বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:৩৭ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
সিএএবিতে দুদকের হানা : বার বার অভিযোগ ভেস্তে গেছে, অবশেষে ড্রাফটসম্যান সোবহান ও স্ত্রীকে দুদকে তলব, তালিকায় আরো ৮২ জন

একুশে বার্তা রিপোর্ট :  সিএএবিতে দুদকের হানা নতুন কোন বিষয় নয়- বার বার দুদক হানা দিচ্ছে , তলব করছে , কিন্ত মামলা করছে না, ফলে সিএএবির কর্মকর্তা-কর্মচারিরা বার বার পার পেয়ে যাচ্ছেন। এর আগেও ১৬ জনকে তলব করে ১২ জনকেই খালাস দেয়া হয়েছে। এ তালিকায় একজন নির্বাহি প্রকৌশলী ও এজন উপ-সহকারি প্রকৌশলীও রয়েছেন। কক্সবাজার বিমানবন্দরের পিডি নির্বাহি প্রকৌশলীকে ইউনুস ভুইয়াকে ২ স্ত্রীসহ তলব করলেও তা ভেস্তে গেছে। ৫ বিমানবন্দরের দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায় থেকে  মামলার করার নির্দেশ থাকলেও তা আমলে নেয়নি দুদক।

এ দিকে দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি, অনিয়ম থামছেই না। টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ সব ধরনের কর্মকা- চালাচ্ছে তারা। বেবিচকের পাশাপাশি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও দুর্নীতি ও অনিয়মে পিছিয়ে নেই।

দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ অনিয়ম থামাতে একের পর এক নজরদারি করলেও কিছুতেই তা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বিশেষ করে সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশল শাখা বেশি দুর্নীতিতে জড়িত। ছদ্মনামে টেন্ডার ভাগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এই শাখার শীর্ষ কর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারীরা পর্যন্ত টেন্ডারে ভাগ বসাচ্ছেন। বিভিন্ন পেশার লোকজনও প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার ভাগিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ দুটি সংস্থার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চোখ পড়েছে তাদের ওপর। আপাতত ৮২ কর্মকর্তার একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নোটিস দেওয়া শুরু হয়েছে। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নজরদারিতে রাখা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। সময়মতো তাদের আইনের আওতায় নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, কয়েক মাস আগে বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানসহ ৯ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধানে ৭টি প্রকল্প কাজের যাবতীয় নথিপত্র তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে সাত ধরনের প্রকল্প কাজসহ ৯ ধরনের নথিপত্র তলব করা হয়েছে। এলটিএমের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকার ওপরে সম্পাদিত কাজের ছক প্রয়োজনীয় নথিপত্র হিসেবে বিবেচিত। এর মধ্যে রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম, কমিটির সিদ্ধান্ত, কার্যাদেশ ও পরিশোধিত অর্থের বিল-ভাউচার, টার্মিনাল ভবনের ছাদে ওয়াটারপ্রুফ কাজের অনুমোদিত প্রাক্কলন, দরপত্র, বিজ্ঞপ্তি (পেপার কাটিং), দাখিলকৃত দরপত্র, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের কার্যাদেশ, এমবি ও ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচার; বেবিচকের কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তিসমূহ (পেপার কাটিং), দাখিলকৃত দরপত্রসমূহ, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের কার্যাদেশ, এমবি ও ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচার, বেবিচকের এমটি ভবন নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তিসমূহ (পেপার কাটিং), দাখিলকৃত দরপত্রসমূহ, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্ত, কার্যাদেশ, এমবি ও ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচারের ফটোকপি ও ডিভিশন-৩-এর ভবনের সিকিউরিটি গেট নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত দরপত্র, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের কার্যাদেশ, এমবি ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচারসহ ওই প্রকল্পের নথির ফটোকপি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমপোর্ট কার্গো ভবনের পার্কিং শেড নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, বিজ্ঞপ্তি (পেপার কাটিং), ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত দরপত্রসমূহ, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্ত, কার্যাদেশ, এমবি ও পরিশোধিত বিল-ভাউচার চাওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি বেবিচকের নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদিত প্রাক্কলন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত দরপত্র, মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের কার্যাদেশ, এমবি, ঠিকাদারকে পরিশোধিত বিল-ভাউচারের কাগজপত্র দিতে বলা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর পাশাপাশি প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে। এর আগে ২০১৯ সালের জুন মাসে শাহজালাল, শাহ আমানত, সিলেট ওসমানী ও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৫ প্রকল্পের ফাইল তলব করা হয়েছিল। তৎকালীন অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক জাহিদ কামাল নথিপত্র তলব করেছিলেন। ওই সময় প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানসহ ৯ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নথিও তলব করা হয়েছিল। কিন্তু সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তারা। আবারও বিষয়টি সচল করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার জিরো টলারেন্স নীতি। যারা অপরাধ করবে তারা শাস্তি পাবেই। দুদককে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। বেবিচকে শুদ্ধি অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রকৌশল শাখাসহ সব বিভাগে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই দুদক বেবিচক ও বিমানের কর্মকা- নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। কোন কোন খাতে বেশি দুর্নীতি হয় সেই তথ্য উদঘাটন করে সংস্থাটি। বেবিচকের ৩৬টি খাত নিয়ে বেশি অভিযোগ ওঠায় তদন্ত শুরু হয়েছে। সেবাকে বাণিজ্য বানিয়ে কেউ কেউ অর্থ কামাচ্ছেন। ইতিমধ্যে দুদক একটি তালিকা করেছে। তালিকায় বলা হয়েছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ার কন্ডিশনার ডাক্ট স্থাপন, এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম আপগ্রেডেশন, বিমানবন্দরে কাউন্টার এবং কনভেয়ার বেল্ট স্থাপন, তার যন্ত্রাংশ সরবরাহ, নতুন বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন, পুরাতন বোর্ডিং ব্রিজের যন্ত্রাংশ সরবরাহ ও স্থাপন, বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপনের জন্য এলইডি লাইট কেনা ও ফিটিংস, বাগানে আলোকসজ্জা, এইচটি ও এলটি সুইচগিয়ার স্থাপন কাজের নামে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

