সিএএবি চেয়ারম্যানের দিক নির্দেশনা : এগিয়ে চলছে শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প কাজ

নিউজ ডেক্স : করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেশে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোতে তৈরি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। তবু স্বাস্থ্যবিধি মেনে মহামারীর মধ্যেও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে ১০৯ জন কর্মীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। নিয়মিত স্ক্রিনিং, টেস্ট এবং আবাসনের ব্যবস্থা করে প্রকল্প কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বাংলাদেশ গণমাধ্যমকে  জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেশে ছড়িয়ে পড়লে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রকল্প কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। এ পর্যন্ত ১০৯ জন কর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এখন প্রতিদিন ১০০ জন কর্মীর কভিড-১৯ টেস্ট করানো হচ্ছে। পজিটিভ এলে তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়। আক্রান্ত কর্মীদের মধ্যে এখনো সে রকম অসুস্থতা দেখা দেয়নি। প্রয়োজনে হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ২১ দিন পর পুনরায় টেস্ট করে নেগেটিভ এলে তাদের কাজে যোগদান করানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কাজ চালু রাখতে প্রকল্পের পাশেই ৪০০ জনের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাইরে গেলে শ্রমিকরা করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন। এজন্য এখানেই তাদের সার্বিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিকুঞ্জ খালের পাশে প্রকল্পের জায়গায় আরও ৪০০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া কাওলা এলাকায় আরও ৪ হাজার কর্মীর থাকার জন্য আরেকটি আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রকল্প কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হলেও প্রকল্পের কাজ এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাটি কাটার কাজ শেষ হয়েছে। বর্ষার পানিতে মাটি বসিয়ে সমান করা হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে পাইলিংয়ের কাজ। দূরত্ব বজায় রেখে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। চারদিকে মেশিনের শব্দ কর্মযজ্ঞের বার্তা দিচ্ছে। কর্মরত শ্রমিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসে আমাদের অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তাদের সেরকম কোনো অসুস্থতা দেখা দেয়নি। আমরা দূরত্ব রেখে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ২৮ ডিসেম্বর শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২ লাখ ২৬ হাজার বর্গমিটার জমির ওপর নির্মিত হবে এই থার্ড টার্মিনাল। কারিগরি মূল্যায়ন, আর্থিক মূল্যায়ন শেষে প্রকল্পের কাজ পেয়েছে মিৎসুবিশি, ফুজিতা ও স্যামসাং কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি)। এই প্রকল্পে ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। প্রথম সংশোধনীর পর প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। মোট খরচের মধ্যে সরকার দেবে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার এবং ঋণ হিসেবে জাপানের সংস্থা জাইকা দেবে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।থার্ড টার্মিনালের রানওয়ে হিসেবে ব্যবহার করা হবে মূল টার্মিনালের বর্তমান রানওয়ে; যা পরে সম্প্রসারণ করার প্রস্তাব রয়েছে। থার্ড টার্মিনালের নকশায় রাখা হয়েছে ২৪টি বোর্ডিং ব্রিজ। এর মধ্যে ১২টি প্রথম ধাপে নির্মাণ সম্পন্ন করা হবে। বাকিগুলো পরে প্রয়োজন অনুযায়ী নির্মাণ করা হবে। বোর্ডিং ব্রিজের সঙ্গে থাকবে ১৩টি চেক ইন বেল্ট। পর্যাপ্ত সংখ্যক এক্সেলেটর, সাবস্টেশন ও লিফট সংযুক্ত রাখা হবে। থাকবে রাডার, কন্ট্রোল টাওয়ার, অপারেশন ভবন, বহুতল কারপার্ক। তিন তলাবিশিষ্ট এ টার্মিনাল ভবনটির স্থাপত্যরীতিতে আনা হয়েছে অনন্য নান্দনিকতা। টার্মিনাল ভবনের বহির্বিভাগে থাকবে চোখ ধাঁধানো নকশা।সূত্র :  বাংলাদেশ প্রতিদিন