শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩৩ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
„লোকসানের দায়ে সোনালি ব্যাংক ইউকে শাখা বন্ধের ঘোষণা : এরপরও এমডি আতাউর রহমান প্রধানের প্রশংসায় দৈনিক ইণকিলাব!

নিউজ ডেক্স : আতাউর রহমান প্রধান। ৩৭ বছরের বর্ণাঢ্য ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে বর্তমানে তিনি সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১২ সালের মার্চ থেকে ২০১৫ সালের মে পর্যন্ত তিনি ব্যাংকটির যুক্তরাজ্য শাখারও প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।যদিও ইতোমধ্যেই ব্যংকটির  এ  শাখা বন্ধের ঘোষণা আসছে।গত ২৫ মে  এ নিয়ে  ‘বাংলাদেশ প্রতিদিনে’ ‘বন্ধ  হয়ে যাচ্ছে সোনালি ব্যাংক ইউকে প্রবাসিদের গর্ব এখন লজ্জার নাম’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্ট করেছেন যুক্তরাজ্য থেকে আ স ম মাসুম।

অথচ গত ২৬ মে প্রকাশিত  দৈনিক ইণকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,   সাফল্যের চূড়ায় ব্যাংককে পৌঁছে দিয়েছিলেন  এমডি আতাউর রহমান প্রধান।

দৈনিক ইণকিলাব প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে,  যুক্তরাজ্য সোনালী ব্যাংকের ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবসায়িক সূচক ঘেঁটে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তাহলে গত ৩ বছরেই কি সোনালি ব্যাংক ইউকে শাখায় লালবাতি জ্বলল।

ইণকিলাব প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এ সময় এলসি অ্যাডভাইজিং এর সংখ্যা, ইম্পোর্ট পেমেন্ট এর সংখ্যা, মুনাফার তথ্যে দেখা যায়, আতাউর রহমান প্রতিষ্ঠানটির সিইও হিসেবে যোগদানের আগে অথবা পরে কেউই তার এই সাফল্যের নাগালে যেতে পারেননি। বরং তিনি চলে আসার পর মুনাফাতো দূরের কথা বিজনেস পারফরম্যান্স কমে যাওয়ার কারণে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয় ব্যাংকটি। ২০১২ সালের মার্চে তৎকালীন সিইও খন্দকার ইকবালের (পরবর্তীতে বেসিক ব্যাংকের এমডি) কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ২০১৫ সালের মে মাসে এম সরোয়ার হোসেন এর হাতে দায়িত্বভার অর্পণ করেন তিনি।

ব্যাংকটিতে ওই সময়ে কর্মরত সালাউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে হলে তিনি জানান, মো. আতাউর রহমান প্রধানের সময়ে রেমিট্যান্স, এলসি এডভাইজিং এর সাথে ট্রেড ফাইন্যান্স সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিজনেস যেমন-বিল ডিস্কাউন্টিং, এড কনফার্মেশন, রি-ইমবার্সমেন্ট বহুগুন বৃদ্ধি পায়। ফলে ওই সময়ে সোনালী ব্যাংক ইউকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। এবং লোকাল কমিউনিটিসহ সরকারের নিকট ব্যাংকটির ভাবমর্যাদা বহুগুন বৃদ্ধি পায়।

সূত্র মতে, ২০১১ সালে এর মুনাফার পরিমাণ ৫ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ড হলেও ২০১২ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১০ লাখ ২৭ হাজার পাউন্ডে। যা তার পূর্বের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। ২০১২ সালের এই পারফরম্যান্সে ২০১৩ সালের ১৩ জুন অর্থমন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার উপস্থিতিতে ডিভিডেন্ড হস্তান্তর করা হয়।

