শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত, পাইলট নিহত

ডেক্স রিপোর্ট : চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণের সময় বিমানবাহিনীর একটি বিমানে আগুন ধরে কর্ণফুলী নদীতে বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে এক পাইলট নিহত ও আরেকজন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পতেঙ্গা থানার বোট ক্লাব ও পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালসংলগ্ন কর্ণফুলী নদীর মোহনায় এইচএম স্টিল মিল প্রান্তে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত পাইলটের নাম আসিম জাওয়াদ। তিনি স্কোয়াড্রন লিডার পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছিলেন। আসিম জাওয়াদের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায়। তিনি ড. আমানুল্লাহ ও নীলুফা আক্তার দম্পতির ছেলে। ২০১১ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন তিনি। এদিকে জহুরুল হক ঘাঁটি মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিমানের পাইলট ও উইং কমান্ডার সোহান।

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়ায় তৈরি বিমানটি সকাল ১০টা ২০ মিনিটের কিছু পর জহুরুল হক বিমান ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে। কিছুক্ষণ পরই পেছনের অংশে আগুন ধরে যায়। এরপর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের বিপরীতে কর্ণফুলী নদীতে পড়ে যায়। দুজন পাইলট আগেই প্যারাসুট নিয়ে বিমান থেকে বের হন। তারাও নদীতে পড়েন। এ সময় আশপাশে থাকা স্থানীয় লোকজন ইঞ্জিনিচালিত নৌকা নিয়ে গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।

প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে বন্দরের টাগ বোট ও অ্যাম্বুলেন্স শিপ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। এরপর ছুটে যান বিমানবাহিনী, নৌ, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। দুই পাইলটকে উদ্ধার করে বিএনএস পতেঙ্গা হাসপাতালে (বিএনএস ঈসা খাঁ) ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কো-পাইলট ও স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ মারা যান। ঘটনার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই রুট দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখে। ১ ঘণ্টা পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বিমান বিধ্বস্তের পর ধ্বংসাবশেষের অবস্থান শনাক্ত করতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ হাইড্রোগ্রাফি জরিপ জাহাজ পাঠিয়েছে। তল্লাশি ও উদ্ধারের জন্য কোস্টগার্ডকে কল করা হয়। ঘটনাস্থলে রয়েছেন নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ড ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। বিভিন্ন সংস্থা জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করতে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযান চলছিল। তবে কোনো ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার হয়নি।

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিমানবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবস্থান করছেন। যে স্থানে প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেই স্থানটি জাহাজের বয়া দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। উদ্ধারকারী জাহাজ দিয়ে বিমানের ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
স্থানীয়দের ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানটি আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় পেছনের অংশে আগুন ধরে যায়। এর পরপরই দুই পাইলট প্যারাসুট নিয়ে ঝাঁপ দেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে উড়োজাহাজটিতে। এটি নদীতে পড়ে গভীরে তলিয়ে যায়।

ঘটনাস্থলে পাশে থাকা বেসরকারি জাহাজে কর্মরত নাবিক কামাল হোসেন বলেন, বিমানটি আকাশে উড্ডয়নের পরপরই পেছনের অংশে আগুন ধরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে একটি চক্কর দিয়ে জহুরুল হক ঘাঁটির দিকে চলে যায়। ঘাঁটিতে নামতে না পেরে আবার নদীর মাঝামাঝি মাঝ আকাশে চলে আসে। তখন বিকট শব্দ হয়। গ্রিন বয়া এলাকায় দুই টুকরো হয়ে বিমানটি নদীতে ডুবে যায়। দুজন পাইলট প্যারাসুট দিয়ে জাম্প দেন। পরে নদীতে পড়ে যান। ১১ নম্বর ঘাটের সাম্পানওয়ালারা তাদের ইঞ্জিনচালিত বোট নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় দুই পাইলটকে উদ্ধার করেন। এ সময় এক পাইলটের নাকে-মুখে ফেনা বের হতে দেখা যায়।
পরে বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা এসে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনাস্থলের পাশে থাকা জরিপকারী জাহাজ ‘এমটি জুবিলি দোয়া’ জাহাজের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, হঠাৎ একটা বিকট শব্দ হয়। দেখি, একটা বিমানের পেছনের অংশে আগুন লেগেছে। এ সময় বিমানের দুপাশ থেকে দুজন প্যারাসুট নিয়ে ঝাঁপ দেন। বিমান থেকে যে দুজন পানিতে পড়েন, তারা ৫-৭ মিনিট পানিতে ছিলেন। তারপর নদীর দুই পার থেকে দুটা ইঞ্জিন বোট দ্রুত এগিয়ে যায়। দুজনের মধ্যে একজনের মুখ থেকে পানি বের হতে দেখা যায়। উনার অবস্থা খারাপ ছিল।’

নিহত যাওয়াদ ছিলেন ‘সোর্ড অব অনার’ বিজয়ী : নিহত স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ ছিলেন তুখোড় মেধাবী ও চৌকশ কর্মকর্তা। তিনি ‘সোর্ড অব অনার’ বিজয়ী বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর গর্বিত কর্মকর্তা। ছাত্র জীবনেও ছিলেন মেধাবী। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে কমিশন লাভ করেন। তিনি পিটি-৬, এল-৩৯ জেডএ, এফ-৭ এমবি, এফ-বিজি-১ মডেলের বিমান চালনায় বিশেষভাবে পারদর্শী ছিলেন।

আইএসপিআর জানিয়েছে, পাইলট আসিম জাওয়াদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নানও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। দুর্ঘটনায় পতিত বিমানটিকে উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আইএসপিআর আরও জানায়, বিমানটিতে আগুন ধরে যাওয়ার পর বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে বৈমানিকদ্বয় অত্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে বিমানটিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন।

রক্ষা পেল এমভি তাজউদ্দিন : কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ৫-১০ সেকেন্ডের জন্য রক্ষা পেয়েছে এমভি তাজউদ্দিন নামের একটি জাহাজ। জাহাজটি ঘটনাস্থল অতিক্রম করার পরপরই প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি এমভি তাজউদ্দিন জাহাজটির ওপর আছড়ে পড়লে ওই জাহাজেও আগুন ধরে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত।

১১ ঘণ্টার অভিযানে ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার : বঙ্গোপসাগরের মোহনায় কর্ণফুলীতে বিধ্বস্ত বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ১১ ঘণ্টার অভিযানে নৌ বাহিনীর উদ্ধারকারী জাহাজ ‘বলবান’ বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে এটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।