বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
শাহজালাল বিমানবন্দর : সিএএবি- বিমানের অপরাধে জড়িত সন্দেহভাজন ৮৮৫ জনের শরীরে বসছে সিসি ক্যামেরা , আজাদ-তোফায়েল-জিন্নাহ-মিজান-সুমন- আমিরসহ অনেকে সন্দেহভাজন তালিকায়

একুশে বার্তা রিপোর্ট : শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দকে অপরাধমুক্ত করতে সিএএবি ও বিমানের সন্দেহভাজন ৮৮৫ জন কর্মচারিরর শরীরে বসছে ডিউটিকালিন সিসি ক্যামেরা্। এ নিয়ে বিমানবন্দরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এদেরকে বিমানবন্দরে সরিয়ে দেবার জন্য  প্রধানমন্ত্রীর কার্যাললেযরর চিঠি জারির  পরও গত ৫ বছর পর্যন্ত আগলে রাখা হয়েছে। এরা মানব পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বলে বিভিন্ন সময়ে গোয়েন্দা রিপোর্টে ওঠে এসেছে। কিন্ত কর্তৃপক্ষ এরপরও এদের ব্যাপারে নীরব।  এরা প্রত্যেকেই একাধিক বাড়ি-গাড়িসহ বহু বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছে।

এদের অপরাধ তৎপরতা ঠেকাতে শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দরের কর্মচারীদের নতুন আমলনামা তৈরি করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। ইতিমধ্যে গোপন একটি প্রতিবেদনও তৈরি করেছে বেবিচক। কর্মচারীদের অপরাধ রুখতে তাদের শরীরে ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

কর্মচারীরা যখন ডিউটিতে যাবেন তখন তাদের বুকে ক্যামেরা বসানো হবে। আপাতত ৮৮৫ কর্মচারীর জন্য ক্যামেরা কেনা হচ্ছে। সোনা ও ডলার পাচার, লাগেজ কাটা, যাত্রী হয়রানি, মানব পাচারে সহায়তা প্রভৃতি অপরাধের অভিযোগ রয়েছে কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে জাপান থেকে একশ ক্যামেরা এনেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। ক্যামেরাগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা হবে। এখন পুলিশ সার্জেন্টরা বুকে ক্যামেরা বসিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। সেদিকেই যাচ্ছে বিমান ও বেবিচক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শাহজালালসহ বিমানবন্দরগুলোতে অপরাধমূলক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণের নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কয়েক মাস ধরে সিভিল অ্যাভিয়েশন ও বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল সংগ্রহ করা হয়েছে। বিমান ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার অপরাধী কার্যক্রম ঠেকাতে নতুন পরিকল্পনা করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। তারা বেবিচকের অপরাধী সিন্ডিকেটকে ভাঙতে চাচ্ছে।

সূত্র  জানায়, এজন্য বিমানবন্দরে যারা মানব পাচার ও অন্যান্য অপরাধে জড়িত তাদের তালিকা করা হয়েছে। তালিকায় যাদের নাম এসেছে তাদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। গত ১৫ অক্টোবর রাতে সিঙ্গাপুর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে করে ঢাকায় আসা ফখর উদ্দিন ও শিশির সরকার নামে দুই প্রবাসীর লাগেজ থেকে ৭ লাখ টাকার সোনা ও মোবাইল চুরি যাওয়ার ঘটনা ঘটে। চুরির ঘটনার পর বিমানবন্দরে ভুক্তভোগীদের গড়াগড়ি করে কান্নার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেও কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি বিমান কর্তৃপক্ষ। এর আগেও বিমানবন্দরে লাগেজ থেকে যাত্রীদের মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়েছে একাধিকবার। জড়িতদের অল্পসংখ্যককে ধরা সম্ভব হলেও বেশিরভাগ থেকে যাচ্ছে অধরা। এ কারণেই কর্মচারীদের জন্য ক্যামেরা আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে সিভিল অ্যাভিয়েশন ও বিমানের ঊর্ধ্বতনরা কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, কর্মচারীরা যখন দায়িত্ব পালন করবেন তখন তাদের অপরাধ রুখতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হবে। পুলিশের সার্জেন্টদের মতোই তাদের শরীরে ছোট ক্যামেরা বসিয়ে দেওয়া হবে। এজন্য বাজেট হয়েছে। তবে বাজেটের বিষয়ে বেবিচক ও বিমান কর্মকর্তারা কিছুু জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এরই মধ্যে জাপান থেকে একশ ক্যামেরা আনা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে বিমানের কর্মচারীদের ক্যামেরা দেওয়া হবে। বেবিচকের সন্দেহভাজন কর্মচারীদেরও ক্যামেরা দেওয়া হবে। যদিও বেবিচক এখনো ক্যামেরা কেনেনি। আপাতত ৮৮৫ জন কর্মচারীর জন্য ক্যামেরা আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বেবিচক ও বিমানের সদর দপ্তর ক্যামেরাগুলো মনিটরিং করবে। বেবিচকের কর্মচারীদের বিষয়ে একটি গোপন প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিমান ও বেবিচকের অসাধু কর্মচারীরা বিমানবন্দরগুলোতে নানা অপরাধে জড়িত। এ কারণেই তারা কিছু কৌশল নিয়েছেন। তাদের জন্য জাপান থেকে একশ ক্যামেরা আনা হয়েছে। ডিউটিরত কর্মচারীদের বুকের এ ক্যামেরা বসানো হবে। দায়িত্ব পালনকালে ক্যামেরা বন্ধ করার সুযোগ থাকবে না। ক্যামেরার মান খুব ভালো। ক্যামেরা চালুর পর কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তাদের কর্মকান্ড- রেকর্ড হতে থাকবে।

