শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
ঘন কুয়াশায় বিমান , সড়ক ও নৌ যোগাযোগ বিঘ্নিত শাহজালালসহ সব বিমানবন্দরে ৮-১০ ঘণ্টা ফ্লাইট চলাচল বন্ধ: ঢাকায় নামতে না পেরে অন্য দেশে অবতরণ : ভেঙে পড়েছে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা কার্যক্রম : এ অবস্থা আরও দু’দিন থাকতে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশে বিমান ,সড়ক ও নৌ যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়ে পড়েছে। শাহজালালসহ দেশের সব আন্তর্জাতিক ও আভ্যন্তরীন বিমানবন্দরের ফ্লাইট সিডিউল লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে। ৮-১০ ঘন্টা বিলম্ব হচ্ছে প্রতিটি ফ্লাইট সিডিউল। বাংলাদেশের আকাশে বিমান অবতরন করতে না পেরে অন্য দেশের  মাটিতে বিমান অবতরন করছে। ২০ ডিসেম্বর  বুধবারও অভ্যন্তরীণসহ আন্তর্জাতিক রুটের অনেক ফ্লাইট বিলম্বে ছেড়ে গেছে। এতে করে যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

আটকে পড়া ফ্লাইটগুলোর কারণে  বিমানবন্দরে জট দেখা দেয়। দুপুরের পর একে একে ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণ শুরু হলে প্রায় অচল হয়ে পড়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা কার্যক্রম।

১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাত থেকে দেশের সড়ক ও নৌ যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়। দেশের প্রধান দুই ফেরি যোগাযোগ কেন্দ্র মাওয়া থেকে শিমুলিয়া-কাঠালিয়া রুটে ৯ ঘণ্টা এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে সাড়ে ৪ ঘণ্টা ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখতে হয়েছে। এ অবস্থা আরও দু’দিন থাকতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে আভাস দেয়া হয়েছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২০ ডিসেম্বর  বুধবার ভোররাত থেকে ৮ ঘণ্টা ফ্লাইট অবতরণ ও উড্ডয়ন বন্ধ ছিল। দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরেও ১০ ঘণ্টার বেশি ফ্লাইট চলাচল ছিল বন্ধ।

এতে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে দেশি-বিদেশি সবগুলো এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সিডিউল। চরম ভোগান্তির মুখে পড়েন যাত্রীরা। ফ্লাইটের জন্য যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে হয়েছে।

যাত্রীদের স্বাগত ও বিদায় জানাতে আসা দর্শনার্থীদেরও বিমানবন্দরে মানবেতর সময় কাটাতে দেখা গেছে। ২০ ডিসেম্বর  বুধবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, দুই টার্মিনালের সামনে হাজার হাজার দর্শনার্থী অপেক্ষা করছেন।

সকাল ১১টার পর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরের কুয়াশা কিছুটা কাটতে শুরু করলেও অন্যান্য বিমানবন্দরে কুয়াশা কেটেছে দুপুর ১২টার পর। এরপর ধীরে ধীরে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়।

বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার ইকবাল করিম বলেন, কুয়াশার কারণে বেশ কয়েক ঘণ্টা বিমান চলাচল বন্ধ ছিল। তবে সকাল ১০টা থেকে অবতরণ চালু হয়েছে। ১১টা পর্যন্ত পাঁচটি ফ্লাইট অবতরণ করেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

বিমানবন্দরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী শাহজালালে ফ্লাইট ওঠানাম বন্ধের কয়েক ঘণ্টায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটের অন্তত ২০টি ফ্লাইট অবতরণের সময় নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে অন্তত ছয়টি ফ্লাইট ঢাকায় নামতে না পেরে অন্য বিমানবন্দরে চলে যায় বলে সিএএবির এক  অফিসার  জানান।

রাত সোয়া ১২টায় থাই এয়ারের একটি ফ্লাইট শাহজালালে নামতে না পেরে ব্যাংককে চলে যায়। রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ঢাকায় নামতে না পেরে কলকাতায় অবতরণ করে।

চীনা একটি কার্গো বিমান রাত ১২টা ৫০ মিনিটে ঢাকায় নামতে না পেরে চলে যায় মান্দালয়ে। গালফ এয়ারের একটি ফ্লাইট ভোর ৪টায় ঢাকায় নামতে না পেরে কলকাতা চলে যায়।

ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইট ঢাকার বদলে চট্টগ্রামে অবতরণ করে। এছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, চায়না সাউদার্ন, এমিরেটস, মালিন্দো এয়ার, কুয়েত এয়ার ও এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটও নির্ধারিত সময়ে ঢাকা ছাড়তে পারেনি।

