বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫০ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
বারী সিদ্দিকী : চলে যাওয়ার এক বছর

বিনোদন ডেক্স : দেশীয় লোকসংগীতের এক মহীরূহ ব্যক্তিত্ব বারী সিদ্দিকী। দরদি কণ্ঠসুধা আর মায়াবী উপস্থাপনায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী মরমি গানের অন্যরকম আবহ তৈরি করেছিলেন তিনি। ‘শুয়া চান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’- গানগুলোর এ শিল্পী গেল বছর এই দিনে ইহলোকের সব মায়া ত্যাগ করে চিরবিদায় নেন। এ খ্যাতিমানের আজ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।  প্রথিতযশা সংগীতশিল্পী, বংশীবাদক ও গীতিকার বারী সিদ্দিকী মিশে গিয়েছিলেন জন্মস্থান পূর্ব ময়মনসিংহের লোকায়ত সংগীতের প্রবাহে। তার গান শুনে মনে হয়, শুধু বাংলার মানুষের জীবনধারা নয়, বরং নানা ধর্মের প্রার্থনায়, বিভিন্ন মানুষের বৈচিত্রময় জীবনযাপনে লোকসংগীত জড়িয়ে আছে শক্তভাবে। ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, জারি, সারি আর বাউল গানের সুরে মাতোয়ারা হন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। হাজার বছর পরেও আবেদন ফুরায় না এসব গানের। এমন গানই বারী সিদ্দিকী পরম ভালোবাসায় গলায় তুলে নিয়েছিলেন।

গুণী এ শিল্পীর জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায়। তার পুরো নাম আবদুল বারী সিদ্দিকী, বাবা প্রয়াত মহরম আলী ও মা প্রয়াত জহুর-উন-নিসা। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে বারী সিদ্দিকী ছিলেন সবার ছোট। বয়স যখন তিন কিংবা চার সে সময়েই মায়ের কাছে তার প্রথম শোনা গান ছিলো ‘শাশুড়িরেও কইয়ো গিয়া’। সেই গানের সুরই বারীর মনে গেঁথে যায় পোক্তভাবে। সেসূত্রে শৈশবেই গান শেখায় হাতেখড়ি হয় তার। মাত্র ১২ বছর বয়সে নেত্রকোনার ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন। সত্তরের দশকে বারী সিদ্দিকী জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হন। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল সংগীতের উপর পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হন তিনি। সে ধারাবাহিকতায় বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসংগীতে প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে প-িত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। আর দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সঙ্গে ক্ল্যাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে জনসমক্ষে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন তিনি। এরপর ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে ৭টি গানে কণ্ঠ দেন। এর মধ্যে ‘শুয়া চান পাখি’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৯৯ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশ নেন। তার গাওয়া গান নিয়ে ডজনখানেক অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘অন্তর জ্বালা’, ‘দুঃখ রইল মনে’, ‘ভালোবাসার বসতবাড়ি’ ইত্যাদি। বারী সিদ্দিকী ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছাড়া আরো বেশকিছু চলচ্চিত্রেও প্লেব্যাক করেছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে- ‘রূপকথার গল্প’, ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’, ‘ও আমার দেশের মাটি’ প্রভৃতি। তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘শুয়াচান পাখি’, ‘পূবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’, ‘একটা জিন্দা লাশ’, ‘মাটির দেহ’, ‘মাটির মালিকানা’, ‘মানুষ’, ‘মা’ প্রভৃতি।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।