শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০২:২৬ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
টাঙ্গাইলের ১২ মাদ্রাসায় শহীদ মিনার স্থাপন : ১ হাজার ৮৮২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই

 সংবাদদাতা : মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের যেমন বীরত্বগাথা ইতিহাস রয়েছে, তেমনি গৌরবময় ভূমিকা রয়েছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও। জেলার অনেক বীরসন্তান ভাষা আন্দোলনে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের মধ্যে সর্বাগ্রে উচ্চারিত হয় মরহুম মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হকের নাম। এ ছাড়া প্রয়াত আবদুল মান্নান, ড. মফিজউদ্দিন আহমদ, বেগম ফজিলাতুন্নেছা, সোফিয়া খান, সাইয়িদ আতিকুল্লাহ ও আবদুস সালামের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। সেই টাঙ্গাইল জেলার ২ হাজার ৫৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১ হাজার ৮৮২টিতেই নেই ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিস্মারক শহীদ মিনার। সে হিসেবে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নেই শহীদ মিনার।
তবে শুভ দিক হলো সম্প্রতি মাদ্রাসাগুলোয়ও শহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে। টাঙ্গাইলের ৬ উপজেলার ১২টি মাদ্রাসায় শহীদ মিনার রয়েছে। সেগুলোয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কর্মসূচি পালন করা হয়।
ভাষা আন্দোলনের সময় টাঙ্গাইলে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই এখন প্রয়াত। এর মধ্যে রয়েছেন বদিউজ্জামান খান, সৈয়দ আবদুল মতিন, সৈয়দ নুরুল হুদা,
শামসুর রহমান খান শাজাহান, মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল, হাতেম আলী তালুকদার, রমিনুজ্জামান খান রইজ, নারায়ণচন্দ্র বিশ্বাস, ঋষিকেশ পোদ্দার, রোকেয়া রহমান, হেকমত আলী মিয়া, আলী আকবর খান খোকা, নাজনীন আরা রুবি, আবু সাঈদ খান ও হাবিবুর রহমান। ভাষাসৈনিক বুলবুল খান মাহবুব ও হামিদা হক এখনো জীবিত আছেন। ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে হুলিয়া মাথায় নিয়ে তৎকালীন রমেশ হলের কাছে (বর্তমানে সাধারণ পাঠাগারের পশ্চিম পাশ) তারা টাঙ্গাইলে সর্বপ্রথম শহীদ মিনার স্থাপন করেন। বর্তমানে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি মূল শহীদ মিনারের তৃতীয় সংস্করণ।
শুধু টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নয়, বিভিন্ন উপজেলা সদরের শহীদ মিনারগুলোয়ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নিয়মিত নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার ১ হাজার ৬২৩ বিদ্যালয়ের মধ্যে ১ হাজার ৩২৯টিতেই শহীদ মিনার নেই। এর মধ্যে ঘাটাইলের ১৭৩টির মধ্যে ১৪টিতে, সখিপুরের ১৪৭টির মধ্যে ৭৬টিতে, গোপালপুরের ১৫৯টির মধ্যে ৮টিতে, বাসাইলের ৭৯টির মধ্যে ৮টিতে, টাঙ্গাইল সদরের ১৬৪টির মধ্যে ১৭টিতে, দেলদুয়ারের ১০০টির মধ্যে ৮টিতে, মির্জাপুরে ১৭০টির মধ্যে ৪৫টিতে, কালিহাতীর ১৭০টির মধ্যে ৩০টিতে, মধুপুরে ১১০টির মধ্যে ২৮টিতে, নাগরপুরে ১৫৬টির মধ্যে ১৫টিতে, ভূঞাপুরে ১১০টির মধ্যে ২১টিতে এবং ধনবাড়ীর ৮৫টির মধ্যে ২৪টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ বলেন, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দ থাকে না। এর পরও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা জেলায় ১৬১টি বিদ্যালয়ে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু সখিপুর উপজেলাতেই ৭০টি নতুন শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিসের অধীনে ৯৩৮টি হাইস্কুল, কলেজ, কারিগরি ও আলিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫৩টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। অফিস সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল সদরের ১০৪টির মধ্যে ১৭টিতে, বাসাইলের ৪২টির মধ্যে ১৫টিতে, কালিহাতীর ৮৭টির মধ্যে ৫২টিতে, সখিপুরের ১০১টির মধ্যে ২৭টিতে, ঘাটাইলের ১১৫টির মধ্যে ৩৮টিতে, গোপালপুরের ৮৪টির মধ্যে ৪৩টিতে, মধুপুরের ৭৭টির মধ্যে ৩২টিতে, ধনবাড়ীর ৬৬টির মধ্যে ২৬টিতে, মির্জাপুরের ৭৬টির মধ্যে ৫০টিতে, দেলদুয়ারের ৩৮টির মধ্যে ২৩টিতে, নাগরপুরের ৭৭টির মধ্যে ৩৭ টিতে ও ভূঞাপুরের ৭১টির মধ্যে ২৫টিতে মোট ৩৮৫টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম বলেন, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার থাকা জরুরি। শুভ দিক হলো, মাদ্রাসাগুলোতেও সম্প্রতি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে। টাঙ্গাইলের ৬ উপজেলায় ১২টি মাদ্রাসায় শহীদ মিনার রয়েছে।
এ বিষয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক টাঙ্গাইলের কৃতী সন্তান ডা. মির্জা মাজহারুল ইসলাম (৯৩)  বলেন, ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসমৃদ্ধ দেশের অন্যতম স্থান টাঙ্গাইল। এ জেলার ১ হাজার ৮৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন শহীদ মিনার নেই- এ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত লজ্জার ও হতাশাজনক। এতে আমাদের দেশপ্রেম ও বাঙালির চেতনাবোধ প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আইন করে হলেও মাদ্রাসাসহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ বাধ্যতামূলক করা উচিত।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন, শহীদ মিনার আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং বাঙালির চেতনার অংশ। কোমলমতি শিশুসহ শিক্ষার্থীদের মাঝে মাতৃভাষার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য মাদ্রাসাসহ প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকা উচিত। তিনি আরও বলেন, জেলায় এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে শহীদ মিনার নেই, এর সঠিক তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। শহীদ মিনার নির্মাণে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুপ্রাণিত করা হবে; প্রয়োজনে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে স্থানীয় বিত্তবানদেরও।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।