স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট ওসমানি বিমানবন্দরে স্বৈরাচরের দোসর আপন দুই সহোদর মন্ত্রীর শেল্টারে এক দায়িত্বে- বিমানবন্দরের ম্যানেজার/ পরিচালক হিসেবে ১৬ বছর পার করেছেন হাফিজ আহমেদ। বর্তমানে রাজনৈতিক খোলস পাল্টে বিএনপি নেতা, সিলেট সিটির সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরির শেল্টারে এবং পরিচালকের রুটিন দায়িত্ব থেকে পরিচালক হবার স্বপ্ন দেখছেন। অদ্য ২৫ আগস্টের অনুষ্ঠেয় ডিপিসিতে তাকে পরিচালক পদে পদোন্নতি দেবার ষোলকলা পূর্ন হবে বলে জানা যায়।
স্বৈরাচারের পতনের পর গত ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে লন্ডনে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন এই পরিচালক হাফিজ আহমেদ- যা তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে।
জানা যায়, প্রথমে ১ মাসের দায়িত্ব দিয়ে হাফিজ আহমেদকে ঢাকা থেকে সিলেট ওসমানি বিমানবন্দরের ম্যানেজার/ পরিচালক করে পাঠানো হয়। সেই থেকে একচেটিয়া ১৬ বছর রাজত্ব করছেন। এই ১৬ বছরে সিলেট বিমানবন্দরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে হাফিজ আহমেদ চুনোপুটি থেকে আংগুল ফুলে কলাগাছ, শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। রাজধানি ঢাকায় একাধিক ফ্লাট এবং নিউই্য়র্কে নামে-বেনামে বাড়ি করেছেন, তিনি আবার আমেরিকার গ্রীনকার্ডধারি।
নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে এই হাফিজ আহমেদ জড়িত বলে অভিযোগ ওঠেছে। কর্মচারিদের সাথে খারাপ আচরণ ,মারধর, মদ্যপ অবস্থায় গভীর রাতে কর্তব্যরত আনসার বাহিনীর সদস্য হেলালকে মারধর পর্যন্ত করেছেন। তার বিচার দাবি করে আনসার বাহিনীর সদস্যরা বিদ্রোহ করার চেষ্টা করে, এ নিয়ে তদন্ত হয়, পরে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। সাবেক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমানের আমলের এ ঘটনা।
পরিচালক হাফিজ সিলেট বিমানবন্দরে তার নিজস্ব লোকজন নিয়ে একটি সিন্ডিকেড গড়ে তুলেছেন। এই সিন্ডিকেড সদস্যরা হলো: জসিম ,শাহেদ, তরিকুল,অরুন। কার পার্কিংয়ে অনিয়মের প্রতিবাদ করলে তার সিন্ডিকেড সদস্যরা যোগাযোগ শাখার কর্মচারি রাজু মিয়াকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এ ব্যাপারে মামলাও হয়। এই রাজু মিয়া সিএটিসির সাবেক পরিচালক আব্দুল মান্নানের আপন ভাগিনা বলে জানা যায়।
এই মুকুটহীন সম্রাট হাফিজ আহমেদ এতোটাই অত্যাচারি যে, যোগাযোগ শাখার প্রযুক্তি সহকারি আজিজার রহমানকে কাজে চাপ প্রয়োগ করার কারণে মৃত্যুবরণ করেন। পরে বিষয়টি মীমাংসা করে ফেলেন এই সুচতুর হাফিজ আহমেদ।
জানা যায়, চিরকুমার এই হাফিজ আহমেদের বাড়ি সিলেট মৌলভীবাজার জেলায়। বৃহত্তর সিলেটের লোক হয়েও তিনি দীর্ঘদিন যাবত সরকারি নিয়ম ভংগ করে সিলেটেই চাকরি করছেন। আর এক পোস্টিংয়ে ৩ বছর চাকরি করার সরকারি নিয়ম থাকলেও তিনি এক পোস্টিংয়ে ১৬ বছর যাবত দিব্যি চাকরি করছেন। বেবিচক কর্তৃপক্ষ তাকে আগলে রেখেছে, পরিচালক মানব সম্পদ তার পিয়ারের লোক বলে জানা যায়। বদলি ঠেকাতে পরিচালক মানব সম্পদ তাকে শেল্টার দিয়ে থাকেন বলেও শোনা যায়। এ জন্য মাসে মাসে তাকে হেড অফিসে নজরানা পাঠাতে হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
সিলেট বিমানবন্দরে গত ১৬ বছরে নানা অনিয়মের সাথে হাফিজ আহমেদ নিজেকে সম্পৃক্ত করে ফেলেছেন। ঠিকাদারি কাজের প্রত্যয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম, কাজ না করে বিল উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারা, পরিবহন পুলে কেনাকাটা, গাড়ি মেরামতে ভুয়া বিল ভাউচার করে অর্থ আত্মসাত, জ¦ালানি তেল চুরি, সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, বাসাবাড়ি,দোকানপাট বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম, বিঙাপনের জন্য নিয়ন সাইনে দুর্নীতি- ইত্যাকার বহু অনিয়ম-দুর্নীতির রাজা এই মুকুটহীন সম্রাট হাফিজ আহমেদ।নিয়ন সাইন অনিয়মের বিষয়টি সম্পত্তি শাখার উপপরিচালক ইসরাত জাহান পান্না ধরে ফেলেছেন। এ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে।
