শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
সিভিল এভিয়েশন : কারিগরি পরিদর্শনে সরকারের অতিরিক্ত সচিব, সদস্য (প্রশাসন) : এবার যাচ্ছেন ইউকেতে : কারিগরি পরিদর্শনের নামে সৌদিতে দম্পতির ওমরা হজ্ব !

বিশেষ সংবাদদাতা : সিভিল এভিয়েশন থেকে দুই দুইবার বদলি পরও তিনি সিভিল এভিয়েশন ছেড়ে না গিয়ে বরাবরের ন্যায় এবারও তিনি প্রশাসনের লোক হয়ে সদস্য (প্রশাসন) , সরকারের অতিরিক্ত সচিব মো. হেমায়েত হোসেন কারিগরি পরিদর্শনে যাচ্ছেন ইউকেতে। য়শোহর বিমানবন্দরের রানওয়ের লাইটিং সাপ্লাই এন্ড ইন্সটলেশন ১ কোটি ২৯ লক্ষ টাকার একটি ঠিকাদারি কাজের ‘ফ্যাট’-এর কারিগরি পরিদর্শনে ইংল্যান্ড এটিজি কোম্পানির আমন্ত্রণে ৩ দিনের সফরে তিনি লন্ডন যাচ্ছেন। সাথে যাবেন সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার রাসেল এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারি আবুল কালাম আজাদ, সহকারি প্রকৌশলী (ইএম) আছালত হোসেন খান, নির্বাহী প্রকৌশলী (ইএম) জাকারিয়া। ৪ ডিসেম্বর ফ্যাট-এর টিমের সদস্যদের কারিগরি পরিদর্শনে লন্ডন যাওয়ার সিডিউল থাকলেও ঠিকাদার টিকিট না কাটতে না পারার কারণে এবং এটিজির তারিখ পরিবর্তন করায় তারা আগামি ১০ ডিসেম্বর যাবেন বলে ঠিকাদার আজাদ জানান। এর আগে সরকারের ওই অতিরিক্ত সচিব সিএএবির আরেকটি ঠিকাদারি কাজের ফ্যাটে স্বস্ত্রীক সৌদি আরবে যান। সেখানে তিনি ওমরা হজ্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ফ্যাটে স্পেনে যান। এরই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি লন্ডন যাচ্ছেন।
সিএএবি সূত্রে জানা যায়, সিএএবিতে কর্মরত জনবল বিভিন্ন সময়ে বিদেশে প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন সেমিনারে বিদেশে গমন, ঠিকাদারি কাজের ফ্যাটের কারিগরি পরিদর্শনের জন্য নাম প্রস্তাব করে চেয়ারম্যান কর্তৃক গঠিত কমিটি বরাবর পাঠানো হয়। কমিটির সদস্য প্রশাসনের পরিচালক হবার সুবাধে সদস্য (প্রশাসন)-এর হস্তক্ষেপে পছন্দমতো লোককে তালিকাভুক্ত করা হয় , কখনো কখনো কারো নাম কেটে সদস্য (প্রশাসন) তার নিজের নাম তালিকায় বসিয়ে ফ্যাট পরিদর্শনে যান। ইতিপূর্বে অডিট শাখার ডিডি শাহিনাকেও ফ্যাটে অস্ট্রেলিয়া যাবার নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। গতবছর সরকারের আরেক অতিরিক্ত সচিব যিনি বিমান মন্ত্রণলয়ে কর্মরত ছিলেন তাকেও কক্সবাজার বিমানবন্দরের ‘ফ্যাল্টে’ অস্ট্রেলিয়া পাঠানো হয়।
সূত্র জানায়, ফ্যাটে বা বিভিন্ন প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে জনবল পাঠানেরা জন্য জনপ্রতি খরচ হয় সরকারের প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো। আর এ বাবদ সরকারের বছর বছর কোটি কোটি টাকা খরচ হয়ে থাকে। কিন্ত সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও তা কাজের কাজ হয় না। কারিগরি কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়- এমন জনবল ফ্যাট পরিদর্শনের জন্য বিদেশে পাঠানো বাবদ সরকারের টাকা খরচ প্রায় ষোলআনাই বৃথা যায়।

কক্সবাজার বিমানবন্দর : ‘ফ্যাল্ট’ ভ্রমণের নামে সরকারি টাকায় প্রমোদভ্রমণ ! : মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের ফ্যাল্ট পরিদর্শনে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ:

