বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৮ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
পরীমনির রিমান্ড: দুই বিচারকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় উচ্চ আদালত : হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন করা হয়েছে

নিউজ ডেক্স : চিত্রনায়িকা পরীমনিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ড মঞ্জুরের ক্ষেত্রে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দুই ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আগামী ২৯শে সেপ্টেম্বর পরবর্তী আদেশের জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। হাইকোর্ট বলেন, দুই ম্যাজিস্ট্রেটের একজন তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মাদকের ভয়াবহতার কথা লিখেছেন। আর রিমান্ড মঞ্জুরের ক্ষেত্রে যে ত্রুটি হয়েছে, অন্য হাকিম তা বিশ্বাসই করেন না।
গত ২রা সেপ্টেম্বর পরীমনির জামিন সংক্রান্ত রুল ও রিমান্ডের বৈধতা প্রশ্নে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারির এক আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্ট ১০ দিনের মধ্যে দুই ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়। সম্প্রতি দুই মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট তাদের লিখিত ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের দপ্তরে জমা দেন। সেই ব্যাখ্যা গতকাল হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়। হাইকোর্ট দুই ম্যাজিস্ট্রেটের দাখিল করা ব্যাখ্যার কিছু অংশ পড়ে শোনান।

হাইকোর্ট বলেন, আমরা তাদের (বিচারক) ব্যাখ্যা দিতে বলেছিলাম যে, কেন পরীমনির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে? ব্যাখ্যায় তারা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র এলএসডি গ্রহণের পর একজন ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে ছুরি নিয়ে নিজের গলায় পোঁচ মেরেছেন। এই ব্যাখ্যা তো সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন এবং আমাদের প্রচলিত আইনের বিরুদ্ধে। যে কারণে আমরা তাদের জবাবে সন্তুষ্ট নই। হাইকোর্ট বলেন, উনারা (বিচারক) ব্যাখ্যায় বলেছেন উপরোক্ত বিষয় সার্বিক বিবেচনায় দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার আদেশের ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে নিতান্তই ইচ্ছাকৃত নয়, সরল বিশ্বাসে ভুল। বিচারকদের এমন ব্যাখ্যার প্রসঙ্গ টেনে হাইকোর্ট বলেন, এখানে যে ত্রুটি হয়েছে তা (বিচারক) বিশ্বাস করেন না। এটা বলে তো হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন করা হয়েছে।
গত ৪ঠা আগস্ট পরীমনিকে তার বনানীর বাসা থেকে আটক করে র‌্যাব। ওইদিনই রাত ৮টা ১০ মিনিটে পরীমনিকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র‌্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত ১২টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব। পরদিন ৫ই আগস্ট বিকাল ৫টা ১২ মিনিটে পরীমনি, চলচ্চিত্র প্রযোজক রাজ ও তাদের দুই সহযোগীকে কালো একটি মাইক্রোবাসে বনানী থানার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর র‌্যাব বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় পরীমনি ও তার সহযোগী দীপুর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে। ওইদিন আদালতে হাজির করা হয় তাকে। সেদিন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ তার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ১০ই আগস্ট পরীমনির ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস। ১৩ই আগস্ট রিমান্ড শেষে পরীমনিকে হাজির করলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। আদালতের আদেশ অনুযায়ী ওইদিন সন্ধ্যা ৭টায় তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। এরপর গত ১৯শে আগস্ট পরীমনির একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম। গত ২২শে আগস্ট ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ৪ দফা ব্যর্থ হয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে ৫ম বারের মতো জামিন আবেদন করেন পরীমনির আইনজীবী। ওইদিন আদালত ১৩ই সেপ্টেম্বর পরীমনির জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেন। তবে ওই শুনানি এগিয়ে আনতে পরদিন ২৩শে আগস্ট পৃথক একটি আবেদন করেন পরীমনির আইনজীবী। কিন্তু আদালত তা আমলেই নেয়নি বলে দাবি পরীমনির আইনজীবীর। ১৩ই সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করে দেয়া আদেশ চ্যালেঞ্জ করে ২৬শে আগস্ট হাইকোর্টে আবেদন করেন পরীমনির আইনজীবী। ওই আবেদনে পরীমনির অন্তর্বর্তীকালীন জামিনও চাওয়া হয়। হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের বিচারককে পরীমনির জামিন আবেদনের শুনানি আদেশের কপি পাওয়ার দুইদিনের মধ্যে কেন নিষ্পত্তি করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। ১লা সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এরইমধ্যে ২৮শে আগস্ট মহানগর দায়রা জজ ৩১শে আগস্ট পরীমনির জামিন আবেদন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। এরপর আদালত ৩১শে আগস্ট মহানগর দায়রা জজ আদালত শুনানি করে পরীমনির জামিন মঞ্জুর করেন।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।