ক্ষমতার পালা বদলের পর বিভিন্ন সেক্টর থেকে আওয়ামী দোসরদের বদলি করা হলেও সিলেট বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমেদ এখনও বহাল। উল্টো তাকে বিমানবন্দরের রুটিন পরিচালক থেকে পরিচালক করার পায়তারা করা হচ্ছে বলে জানা যায়।
দীর্ঘদিন সিলেট বিমানবন্দরে পরিচালকের দায়িত্বে থাকায় এই হাফিজ আহমেদ কর্তৃক যারা বাইরের জেলার কর্মচারি সিলেট বিমানবন্দরে কর্মরত তাদেরকে হয়রানি- অত্যাচার, মানসিক নির্যাতন করছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। তার অত্যাচারে কর্মচারি আজিজার রহমান মারা গেছেন, রাজু মিয়া রক্তাক্ত জখম হয়েছে, আনসার বাহিনীর সদস্য হেলাল মার খেয়েছেন। কিন্ত তিনি সিলেটে রামরাজত্ব করে যাচ্ছেন, তাকে সিলেট বিমানবন্দর থেকে বদলি করে এমন সাধ্য কার?
সিলেট বিমানবন্দরে নানা অনিয়মের সাথে জড়িত এই পরিচালক হাফিজ আহমেদ। বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজে ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের সাথে যোগসাজসে নি¤œমানের মালামাল ব্যবহার এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প তৈরি করে ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের সাথে যোগসাজসে সরকারের কোটি কোটি টাকার অপচয় করছেন, নিজে লাভবান হচ্ছেন, ঠিকাদার ও প্রকৌশলীরাও ভাগ পাচ্ছেন। কথিত আছে এই পরিচালক নানা অনিয়ম-দূর্নীতি করে আজ শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ঢাকায় একাধিক ফ্লাট, নিউইয়র্কে নামে-বেনামে বাড়ি গড়ে তুলেছেন। তিনি আমেরিকার গ্রীন কার্ডধারি। প্রশ্ন ওঠেছে, তিনি আমেরিকার গ্রীন কার্ডধারি হয়ে বাংলাদেশে কিভাবে চাকরি করছেন।
জানা যায়, জ¦ালানি তেল চুরি করে অবৈধ অর্থ উপার্জন করা হয়। বিমানবন্দরে ব্যবহ্যত গাড়ি–গুলো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, গাড়ি মেরামত না করে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে অর্থ আত্মসাত , বিমানবন্দরের সম্প্রসারন প্রকল্পে দায়িত্ব না থাকা সত্বেও প্রকল্পের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, উন্নয়নমুলক প্রকল্পের বিভিন্ন কাজে কাজ অসম্পুনর্ থাকার পরও প্রত্যয়ন দিয়ে ‘পারসেনটেন্স’ গ্রহণ, প্রভাব খাটিয়ে আউট সোর্সিং কোম্পানির পরিচ্ছন কর্মীদের নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার তার রুটি কাজ হয়ে দাড়িয়েছে।
সিলেটে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথেও নাকি এই হাফিজ আহমেদ খারাপ আচরণ করে থাকেন। এ নিয়ে লোকালসহ জাতীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলেও হাফিজ আহমেদের টিকিটিও কেউ স্পর্শ করতে পারে না , চিরকুমার এই পরিচালক বিমানবন্দরের পাশেই পুরাতন রেস্ট হাউজে ব্যাচেলার থাকেন। এখানেই গভীর রাতে মদ্যপ অবস্থায় আনসার সদস্য হেলালকে মারধর করা হয়। সরকারি চাকরিতে এক জায়গায় ৩ বছরের অধিক থাকার নিয়ম না থাকলেও হাফিজ আহমদের বেলায় যেন অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে।
এই হাফিজ আহমেদ ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সহকারি এ্যারোডাম অফিসার হিসেবে বেবিচকে যোগদান করেন। ১৬ বছরে পরিচালকগিরি করার সময়ে নান অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে, একাধিক গোয়েন্দা রিপোর্ট হয়েছে, কিন্ত কোনটাই আমলে নেয়া হয়নি। বহু তদন্ত কমিটি গঠন কিন্ত বার বার পার পেয়ে যায়। মুকুটহীন সম্রাট আতংকের নাম অনেকবার অনেক গোয়েন্দা রিপোর্ট থাকার পরও হাফিজ আহমেদ বহাল।ক্ষমতার পালা বদলে সব জায়গা থেকে আওয়ামী দোসর দায়িত্বশীলদের অপসারন করা হলেও সিলেট বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ বহাল থাকায় সিলেটবাসি চরম ক্ষুব্ধ।