বিশেষ সংবাদদাতা : বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনে সরকারি টাকায় বিদেশে প্রমোদভ্রমণের মহড়া শুরু হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে সিভিল এভিয়েশনের কারিগরি কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট নন- এমন কর্তাব্যক্তিরাও প্রায় সারাবছরই বিদেশে প্রমোদভ্রমণে যাচ্ছেন। এতে করে জনপ্রতি একেক জনের পিছনে সরকারি খরচ হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মতো। এ টাকা সিভিল এভিয়েশন বহন করছে। সিভিল এভিয়েশনে সদ্য যোগদানকৃত চেয়ারম্যানের আমলেই এ প্রমোদভ্রমণের মহড়া শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিমানবন্দরের উন্নয়ন তথা ঠিকাদারি কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীকে পাত্তাই দেয়া হচ্ছে না। কারিগরি কাজের স্বার্থে বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজের জন্য মালামাল বিদেশ থেকে আমদানি করার আগে পরিক্ষা-নীরিক্ষা ও কারিগারি যাচাই করার জন্য দক্ষ ও অভিঙ্ঘ যে সব প্রকৌশলীর নামের তালিকা প্রস্তাবাকারে প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে চেয়ারম্যানের দপ্তরে পাঠানো হচ্ছে- সেই নামের তালিকার প্রস্তাব চেয়ারম্যান কর্তৃক গঠিত কমিটি কেটে-ছেটে নন টেকনিক্যাল অর্থাৎ কারিগরি কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট নন- এমন কর্তাব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। এ তালিকায় ডিডি (অডিট) শাহিনার নামও প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সিএএবির চেয়ারম্যান কমিটি কর্তৃক প্রস্তাবিত নামের তালিকায় সই করে এই অবৈধ কাজের অনুমোদন করছেন। এতে করে নন টেকনিক্যাল অর্থাৎ কারিগরি কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট না- এমন কর্তব্যক্তিদের বিদেশে কারিগরি যাচাই ও ট্রেনিংয়ে পাঠানোর ফলে একদিকে যেমন সরকারি টাকায় প্রমোদভ্রমণ হচ্ছে অন্যদিকে বিভিন্ন বিমানবন্দরের উন্নয়নমুলক কাজে নি¤œমানের মালামাল বিদেশ থেকে আমদানি করে ঠিকাদারি কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। ফলে শাহজালাল, কক্সবাজার বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বিমানবন্দর হুমকির মধ্যে পতিত হচ্ছে। নি¤œমানের মালামাল দিয়ে বিমানবন্দরের রানওয়ের ঢালাইকরনসহ অন্যান্য কাজ করার দরুন যেকোন সময়ে রানওয়েতে ভয়াবহ দূর্ঘটনার আশংকা রয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষ্ঙরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিভিল এভিয়েশনের অধীন বিভিন্ন বিমানবন্দরের উন্নয়নমুলক কাজের জন্য ‘ফ্যাট’ বা ফ্যাক্টরি এক্সসেপ্টটেন্স টেস্ট ইকুইপমেন্ট ম্যাটারিয়াল আমদানি করার আগে তা কারিগরি যাচাই, পণ্যের গুণগত মান ইত্যাকার পরীক্ষার জন্য সিএিএবির প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে দক্ষ ও অভিঙ্ঘ প্রকৌশলীদের সিএএবির খরচে বিদেশ পাঠানোর নিয়ম দীর্ঘদিন যাবত চলে আসছে। কিন্ত সিএএবিতে সদ্য যোগদানকৃত চেয়ারম্যান এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে পরিচালক ( প্রশাসন) কে প্রধান করে এক কমিটি গঠন করেছেন। ‘ফ্যাট’ কাজের জন্য প্রধান প্রকৌশলীর নামের তালিকা কাটছাট করে প্রশাসন বিভাগের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির প্রস্তাবিত তালিকায় ওঠে আসায় নন টেকনিক্যাল কর্তাব্যক্তিরাই কারিগরি যাচাইয়ের জন্য বিদেশে পাঠানোর রেওয়াজ চালু হয়েছে। এর ফলে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের কাজের জন্য কোরিয়া থেকে বিটুমিন পরিক্ষার জন্য কক্সবাজার প্রজেক্টের পিডি আমিনুল হাসিবের নাম কারিগরি যাচাইয়ের জন্য কোরিয়ায় পাঠানোর প্রস্তাব করে প্রধান প্রকৌশলী চেয়ারম্যান দপ্তরে পাঠানোর পরেও তার নাম ( আমিনুল হাসিব) কর্তন করে প্রকৌশলী শহিদুল আফরোজের নাম প্রস্তাব করেছে চেয়ারম্যান কর্তৃক গঠিত কমিটি। কক্সবাজার