তিনি বলেন, বেবিচকও একই ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। বেবিচক ও বিমানের আট শতাধিক কর্মচারীকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নেওয়া হবে। ক্যামেরা বসানোর পর তারা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে সবই দেখা যাবে।

সুপারভাইজার জিন্নাহ, অপারেটর ফজলুর রহমান ওরফে ফজলু ও শাহাদাৎ হোসেন, ফায়ার অপারেটর মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, সিকিউরিটি জিল্লুর, ফায়ার অপারেটর মিজানুর রহমান খান, সিকিউরিটি বাবুল চন্দ্র দাস, গাজী তোফায়েল, হাজি আজাদ, তানভীর হোসেন মিয়া, সোহেল রানা, কাজী মাসুদ, অ্যাম্বুরগেশন সি-কালেক্টর আবদুল মতিন, সিকিউরিটি ইদ্রিস মোল্লা, শাখাওয়াত হোসেন তুহিন ও রফিকুল ইসলাম, ফায়ার অপারেটর ফরিদ উদ্দিন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সুপারভাইজার সুমন চন্দ্র দাস, ট্রাফিক হেলপার আমির হোসেন, মো. আকরাম হোসেন, ট্রাফিক অফিসার মামুন, কাউন্টার সুপারভাইজার শাকিল ও জাহাঙ্গীর হোসেন, গ্রাউন্ড সার্ভিস অফিসার শওকত, মাহবুব হোসেন ওরফে মাহবুব ও আনিসুর রহমান ওরফে আনিসসহ অনেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী  বলেন, ‘সব বিমানবন্দর দুর্নীতিমুক্ত করতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কোনো বিমানবন্দরে অপরাধমূলক কর্মকা- করতে দেওয়া হবে না। বেবিচক বা বিমানের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের কোনো ছাড় নয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করার চেষ্টা চলছে। যারা অপরাধে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানান, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। বেবিচকের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সন্দেহভাজন কর্মচারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম জানান, ‘বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপরাধ রুখতে আমরা চেষ্টা করছি। কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন আমরা নতুন কিছু কৌশল হাতে নিয়েছি। বিমানকর্মীরা উিউটিতে গেলে তাদের ক্যামেরা ব্যবহার করতে হবে। ক্যামেরা বন্ধ করা যাবে না। ক্যামেরা দিয়ে তাদের কর্মকান্ড মনিটরিং করা হবে।’

বেবিচকের এক কর্মকর্তা জানান, ‘বেবিচক ও বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রোফাইল সংগ্রহ করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী নানা অপরাধে জড়িত। তারা সোনা ও মানব পাচারের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। সন্ত্রাসীদের সঙ্গেও মেলামেশা করে কেউ কেউ। ক্যামেরা বসানো হলে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কন্ট্রোাল টাওয়ার থেকে এসব ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কেউ ক্যামেরা বন্ধ করতে পারবে না। দপ্তরে বসেই তাদের কর্মকান্ড দেখা যাবে।’

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।