ব্যাংকটির ২০১৩ সালের সাফল্য আরও ঈর্ষণীয়। এ বছর মুনাফা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় জিবিপি প্রায় চার মিলিয়ন যা পূর্বের বছরের তুলনায় প্রায় চারগুণ। এটি একটি অভাবনীয় সাফল্য। এই অভাবনীয় সাফল্য উদযাপনে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মুহিতের হাতে ডিভিডেন্ড হস্তান্তর করার মাধ্যমে। সে দিন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, আমাদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত আনন্দের দিন। মনে হচ্ছে এটি একটি ঈদের দিন। কারণ রাষ্ট্রায়ত্ত অনেক প্রতিষ্ঠান যখন লস গুনছে তখন সোনালী ব্যাংকে (ইউকে) আমাদের ডিভিডেন্ড দিচ্ছে।

২০১৪ সালে মুনাফার পরিমাণ ছিল ২৭ লাখ ২০ হাজার পাউন্ড। ২০১৪ সালে ১০ লাখ ৩৭ হাজার পাউন্ড প্রভিশন সংরক্ষণ করায় ইনকাম বেশি হলেও মুনাফা কিছুটা কমে আসে। বছর শেষে ইমপোর্ট পেমেন্ট এর সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৮৯৪টি। যা ২০১১ সালের (১০ হাজার ৩৬৩) দ্বিগুণের বেশি। অন্যদিকে ডিসেম্বর ভিত্তিক পারফরম্যান্স মূল্যায়নে দেখা যায় ২০১৫ সালে জিবিপি ১৫ লাখ ৩৩ হাজার পাউন্ড। ২০১৬ সালে ২ লাখ ৯৬ হাজার পাউন্ড। অন্যদিকে ২০১৭ সালে ১ লাখ ২৫ হাজার পাউন্ড ক্ষতি হয়েছে ব্যাংকটির। মূলত আতাউর রহমান প্রধান বাংলাদেশের ফেরত আসার পর সোনালী ব্যাংক ইউকে লিমিটেড ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে থাকে।

এ বিষয়ে ওই সময়ে কর্মরত লুৎফর রহমানের সঙ্গে মোবাইলে আলাপ হয়। তিনি জানান, ২০০১ হতে ২০১১ সাল পর্যন্ত মোট ১১ বছরে সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লাভ করেছিল মাত্র ৮৭০ হাজার পাউন্ড। আর আতাউর রহমান প্রধান এখানে সিইও হিসাবে অবস্থান কালীন মাত্র ৩ বছরে (২০১২-২০১৪ সাল পর্যন্ত) লাভ করেছিলো ৭৭ লাখ ৫ হাজার পাউন্ড। অন্যদিকে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই চার বছরে সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেড ১৮ লাখ ৯৯ হাজার পাউন্ডের লোকসান গুণে।

উল্লেখ্য, সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেড যুক্তরাজ্যভিত্তিক একমাত্র বাংলাদেশী ব্যাংক যার ৫১ শতাংশ শেয়ার বাংলাদেশ সরকারের এবং অবশিষ্ট ৪৯ শতাংশ শেয়ার সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের। এটি যুক্তরাজ্য সরকারের প্রুডেনশিয়াল রেগুলেশন অথরিটি দ্বারা অনুমোদিত এবং ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস অথরিটি ও প্রুডেনশিয়াল রেগুলেশন অথরিটি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। দেশ স্বাধীনের পর যুক্তরাজ্যের মাটিতে বাংলাদেশী কমিউনিটিদের মাঝে রেমিট্যান্স সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে এটি এক্সচেঞ্জ হাউস হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে বাংলাদশে সরকারের অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং নীতিশাখার বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নরের নিকট পাঠানো একপত্রের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেড নামে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক চালুর ব্যাপারে সরকারের সম্মতি পত্র পাঠানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালের ১০ ডিসেম্বর হতে যুক্তরাজ্যের মাটিতে সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেড একটি পরিপূর্ণ ব্যাংক হিসেবে এর ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। সূত্র : দৈনিক ইণকিলাব/ বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।