রবিবার, ১৬ Jun ২০২৪, ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
সপরিবারে জেনারেল আজিজের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

ডেক্স রিপোর্ট : জেনারেল (অব) আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটি। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবনতি ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণ দেখিয়ে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক এই সেনাপ্রধান গতকাল মঙ্গলবার বলেন, শাস্তি পাওয়ার মতো কোনো অপরাধ আমি করিনি, মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় অবাক হয়েছি। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আগেই জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সাবেক সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে-যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা কোনো ভিসানীতির প্রয়োগ নয়। এদিকে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে- সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের তৎপরতার কারণে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমের ওপর থেকে আস্থা হারিয়েছে জনগণ। বিবৃতিতে আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে ঘুষগ্রহণের অভিযোগও এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। বলেছে, ব্যক্তিস্বার্থের বিনিময়ে সরকারি নিয়োগের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। সামরিক বাহিনীর ঠিকাদারি অবৈধভাবে পাইয়ে দিতে তার ভাইয়ের সঙ্গে যোগসাজশ করেছেন আজিজ।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করা হয় বিবৃতিতে। বলা হয়, এরই ধারাবাহিকতায় আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমকে নানাভাবে সমর্থন ও সহায়তা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। এসব সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে- সরকারি সেবায় স্বচ্ছতা ও সহজলভ্যতা, ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতিসাধন এবং মুদ্রা পাচারসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতে সামর্থ্য বৃদ্ধি।

এদিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব) আজিজ আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তার বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, শাস্তি পাওয়ার মতো কোনো অপরাধ আমি করিনি। আমি মনে করি, এটা (মার্কিন নিষেধাজ্ঞা) সম্পূর্ণভাবে আমার জন্য প্রযোজ্য নয়।

তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত ডকুমেন্টারি প্রসঙ্গ টেনে আজিজ আহমেদ বলেন, আল জাজিরাতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ দেখানো হলো। আমার ভাইকে মিলিটারি কন্ট্রাক্ট দিয়ে করাপশন করেছি, এই অভিযোগ আনা হলো। তখন জাতিসংঘ থেকেও এ সংক্রান্ত বক্তব্য দেওয়া হয়েছিল। আল জাজিরা যখন এটা প্রচার করে, তখন আমি আমেরিকাতে। আমি তখন জাতিসংঘ হেডকোয়ার্টারে গিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, তোমরা যা আমাদের কাছে চেয়েছিলে, সেটার সব ডকুমেন্টই আমার কাছে আছে। তোমাদের কর্মকর্তা কেন বলল, এমন কিছু হয়নি। তখন তারা বলেছিল যে, এটা সঠিক হয়নি।

তার দায়িত্বকালে ‘ইকুইপমেন্ট’ কেনা হয়নি দাবি করে আহমেদ বলেন, এটা (নজরদারির প্রযুক্তি) মিশন এলাকায় দেওয়ার জন্য কেনা হয়েছিল। আমি চার বছর বিজিবির ডিজি, তিন বছর সেনাপ্রধান ছিলাম। সাত বছরে আমার কোনো ভাইকে আমি একটা কন্ট্রাক্টও দিইনি। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে, আমি পরিণতি মেনে নিতে প্রস্তুত।

স্পাইওয়্যার, যে সিগন্যাল ইকুইপমেন্টের কথা বলা হয়েছে, জাতিসংঘ জানতে চায়Ñ ডিআর কঙ্গোর সিগন্যাল কোরের জন্য এই ইকুইপমেন্ট আমরা দিতে পারব কি-না। আমি ২৫ তারিখে দায়িত্ব নিলাম, ২৬ তারিখে কন্ট্রাক্ট সাইন হয়েছে। তার দাবি, দুটি বিষয় কাকতালীয়- তারা লিংক করেছে ইমম্যাচিওরড ওয়েতে। আর কেনা হয়েছে হাঙ্গেরিতে, আমার ভাই তখন হাঙ্গেরিতে ছিল।

বাংলাদেশের সাবেক এ সেনাপ্রধান বলেন, বাহিনীর ভাবমূর্তির ব্যাপারে একটা কথাই বলব, সব সময় একটা বিষয় আমি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বিজিবি ও আর্মি প্রেস্টিজিয়াস ইনস্টিটিউশন। সব সময় সতর্ক ছিলাম, আমার কোনো কর্মকাণ্ডে যেন এ দুই বাহিনীর সুনাম ক্ষুণœ না হয়। আমার কাছে মনে হয়, যেহেতু বর্তমান সরকারের সময় আমি সেনাপ্রধান ছিলাম, সেহেতু সরকারকেও হয়তো কিছুটা বিব্রত বা হেয় করার জন্য এই নিষেধাজ্ঞাটা হতে পারে।

আজিজ আহমেদকে ২০১৮ সালের ২৫ জুন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান করা হয়। তিন বছর দায়িত্ব পালন শেষে ২০২১ সালের ২৪ জুন অবসরে যান তিনি। এর আগে তিনি বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। জেনারেল আজিজ আহমেদরা পাঁচ ভাই। অন্যরা হলেন- আনিস আহমেদ, হারিছ আহমেদ, টিপু আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ জোসেফ।

জেনারেল আজিজ আহমেদের আপন তিন ভাই ২০০৪ সালে একটি হত্যাকাণ্ডের অপরাধে আদালতে দণ্ডিত হয়েছিলেন। বিচারে আনিস ও হারিস ছিলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত, জোসেফকে দেওয়া হয়েছিল মৃত্যুদণ্ড। আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান হওয়ার এক মাস আগে ২০১৮ সালের ২৭ মে তোফায়েল আহমেদ জোসেফের সাজা মওকুফ করা হয়। আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ আনিস ও হারিসের সাজা মওকুফের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান তখন বলেন যে, নিয়ম মেনেই সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের দুই ভাই আনিস আহমেদ ও হারিছ আহমেদের সাজা মওকুফ করা হয়েছে।

২০২১ সালে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বাংলাদেশের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের পরিবারের সদস্যদের অতীত এবং বর্তমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রচার করে।

কোনো মন্তব্য নেই : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব) আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে গতকাল কোনো মন্তব্য করতে চাননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিকরা তাকে জেনারেল আজিজ আহমেদ নিয়ে প্রশ্ন করেন। তখন তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, এটা নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। কেন এই নিষেধাজ্ঞা, জানি না।

এ ঘটনা সরকারকেও কিছুটা হেয় করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিগত হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। তিনি অবাক ও মর্মাহত হয়েছেন এবং বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। যে দুটো অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়, মিথ্যা।

অন্য অ্যাক্টে নিষেধাজ্ঞা’ :

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব) আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জনসমক্ষে আনার আগে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসকেও জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভিসানীতি নয়, অন্য অ্যাক্টের অধীনে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে কি-না, তা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি সেনাবাহিনীর বিষয়। আমি এ মুহূর্তে কিছু বলতে চাই না।

হাছান মাহমুদ আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের যোাযোগ রয়েছে এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিকভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রে আমরা দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছি।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।