বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:৪৭ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
১১ জানুয়ারি আইজিপি অবসরে যাচ্ছেন : কে হচ্ছেন নয়া আইজিপি, তালিকায় ৭ জন, আলোচনায় ডিএমপি কমিশনারও আছেন : মামুনেরও এক্সটেনশন হবার সম্ভাবনা

নিউজ ডেক্স : পুলিশের নতুন অভিভাবক খোঁজা হচ্ছে। এ জন্য সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে সরকার। পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও মাথায় রাখা হয়েছে। ১১ জানুয়ারি বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে, নাকি নতুন কাউকে স্থলাভিষিক্ত করা হবে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। এ নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা সম্ভাব্য নতুন আইজিপির প্রোফাইল যাচাই-বাছাইয়ের কাজ গুটিয়ে এনেছেন।

তবে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, নতুন আইজিপির তালিকায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ছাড়াও অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল আহসান, মনিরুল ইসলাম, এসএম রুহুল আমিন, মল্লিক ফকরুল ইসলাম, এম খুরশিদ হোসাইন ও খন্দকার গোলাম ফারুকের নামও আছে। তাদের মধ্যে বর্তমান আইজিপির এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদিও আইজিপির পদে এখন পর্যন্ত কাউকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে পুলিশ সপ্তাহ শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতি বছরই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের দরবার অনুষ্ঠিত হয়। ওই দরবারে দাবিদাওয়াগুলো উত্থাপন করা হয়। কিন্তু এবার অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কোনো দাবিদাওয়াই করেননি পুলিশের কোনো কর্মকর্তা। পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, যখনই আইজিপির চাকরির মেয়াদ শেষের দিকে চলে আসে তখনই আলোচনা উঠে তার চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। পরে দেখা যায় অন্য কেউ আইজিপি হয়ে যাচ্ছেন। সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ও ড. বেনজীর আহমেদের বেলাতেও একই ধরনের আলোচনা ছিল বেশি। কিন্তু তাদের কারোই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়নি। তবে বর্তমান আইজিপির বিষয়টি ভিন্ন আঙ্গিকে আলোচনা হচ্ছে। তিনি নবম ব্যাচের একমাত্র কর্মকর্তা। পুলিশে তার প্রচুর সুনাম রয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি আইজিপির দায়িত্ব নেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করার চেষ্টা চালান। পুলিশের একটি অংশও চাচ্ছে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে। এ জন্য সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে অনুরোধও করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা  দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান আইজিপিসহ সাতজনের নাম আলোচনা হচ্ছে। তবে বর্তমান আইজিপিকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। যদি কোনো কারণে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না হয় তাহলে অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল আহসান হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন যিনি তাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। আর এক বছর পর জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। আইজিপির দায়িত্বে বসানোর ক্ষেত্রে নির্বাচনকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিশেষ সুনাম রয়েছে পুলিশে। তিনি র‌্যাবের মহাপরিচালক, পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (প্রশাসন), ঢাকা ও ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি, সিআইডি প্রধানসহ পুলিশের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

নয়া আইজিপি হিসেবে সবচেয়ে বেশি নাম আলোচনা হচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) কামরুল আহসান ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি এসএম রুহুল আমিনের। এ দুজনের মধ্যে কামরুল আহসান বর্তমান পদে আসার আগে এটিইউর প্রধান ছিলেন। তিনি শরীয়তপুর, চট্টগ্রাম ও যশোর জেলার পুলিশ সুপারের পাশাপাশি পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (সংস্থাপন এবং ট্রেনিং), সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি এবং রেলওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এটিইউ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি এসএম রুহুল আমিন সিএমপির ডিসি, সিলেট জেলার এসপি, ঢাকায় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এবং রেলওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

হাইওয়ের প্রধান মল্লিক ফকরুল ইসলামের নামও আলোচনা হচ্ছে। এর আগে তিনি র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক ছিলেন। তা ছাড়া তিনি ভোলা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, ফেনী জেলার এসপি, রেলওয়ে রেঞ্জে ডিআইজি, সিটি এসবি ও ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। র‌্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেনও আছেন আলোচনায়। এর আগে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ও রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আইজিপি পদে আসতে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের নামও আলোচনা হচ্ছে। এর আগে তিনি পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর, সারদা পুলিশ একাডেমির পিন্সিপাল ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান মনিরুল ইসলামের নামও নতুন আইজিপি হিসেবে আলোচনায় আছে। তিনি নীলফামারী জেলার পুলিশ সুপার, ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ), গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার গোয়েন্দা পুলিশ এবং ডিএমপির সিটিটিসির প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বিশেষ দক্ষ এই পুলিশ কর্মকর্তার হাতেই গঠিত হয় সিটিটিসি। এ ছাড়া গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার আগে-পরে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির বড় বড় জঙ্গি আস্তানা তার নেতৃত্বেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেতৃস্থানীয়দের গ্রেপ্তারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। সজ্জন ব্যক্তি ও চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তার বিশেষ সুনাম রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের দরবার : রাজারবাগ পুলিশ লাইনস অডিটরিয়ামে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশেষ দরবার করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতনরা। দরবারে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তবে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে পুলিশের কোনো দাবিদাওয়া উত্থাপন করেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যা করার সময় পুলিশ সদস্য জীবন দিয়েছেন। পুলিশের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আর এ জন্য কোনো ধরনের দুর্নীতি ও অপরাধ করা যাবে না।দেশ রূপান্তর

 

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।