা জানিয়েছে। শুরুতে বেলারুশের কথা বলা হয়েছিল। কি কারণে সেটা হয়নি তা এখনো অজানা।

হাসিনাকে যে কথা বলতে দেয়া হয়নি পালিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে রেডিও-টেলিভিশনে ভাষণ দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছিলেন- দীর্ঘ নয়, অল্প সময় কথা বলবেন তিনি। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি এবং সেনাপ্রধানের অনাগ্রহে সে সুযোগ পাননি শেখ হাসিনা। তখন তাকে বলা হয়, চারদিকে লোকজন জড়ো হয়ে গেছে। সবাই মারমুখো। অল্প সময়ের মধ্যেই তারা গণভবনে পৌঁছে যেতে পারে। তার নিরাপত্তার কথা ভেবেই তাকে সে সুযোগ দেয়া যাবে না। হাসিনা বিরক্ত, ক্ষুব্ধ। কিন্তু কিছুই করার ছিল না। বক্তৃতার একটি খসড়া তৈরি করেছিলেন তিনি। নানা সূত্রে জানা যায়, এতে তিনি বলতে চেয়েছিলেন- তার ইচ্ছায় নয়, বলপূর্বক তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। কারা এবং কোন বিদেশি শক্তি তার সরকারকে উৎখাত করতে চেয়েছে এটাও তিনি দেশবাসীকে জানাতে চেয়েছিলেন। তাঁর শাসনকালে দেশের কি কি উন্নয়ন হয়েছে তারও বয়ান ছিল। সকাল থেকে দুপুর, এ সময় নানাভাবে দরকষাকষিও চলছিল। বারবার ফোন আসছিল নয়াদিল্লি থেকে। বলা হচ্ছিল, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ঢাকার তরফে দিল্লিকে বলা হয়েছিল- তারা যেন বিমান পাঠিয়ে হাসিনাকে নিয়ে যান। সে অনুরোধে সাড়া দেয়নি দিল্লি। এরপর বাংলাদেশের স্ব-উদ্যোগে বিমান বাহিনীর একটি সি-১৩০ বিমানে তাকে দিল্লি পাঠানো হয়। হাসিনাকে বহনকারী বিমানে আরও দু’জন ছিলেন। তার ছোটবোন শেখ রেহানা ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক।

শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছি: আগস্ট বলেছিলেন রাষ্ট্রপতি

গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারত যাওয়ার পর ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সেই ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা জানেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।’বিটিভিসহ দেশের ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমগুলোতে সেই ভাষণ সম্প্রচার হয়, যা এখনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।যদিও সম্প্রতি মানবজমিনের প্রকাশনা জনতার চোখের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে ‘নেপথ্যের গল্প’তে প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী জানান, রাষ্ট্রপতি তাকে জানিয়েছেন, তিনি শুনেছেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই।

রাষ্ট্রপতির বরাতে এমন বক্তব্য প্রকাশের পর তা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন।আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন— তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি। এটা মিথ্যাচার। এটা তার শপথ লঙ্ঘনের শামিল।’ তিনি বলেন, ‘উনি নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী উনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।’

গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) জনতার চোখ ডট কমে ‘উনি তো কিছুই বলে গেলেন না…’ শিরোনামে প্রকাশিত ‘নেপথ্যের গল্প’তে মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী লেখেন, ‘প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রী যদি পদত্যাগ করে থাকেন তাহলে সেটা গেল কোথায়? কারও কাছে এই প্রশ্নের জবাব নেই। তিন সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছি। খোঁজ নিয়েছি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও। যেখানটায় প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র থাকার কথা। কোথাও নেই। শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের মুখোমুখি হলাম। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তিনি আমাকে অভ্যর্থনা জানালেন।’মতিউর রহমান চৌধুরী আরও লেখেন, ‘শেখ হাসিনার জমানায় বঙ্গভবন ছিল আমার জন্য নিষিদ্ধ। স্যার, আপনি কেমন আছেন? ভাই, আপনি আমাকে স্যার বলবেন না। আমরা তো দু’জনই একসঙ্গে সাংবাদিকতায় এসেছিলাম। আমি পাবনায় আর আপনি ঢাকায়। বাংলার বাণীতে দু’জনই কাজ করেছি।

পুরনো স্মৃতি স্মরণ করে আবেগ জায়গা করে নিলো অনেকক্ষণ। স্বাভাবিক হতেই প্রশ্ন করলাম আপনার কাছে কি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্রটা আছে? আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি। ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গভবনে ফোন এলো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে। বলা হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে আসবেন মহামান্য প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। এটা শুনেই প্রস্তুতি শুরু হলো বঙ্গভবনে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফোন এলো তিনি আসছেন না।’

অথচ, গত ৫ আগস্টে জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আপনারা জানেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আজ বঙ্গভবনে তিন বাহিনীর প্রধান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের  কয়েকজন সমন্বয়কের সাথে আলোচনা হয়। শুরুতেই সেনাপ্রধান বিরাজমান সার্বিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তার আলোচনা সম্পর্কে আমাকে অবিহিত করেন। রাজনৈতিক নেতারাও এ সময় তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ ছাড়া জরুরি ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’

ভাষণে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘সকল দল ও অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে গঠিত অর্ন্তবন্তীকালীন সরকার যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় আটকসহ সকল বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের পরিবারদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও আহতদের সুচিকিৎসার প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, সর্বসম্মতিক্রমে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এবং লুটতরাজ ও ধ্বংসত্মক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ প্রদান করছি।’রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি  ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের অর্থনীতি প্রশাসন ও শিল্প কলকারাখানা চালু রাখার লক্ষ্যে সকলকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই। ছাত্রনেতাদের ও শিক্ষকদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে অতিশ্রীঘ্রই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হবে। এ ছাড়া যারা হত্যা ও সহিংসতার সাথে জড়ির নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী অনতিবিলম্বে বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করা হবে। দেশের সকল অফিস আদালত আগামীকাল থেকে স্বাভাবিকভাবেই চলবে।আসুন আমরা দেশকে বাঁচাতে একযোগে কাজ করি। পারস্পারিক হিংসা বিদ্বেষ ভুলে ও প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে উঠে দেশকে এগিয়ে নিতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার জন্য আমি বিনয়ের সাথে আপনাদের প্রতি অনুরোধ করছি।’একটি সুন্দর ও সোনালি ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় আমরা এগিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

আইন উপদেষ্টা : হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করেছেন।সোমবার (২১ অক্টোবর) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার অফিস কক্ষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, তার এই পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উনি যদি তার বক্তব্যে অটল থাকেন তাহলে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে যাবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।