বেবিচকের সেই বেপরোয়া ডিডি রাশিদার পদাবনতি

স্টাফ রিপোর্টার : একুশে বার্তার অনলাইন সংস্করণে গত ০১ সেপ্টেপম্বর/২৫ ‘আওয়ামী দোসর, শেখ হাসিনার বোন পরিচয়ধারি, ডিডি রাশিদা অবশেষে ৫ সেপ্টেম্বর পিআরএল-এ যাচ্ছেন, প্রশাসন ফেভারে ১ ডজন তদন্ত রিপোর্ট আলোরমুখ দেখল না‘’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর বেবিচক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রশাসনিক এ্যাকশনে সেই বিতর্কিত উপপরিচালক ডিডি রাশিদা সুলতানাকে পদাবনতি করা হয়েছেন। তিনি এখন ডিডি নন- এডি। কিন্ত তিনি ৫ সেপ্টেম্বর পেনশন নিয়ে যেতে পারবেন- কি এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

সূত্রমতে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের নাম ভাঙিয়ে কর্মস্থলে প্রভাব বিস্তার ও নানা অনিয়মের অভিযোগে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) উপ-পরিচালক (ডিডি) রাশিদা সুলতানাকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পদাবনতি করা হয়। গত ২ সেপ্টেম্বর বেবিচকের চেয়ারম্যন এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করেছেন।

সূত্রে জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে নানা অনিয়মের পরও রাশিদা সুলতানার ধারে-কাছে যেতে পারেনি কেউ। অফিসে তিনি প্রচার করে বেড়াতেন, শেখ হাসিনা তাকে কন্যার মতো দেখেন। এভাবেই সবার ওপর প্রভাব খাটাতেন তিনি। এমনকি অফিসের সবাইকে ১৫ আগস্ট পালন করতে বাধ্য করতেন। এভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে নানা অপকর্মের কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রাশিদার প্রভাব কিছুটা কমলেও অনিয়ম বন্ধ হয়নি। শেষমেশ তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে বেবিচক। তদন্তে তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। পরে কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিদার পদাবনতি করে গত ২ সেপ্টেম্বর চিঠি ইস্যু করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যন। চিঠিতে তাকে তিরস্কার করার পাশাপাশি বেতনও কর্তন করা হয়।

সূত্র জানায়, রাশিদা সুলতানা সিভিল এভিয়েশনের এভসেক ট্রেনিং অ্যান্ড সার্টিফিকেশন বিভাগের উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পট পরিবর্তনের পর তাকে পাবনার ঈশ^রদী বিমানবন্দরে সংযুক্তি করা হয়। সেখানেও তার অনিয়ম থেমে থাকেনি। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, তিনি কর্মকর্তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল, সংখ্যালঘুদের কটাক্ষ করা, এমনকি নানা ধরনের হুমকিও দিতেন। এ ছাড়া গত ২০২০-২১ ও ২০২২ সালের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসআর) যথাসময়ে জমা না করার বিষয়ে ব্যাখ্যা তলবেরও জবাব দেননি রাশিদা।

সূত্র আরও জানায়, বেবিচকের সাবেক সদস্য (নিরাপত্তা) আবু সালেহ মাহমুদ মান্নাফী কর্মরত থাকার সময় বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিদার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিক্যাল বোর্ডের কাছে উপস্থিত হতে বলা হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এ ছাড়া সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপকের কাছে ঘুষ দাবি করে না পাওয়ায় তাকে লাঞ্ছিত করাসহ হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে সরকারি দুটি বাড়ি এবং একাধিক গাড়ি নিজের দখলে রাখার অভিযোগ রয়েছে।

বেবিচক সূত্র জানায়, তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগগুলো প্রমাণ হওয়ায় রাশিদা সুলতানাকে চিঠি পাঠিয়েছে বেবিচক। চিঠিতে তার নানা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে আনীত ‘অসদাচরণ’র অভিযোগ তদন্তে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা অনুযায়ী তাকে দোষী সাব্যস্তপূর্বক লঘু দন্ড- প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। আরও জানানো হয়, অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় শাস্তিস্বরূপ তার ‘বেতন স্কেল নিম্নস্তরে অবনমিতকরণ তথা পঞ্চম গ্রেডের ধাপে অবনমিতকরণ’ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাকে ‘তিরস্কার’ সূচক লঘু দন্ড- প্রদান করা হয়েছে, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে বেবিচক সূত্রে জানা যায়