বিমানবন্দরে প্রজেক্টের জন্য সিংগাপুরে বিটুমিন (রানওয়ের কাজে ব্যবহৃত) পরিক্ষার জন্য এ কাজের সাথে টোটালই সংশ্লিষ্ট নন- ডিডি ( অডিট) শাহিনাকে সিংগাপুরে পাঠানোর প্রস্তাব করেছে চেয়ারম্যান কর্তৃক গঠিত কমিটি। আবার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের জয়েন ফিলিং পন্য পরিক্ষার জন্য চায়না/ সিংগাপুর পাঠানোর জন্য প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের নাম প্রস্তাব করে প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে চেয়ারম্যান দপ্তরে পাঠানো হলেও তা কাটছাট করে চেয়ারম্যান কর্তৃক গঠিত কমিটি প্রকৌশলী একেএম মাকসুদুল ইসলামের নাম তালিকাবদ্ধ করেছে। আবার শাহজালাল বিমানবন্দরের আরেকটি কারিগরি কাজের পরিক্ষার জন্য প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে প্রকৌশলী একেএম মাকসুদুল ইসলামের নাম পাঠানো হলেও তা কেটে এ কাজের সাথে সংশিশ্লষ্ট নন- সদর দপ্তরে ডিজাইনে কর্মরত প্রকৌশলী শরিফুল ইসলামের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ ভাবেই নন টেকনিক্যাল লোকদের সুইডেন/ ইউরোপে প্রশাসন বিভাগের লোকদের পাঠানো হচ্ছে। ট্রেনিংয়ের নামে/ পণ্যের কারিগরি যাচাইয়ের নামে চেয়ারম্যান কর্তৃক গঠিত কমিটি সুবিধা হাতিয়ে নিয়ে কর্তাব্যক্তিদের বিদেশ পাঠানোর নামে সরকারি লাখ লাখ টাকা খরচ করছে।
এ ব্যাপারে প্রকৌশল বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষ ও অভিঙ্ঘ প্রকৌশলীদের বসিয়ে রেখে অদক্ষ ও নন টেকনিক্যাল অর্থাৎ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট নন – এমন ব্যক্তিদের কারিগরি যাচাইয়ের জন্য বিদেশে পাঠিয়ে একদিকে যেমন সরকারি লাখ লাখ টাকার অপচয় করা হচ্ছে অন্যদিকে সিএএবির প্রকৌশল বিভাগকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সংস্থার চেয়ারম্যান এ অবৈধ কাজের বৈধতা দিচ্ছেন। কারন এসব ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান অনুমোদন দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সংস্থার প্রধান প্রকৌশলীর সুপারিশ আমলেই নেয়া হচ্ছে না। কারিগরি ঙ্ঘান নাই এমন ব্যক্তিরাই কারিগরি পরিদর্শনে বিদেশ যাচ্ছে। আগে অন্য কোন চেয়ারম্যানের আমলেই এমন কাজ হতো না- বর্তমান চেয়ারম্যান প্রশাসন থেকে কমিটি করে দেয়ার এমনটি হচ্ছে। এর ফলে কোয়ালিটি সম্পন্ন পন্য বিদেশ থেকে আসছে না। নি¤œমানের আমদানি করা পন্য দিয়ে বিমানবন্দরের রানওয়ের ঢালাইকরন কাজ করা হচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনার ঝুকি থেকেই যাচ্ছে। প্রকৌশল বিভাগকে অকর্মন্য করে রাখা হয়েছে, প্রধান প্রকৌশলীকে পাত্তাই দেয়া হচ্ছে না , মনে হয় প্রধান প্রকৌশলীর কোন দরকার নাই সিভিল এভিয়েশনে।
নন টেকনিক্যাল, প্রশাসন, অডিট বিভাগের লোকদের বিমানবন্দরের উন্নয়নমুলক কাজের ম্যাটারিয়াল পরিক্ষার জন্য/ট্রেনিংয়ের জন্য বিদেশে পাঠানোর নামে এই অবৈধ কাজের বৈধতা দিয়ে চেয়ারম্যান বিতর্কিত কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট হচ্ছেন। এতে চেয়ারম্যানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কারিগরি যাচাই : সিভিল এভিয়েশনের অধীন কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রজেক্টে ‘ফেল্টের’ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর তার কারিগরি যাচাইয়ের জন্য সিএএবির প্রায় কোটি টাকা খরচ করে ৫ কর্মকর্তাকে গত বছর অস্ট্রেলিয়া পাঠানো হয়। এই ৫ সদসস্যের টিমের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত এক সচিবের নাম রয়েছে।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।