তাছাড়া বিমানবন্দরের ফ্লোর মাউন্টেড এবং ওয়াল মাউন্টেড প্যানেল স্থাপন, বিমানবন্দরে বিভিন্ন সাইজের পাওয়ার ক্যাবল সরবরাহ, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপন, রানওয়ে, টেক্সিওয়ে, এপ্রোন লাইট ও লাইট ফিটিংস সরবরাহ, আবাসিক ভবনে ইন্টারনাল ইলেকট্রিফিকেশনের কাজ, সিএএবির নতুন সদর দপ্তরের ভবনে বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট সরবরাহসহ ইএম সংক্রান্ত কাজ, টার্মিনাল বিল্ডিংসহ বিমানবন্দরের অন্যান্য ভবনের ডেকোরেশন সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইএম কাজ, বিভিন্ন স্থানে এপ্রোন মাস্ট লাইট স্থাপন, সিসিআর বিল্ডিং-সংশ্লিষ্ট সব ইএম কাজ, রানওয়ে লাইটিংয়ের জন্য বিভিন্ন সাইজের কেব্ল সরবরাহ ও সংস্থাপন কাজেও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। আর এসব অনিয়মের পেছনে ছিলেন বেবিচকের প্রকৌশল বিভাগসহ আরও কয়েকটি বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা।

পাশাপাশি বিমানের কাছে বছরের পর বছর আটকে থাকা বকেয়ার তিন হাজার ৯২ কোটি ৬৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৫২ টাকা আদায় এবং এর পেছনের কারণ জানতে মাঠে নেমেছে দুদক। ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর বিমানের কাছে চিঠি দিলেও কোনো জবাব পায়নি তারা। পরে আবারও চিঠি দেয় দুদক। বাধ্য হয়ে বিমান সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। এসব বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য আগামী মাসে বলাকা ও বেবিচক কার্যালয়ে যাবেন দুদক কর্মকর্তারা।

এই বিষয়ে দুদকের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘টাওয়ার বোর্ডিং ব্রিজসহ বড় বড় কেনাকাটা, অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, বিমানবন্দরের দোকান ও বিলবোর্ড ভাড়া, পরামর্শক নিয়োগ, কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণসহ নানা খাতে দুর্নীতি হয়েছে। বেবিচকের অধিকাংশ ইঞ্জিনিয়ারের বিদেশে একাধিক বাড়ি রয়েছে। কাগজপত্র ঠিক রেখে কাজের কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করে যেনতেন কাজের মাধ্যমে ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়াররা অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে থাকেন। ছদ্মনামে তারা টেন্ডার ভাগান। আবার নানা পেশার মানুষ প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার ভাগিয়ে নিচ্ছেন। তাদের তালিকাও আমরা করছি। ইতিমধ্যে বিমান ও বেবিচকের ৮২ কর্মকর্তার প্রোফাইল সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বেবিচকের এটিএস অ্যান্ড অ্যারোড্রামস বিভাগের সিনিয়র ড্রাফটম্যান আবদুস সোবহান ও তার স্ত্রী মিসেস সালমাকে দুদক চিঠি দিয়েছে। তাছাড়া দুর্নীতি করে ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে কানাডায় পালিয়ে যাওয়া বেবিচকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল খালেক ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুজ্জামানের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে দুদক।’

বেবিচকের প্রকৌশল শাখার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নানা পেশার লোকজন প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার ভাগিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। তাদের কাছে আমরা অসহায়। তাদের কথা না শুনলে পত্রপত্রিকায় আজেবাজে সংবাদ ছাপিয়ে দেওয়া হয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে এসব অপকর্ম করছে। কারা কারা এসব অপকর্ম করছে তাদের নামও দুদককে আমরা জানিয়েছি। আর এসবের পেছনে আমাদের শীর্ষ কর্তারা জড়িত। বিষয়টি আমরা দুদককে অবহিত করেছি। দুদকও বলেছে, তারা বিষয়টির নজরদারি করছে।’ ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘দুদকের নোটিসে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নিজেদের রক্ষা করতে তারা তদবিরও করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।