শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩৬ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
অর্থবছরের ৯ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ২৯ হাজার কোটি টাকা, ভ্যাট ৮ হাজার কোটি টাকার ওপরে

ডেক্স রিপোর্ট :  ডলার সংকটে আমদানির ওপর নানা কড়াকড়ির কারণে চলতি বছরে আমদানি খাতে সরকারের রাজস্ব আহরণ বেশ খানিকটা কমে গেছে। বছরের প্রথম নয় মাসের হিসাবে দেখা যায়, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায়ে ২৯ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছে।

এরমধ্যে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ১৫ হাজার ৮০৬ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা। তা ছাড়া মোট রাজস্ব ঘাটতির অর্ধেকেরও বেশি হয়েছে আমদানি পর্যায়ে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

একই সময়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাটে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২৪৪ দশমিক শূন্য সাত কোটি টাকা। আয়কর খাতে ঘাটতির পরিমাণ ৪ হাজার ৯৫৭ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, অর্থবছরের বাকি তিনমাসেও এ ধারা বজায় থাকবে এবং বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। বরং বছর শেষে এ খাতে বড় ঘাটতি তৈরি হবে, যার প্রভাব পড়তে পারে বাজেটের অন্যান্য খাতে। বিশেষ করে নতুন শিল্পকারখানায় বিনিয়োগ ও উৎপাদন কমে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধীর গতি তৈরি হতে পারে। ফলে ভ্যাট এবং আয়করের ওপরেও তার প্রভাব পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

আমদানি খাতে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। মার্চ পর্যন্ত এ লক্ষ্য ছিল ৮৩ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। এ সময় পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৭ হাজার ৩৮০ দশমিক ৩৪ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৫ হাজার ১৪৫ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা।

যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৮৬ হাজার ৯০১ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা। এ সময় পর্যন্ত আয়কর খাতে ৭৬ হাজার ১৮৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭১ হাজার ২২৭ দশমিক ২২ কোটি টাকা। মূসক খাতে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২৪৪ দশমিক শূন্য সাত কোটি টাকা। আয়কর খাতে এর পরিমাণ চার হাজার ৯৫৭ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা।

আমদানি শুল্ক কমে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা। এর মধ্যে ডলার সংকটের কারণে আমদানি নীতিতে কড়াকড়ি, ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়া, ঋণপত্র খুলতে না পারা, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য মূল্যবৃদ্ধি এবং বিলাসী দ্রব্যের আমদানি কমে যাওয়ার কারণে আমদানি কমে গেছে। এ কারণে আমদানি খাত থেকে শুল্ক-কর আদায়ের পরিমাণও কমেছে।

বাংলাদেশের খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশিরভাগ পণ্যই আমদানি করতে হয়। কিন্তু আমদানি খাতে শুল্ক বেশি আসে গাড়ি ও বিলাসবহুল নানা পণ্য থেকে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এ জাতীয় পণ্য আমদানি অর্ধেকে নেমে এসেছে।

গত বছরের মে নাগাদ বাংলাদেশে ডলার সংকট শুরু হওয়ার পর এলসির মার্জিন বৃদ্ধি, বিলাসবহুল পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়াসহ কড়াকড়ি এবং নজরদারি বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থবছরের ৯ মাসে ঋণপত্র খোলার হার কমে গেছে এক-চতুর্থাংশ। বিশেষ করে মূলধনী যন্ত্রপাতি, ভোগ্যপণ্য, ইন্টারমিডিয়েট পণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও কমে গেছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ডলার সংকটের কারণে সরকার অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানি নিরুৎসাহিত করার একটা চেষ্টা করেছে। সেজন্য এলসি খোলার ক্ষেত্রে নানারকম কড়াকড়ি এসেছে, সেটেলমেন্টও কমেছে। ফলে আমদানি ঋণাত্মক হয়ে যাওয়ায় এই খাত থেকে শুল্ক আদায়ও কমে গেছে। এই অর্থবছরে আমদানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক রয়েছে এবং শেষেও এটা নেতিবাচকই থাকবে বলে ধারণা তার।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক বলেন, এই অর্থবছরে বড় একটা চাপ থাকবে। রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা, সেটা আসলে পূরণ করা যাবে না। সেটা সরকারকে নানাভাবে সমন্বয় করতে হবে, বাজেটে বিভিন্ন খাতে খরচ কাটছাঁট করতে হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ডলার সংকটের জেরে এলসি খোলার হার কমেছে, আমদানি কমেছে। স্বাভাবিকভাবেই আমদানি কমলে শুল্ক আদায় কমবে। আবার আমদানি বাড়লে শুল্ক আদায়ের পরিমাণ বাড়বে। শুল্ক আদায় কমার পেছনে এনবিআরের কোনো হাত নেই। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় শুল্ক আদায় সন্তোষজনক বলে মনে করেন তিনি।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের কাঁধে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। যদিও সে সময় অর্থনীতিবিদরা এ লক্ষ্যমাত্রাকে অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছিলেন। বর্তমান সময়ের বাস্তবতায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে অসম্ভব বলেই মত তাদের। অবশ্য এনবিআর কর্মকর্তারা আশা করেন, শিগগিরই ডলার সংকট কেটে যাবে। অর্থবছরের শেষ সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য আবারও গতি ফিরবে, রাজস্ব আয়ও বাড়বে।প্রবি

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।