বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৯ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
প্রসঙ্গ: বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে প্রথমআলোর রহস্যজনক প্রতিবেদন

মুজতবা খন্দকার  :রাজনীতিটা, রাজনীতিকদেরই ভালো মানায়। যেমন সাংবাদিকতা সংবাদকর্মীদের হাতে। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এক সময় মস্কোপন্থি কমিউনিষ্ট পার্টি করতেন। পরে তিনি সেই পার্টিরই মুখপত্র একতার সম্পাদক ছিলেন। এখন মতিউর রহমান আমার জানামতে দস্তুর সাংবাদিক, সম্পাদক। তিন দশকেরও বেশী সময় ধরে তিনি সম্পাদক।

তার হাত ধরে নব্বই দশকে দৈনিক ভোরের কাগজ ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিলো। এখন তিনি প্রথম আলোর সফল সম্পাদক। সকালে চোখ খুলে এই পত্রিকাটি আমি প্রথম দেখি।এই পত্রিকাটিও তার নিজস্ব সম্পাদনার গুনে দেশের সব পত্রিকা টেক্কা দিয়ে অন্যতম শীর্ষ দৈনিকে পরিনত হয়েছে। আর তাই সম্পাদক হিসেবে মতিউর রহমানের আমি গুনমুগ্ধ একজন। তাকে সমিহ করি, সম্মান করি।

তবে তাঁর পত্রিকায় যা ছাপা হয়,তার সবটুকুই কি আমি বিশ্বাস করি! প্রশ্ন করলে বলবো, না। করি না।

দুদিন আগে প্রথম আলোতে দেশের সর্ববৃহৎ জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন লেখা হয়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে ব্যর্থ বলা হয়েছে। শুরুতেই বলেছি, যার যা কাজ তাকে করতে দেয়া উচিৎ। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ব্যর্থ এটা বলার অধিকার প্রথম আলো রাখে না।

প্রথম আলো চাইলে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের দেশ ও জনগনের জন্য কি করা উচিৎ বড়জোর সেটুকু সম্পাদকীয় বিভাগে পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু দলটা কিভাবে চলবে কিম্বা কিভাবে চলছে সেটা পত্রিকাটি বলতে পারে না। আর নেতৃত্ব ব্যর্থ সেটা তো বলতে পারেই না।

বিএনপি বৃহৎ রাজনৈতিক দল, সে দলে একটু আধটু লবিং গ্রুপিং থাকবে। ক্ষোভ খাকবে, হতাশাও থাকলে থাকতে পারে.. সেটা সব বড় দলেই থাকে, আর সেটাকে পুঁজি করে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ব্যার্থ এটা বলা বোধ করি, অনেকটা অনধিকার চর্চার পর্যায়ে পড়ে।

প্রথম আলো যে লিখলো, বিএনপির শীর্ষ নেতারা ব্যার্থ! পত্রিকাটি কি বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে সেজন্য কোনো জরিপ চালিয়েছিলো? তাহলে কিভাবে তারা এই উপসংহারে উপনিত হলো! একটা বড় রাজনৈতিক দল, যে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী সারাদেশে ছড়িযে ছিটিয়ে আছে। সেই দল সম্পর্কে কোন নেতিবাচক কিম্বা স্পর্শকাতর কিছু লিখতে হলে আরো বিবেনাবোধ প্রয়োজন! যেটা প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদনে আমি খুঁজে পাইনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অথবা জেলা পর্যায়ের কোনো কোনো বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীকে দিয়ে একটা বড় দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে ব্যর্থ, তাদের খারিজ করে দেয়া কোনোভাবেই দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা হতে পারে না। যেখানে দলটির মহাসচিব এমন আশঙ্কার কথা নাকচ করেছেন, সেখানে এধরনের স্টোরি কেবলমাত্র দলটির শীর্ষ নেতৃত্বকে মেলাইন করতেই করা, এটা বোঝা যায়।