বাংলাদেশ সফররত তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিমকে নিয়ে একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হয়। বেলা ১১টার দিকে ফ্লাইট ওঠানামা স্বাভাবিক হয়ে আসে। তবে দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরের ফ্লাইট ওঠানামা স্বাভাবিক হতে আরও সময় লেগেছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার শাকিল মেরাজ বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে বিমানের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদেশি এয়ারলাইন্সও সমস্যায় পড়ে।

বিমানের বিজি ০৩৯ ফ্লাইটটি রাত সোয়া ১টায় রিয়াদের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও কুয়াশায় যাত্রা বিলম্বিত হওয়ায় তা ছেড়ে যায় বেলা সাড়ে ১১টার পর।

কলকাতা থেকে বিজি ০৯৬ ফ্লাইটটি সকাল সাড়ে ১০টায় শাহজালালে পৌঁছানোর কথা থাকলেও সেটি বিলম্বিত হয়। বিমানের বিজি ৪১১ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা পর, সকাল সাড়ে ৯টায়।

ঢাকা থেকে কক্সবাজারের বিজি ৪৩৩ ফ্লাইটটিও সকাল সাড়ে ৮টার বদলে দুই ঘণ্টা পর যাত্রা করে। এছাড়া কুয়ালামপুর থেকে সকালে ঢাকায় আসা বিজি ০৮৭ ফ্লাইটের পাইলটকেও কুয়াশায় কারণে দীর্ঘ সময় আকাশে চক্কর দিয়ে সময় কাটাতে হয়েছে।

কুয়াশার কারণে শাহজালালে উড়োজাহাজ ওঠানামা বিঘ্নিত হচ্ছে গত কয়েকদিন ধরেই। গত শুক্রবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত  বিভিন্ন গন্তব্য থেকে আসা অন্তত ২৫টি ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে ঢাকায় অবতরণ করতে পারেনি।

এর আগে মঙ্গলবারও কুয়াশার কারণে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল বিঘ্ন হয়। ওইদিনও বিভিন্ন গন্তব্য থেকে আসা ১০টি ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে অবতরণ করতে পারেনি। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অবতরণ শুরু হয়।

বিশ্বের বিমানবন্দরগুলোর ফ্লাইট সূচি পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইট ফ্লাইট স্ট্যাটস ডটকম বলছে, ডিলেইড ফ্লাইটগুলোর মধ্যে হংকংগামী বিসমিল্লাহ এয়ারলাইন্স এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট, হংকংগামী ক্যাথে পেসিফিক এক ঘণ্টা, চীনের গুয়াঞ্জুগামী চায়না সাউদার্নের ফ্লাইট ৪ ঘণ্টা, এমিরেটসের দুবাইগামী ফ্লাইট দেড় ঘণ্টা, জাপান এয়ারলাইন্সের ব্যাংককগামী ফ্লাইট ৫০ মিনিট, হংকংগামী ক্যাথে ড্রাগনের ফ্লাইট এক ঘণ্টা, কুয়েত এয়ারওয়েজের কুয়েতগামী ফ্লাইট এক ঘণ্টা ১৫ মিনিট, জেদ্দাগামী এয়ার এরাবিয়ার ফ্লাইট দেড় ঘণ্টা, দিলি্লগামী এয়ার ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ফ্লাইট আড়াই ঘণ্টা, কক্সবাজারগামী রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ফ্লাইট ছেড়েছে নির্ধারিত সময়ের ৯০ মিনিট পর। বাকি ফ্লাইটগুলোও কমপক্ষে ৩০ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে ছেড়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের (বিএমডি) কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের শেষার্ধে বা পেৌষের প্রথম সপ্তাহে এমন শীত ও কুয়াশা স্বাভাবিক।

বরং পেৌষ যত সামনে গড়াবে, শীত ও কুয়াশার প্রকোপ তত বাড়তে থাকবে। তবে এখন যে কুয়াশা পড়ছে তার কারণ হচ্ছে ধরণী ঠাণ্ডা হতে পারছে না।

আরব সাগর থেকে বাংলাদেশের আকাশে মেঘ এসে জমা হয়েছে। এ কারণে দিনে সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারছে না। এর ফলে রাতে যে কুয়াশা পড়ছে, সেটা কেটে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে না।

১৮ ডিসেম্বর থেকে এমন পরিস্থিতি চলছে। এটি আরও দু’দিন থাকতে পারে। এজন্য তিনি যানবাহন চলাচলে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।