শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
‘সেই ‘মরু গোলাপ’ এখন ক্যান্সারে আক্রান্ত’

ডেক্স রিপোর্ট : ক্যান্সারে আক্রান্ত সিরিয়ার ‘ফার্স্টলেডি’ আসমা আল-আসাদ। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের দপ্তর জানিয়েছে, আসমা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মারাত্মক ধরনের টিউমারের প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
লন্ডনে জন্ম নেয়া সিরীয় ফার্স্টলেডিকে বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে মনে করা হয়। ২০১২ সালে বিরোধীদের বিক্ষোভে সরকারের সহিংসতার জন্য সিরিয়ার যে ১২ জনের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, আসমা তাদের মধ্যে একজন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয় স্যোশ্যাল মিডিয়া ট্যুইটারে একটি ছবি পোস্ট করেছে। ছবিতে দেখা যায়, আসমা ও আসাদ পাশাপাশি দু’টি চেয়ারে বসে আছেন। আসমার শরীরে স্যালাইন লাগানো রয়েছে। ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, ‘আসমার স্তনে মারাত্মক টিউমার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা হয়েছে এবং প্রাথমিক ধাপের চিকিৎসা শুরু হয়েছে।’
আসমা আল-আসাদ। কারো চোখে তিনি ‘মরুর গোলাপ’। কারো চোখে সংস্কারবাদী। সমাজসেবক। জনদরদী। তাকে সচরাচর জনসমক্ষে দেখা যায় না। গুজব ছড়িয়ে পড়ে মাঝে মাঝেই। বলা হয়, তিনি রাজধানী ছেড়ে পালিয়েছেন। কিন্তু সেই সমালোচনার জবাবে তিনি কয়েকটি অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন। ঘোষণা করেছেন, আগামী দিনগুলোতে তিনি সিরিয়াতেই থাকবেন, স্বামীর সঙ্গে।
২০০০ সালের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের সঙ্গে যখন তার বিয়ে হয়, তখন অভিজাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে এমবিএ পড়তে যাওয়ার কথা ছিল তার। বিয়ের পর তিনি ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে দেন। রয়ে যান সিরিয়ায়। সেখানেই জন্ম হয় তার তিন সন্তানের। দেশের ফার্স্টলেডি হিসেবে তিনি সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এরই মধ্যে আরব বসন্তের ধারায় সিরিয়ায় শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনেক কর্তার বিরুদ্ধে জারি হয় অর্থনৈতিক অবরোধ। তাদের অবৈধ ঘোষণা করা হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে। তবে যেহেতু তিনি জন্মসূত্রে ব্রিটেনের নাগরিক, তাই আসমার জন্য ব্রিটেন উন্মুক্ত রাখা হয়।
২০০০ সালে এক ছুটির দিনে তিনি এক নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে বেড়াতে যান সিরিয়ায়। তখন সেখানেই পরিচয় হয় পারিবারিক বন্ধু বাশার আল-আসাদের সঙ্গে। ২০০০ সালের জুনে মারা যান বাশার আল-আসাদের পিতা, তখনকার প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদ। ফলে পিতার কাছ থেকে ক্ষমতা চলে আসে বাশার আল-আসাদের হাতে। ২০০০ সালের নভেম্বরে আবার সিরিয়া ফিরে যান আসমা। ওই বছরেই ডিসেম্বরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বাশার আল-আসাদের সঙ্গে বিয়ের পর আসমা আখরাস হয়ে যান আসমা আল-আসাদ। তার আগে তিনি বেড়ে ওঠেন লন্ডনের অ্যাকটনে। সেখানে একাধারে ইংরেজি, আরবি, ফরাসি ও স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলার দক্ষতা আছে তার।
বিয়ের পর আসমা সিরিয়ার ১০০টি গ্রাম ঘোরেন। এই সময় তিনি সিরিয়ার মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। তাদের কষ্টের কথা শোনেন। এ জন্য সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁকে আখ্যায়িত করা হয় ‘বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী আরব’ হিসেবে। তিনি নারীদের অধিকার ও শিক্ষার পক্ষে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। আধুনিক ও অগ্রবর্তী সংস্কারমূলক কাজে সহায়তার জন্য সিরিয়াকে ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার সহায়তা দেয় জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচি। তবে সিরিয়ায় সবচেয়ে বড় আঘাতটি আসে আরব বসন্ত থেকে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি, আসমা আল-আসাদের ভাবমূর্তি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। ২০১২ সালের শুরুর দিকে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করে। কিন্তু তখন একেবারে নীরব ছিলেন ফার্স্টলেডি আসমা। এ জন্য তাকে অনেক সমালোচনা হজম করতে হয়েছে। তবে সিরিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রায় এক বছর পরে তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সামনে একটি বিবৃতি দেন। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি টাইমস পত্রিকার কাছে একটি ই-মেল পাঠান। তাতে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট আসাদ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট। তিনি কোনো খণ্ডিত অংশের প্রেসিডেন্ট নন। তার ভূমিকায় সমর্থন রয়েছে ফার্স্টলেডির। ফলে যা হওয়ার তাই হলো।
২০১২ সালের ২৩ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়ন আসমার সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে। তার ও তার স্বামী আসাদ, পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
২০১২ সালের জুলাই মাসে সিরিয়ান মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরেটে বোমা হামলা হয়। এরপর নিয়মিতভাবে আসমাকে আর দেখা যায়নি জনসমক্ষে। এতে মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে, আসমা রাজধানী দামাস্কাসে ছেড়ে পালিয়েছেন। কিন্তু সেই গুজবের মুখে ছাইচাপা দিয়ে তিনি ওই বছরেই ১৮ মার্চ ‘মাদারস র্যা লি’তে যোগ দেন দামাস্কাস অপেরা হাউজে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে তাকে আরে একবার জনসমক্ষে দেখা গিয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিনি দেশ ছেড়ে পালাননি। তিনি জোর গলায় তখন বলেছেন, গতকালও আমি এখানে ছিলাম। আজও এখানে আছি। আগামী দিনেও এখানে থাকবো।
এই আসমা আল-আসাদকেই ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিখ্যাত ‘ভোগ’ ম্যাগাজিন মরুর গোলাপ বলে খেতাব দিয়েছিল। তাদের শিরোনাম ছিল ‘এ রোজ ইন দ্য ডেজার্ট’। পরে অবশ্য সেই লেখাটি তাদের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলে ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।