আবার কোনো এজেন্ডাও থাকতে পারে। তবে আমি বলবো, এই প্রতিবেদনের বড় সিমাবদ্ধতা হচ্ছে, দলটির বাস্তব অবস্থা কি, সেটার চেয়ে পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতি, কিম্বা সম্পাদক কি চাইছেন.. সেটাই রিপোর্টে প্রতিফলিত হয়েছে।

গত এক যুগ ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে, দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী গুম খুনের শিকার। মামলা ঝুলছে কয়েক লক্ষ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। জেলে পচে মরছেন বহু নেতাকর্মী। একটা রাজনৈতিক দলের যেসব অধিকার তার কোনোটাই দলটিকে কখনো দেয়া হয়নি।

দলটির সভাপতিকে মিথ্যে অভিযোগে সাজা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। সভাপতির দায়িত্বে যিনি আছেন, তাঁর জনপ্রিয়তাকে আমলে নিয়ে ‘পথের কাটা’ ‘সরানোর মত তাকেও মিথ্যে অভিযোগে চরম দণ্ড দিয়ে জোর করে দেশের বাইরে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে।

কিন্ত, বিএনপির কোন কিছু কি তার জন্য ঠেকে থাকছে? থাকছে না। গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে তিনি তো যেকোন প্রয়োজনে দলের নেতাদের সাথে বৈঠক করছেন, দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। আগের চেয়ে বেশী দলের স্থায়ী কমিটির সভা হচ্ছে.. দলের মহাসচিব প্রতিদিনই কোন না কোন ফোরামে কথা বলছেন.. তাহলে শীর্ষ নেতৃত্ব ব্যার্থ এই তথ্য প্রথম আলো পেলো কোথায়?

এই দলটাকে যেভাবে যতভাবে নীপিড়ন করা হয়েছে, তার পরেও দলটা টিকে আছে কারন, দলটি বাংলাদেশী স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্বর কথা বলে। আর সেই জন্য দলটা এখনো ঐকবদ্ধ আছে।

প্রথমেই বলছিলাম,রাজনীতিকদের রাজনীতি করতে দেয়া উচিৎ, আজ যদি প্রথম আলোর সাংবাদিকতা নিয়ে কোন রাজনীতিক প্রশ্ন করে, তবে তার জবাব সবার আগে আমি দেবো এবং প্রতিবাদ করবো। যার যে কাজ সেটা তাঁকে করতে দেয়াটা উচিৎ নয় কি!

বিএনপি কিভাবে চলবে, সেটা না হয় বিএনপি ভাবুক, প্রথম আলোর হঠাৎ বিএনপি নিয়ে এত চিন্তা কেন?

মতিউর রহমান। একজন চৌকষ মানুষ যা করেন, আটঘাট বেঁধেই করেন। তিনি এদেশের রাজনীতি এবং রাজনীতিকরা তার মত রাজনীতি করবেন, সেটা চান। কিন্তু তিনি কে! তিনি ওয়ান ইলেভেনের সময় হাসিনা খালেদা দুজনকেই মাইনাস করতে চেয়ে বিশেষ মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছিলেন।

অথচ এই দুই নেত্রির বিকল্প যাদের ভেবেছিলেন, তারা কখনো রাজনীতিক ছিলেন না. শেখ হাসিনাকে আমি ঠোঁট কাঁটা বলি, এর অর্থ হচ্ছে ম্পষ্টবাদী যা বিশ্বাস করেন, তাই বলেন.. তিনি প্রকাশ্যে মতিউর,মাহফুজ আনামদের সমালোচনা করেন, আমার মাঝে মাঝে খারাপ লাগে.. আমার ভাবি.. যেমন ওল, তেমন বাঘা তেতুলেরও তো কখনো কখনো দরকার পড়ে!

(মুজতবা খন্দকার, ঘাটাইল ডট কম)/-

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।