শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩:০৯ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
ঢাকসুতে হামলা হয় যেভাবে

ডেক্স রিপোর্ট : ২২ ডিসেম্বর রোববার বেলা সাড়ে ১২টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু)  ভিপি নুরুল হক নুরসহ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ প্রথম দফা হামলা করে। পরে আরো তিন দফা হামলা হয় বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। হামলায় অন্তত ২৮ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন। এখনো ৫জন মেডিকেলে ভর্তি রয়েছেন। নজিরবিহীন এ হামলার নেতৃত্বে ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন। মামুনকে ইতোমধ্যে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। আর হামলার উস্কানিতে ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।

সনজিত চন্দ্র দাস ডাকসুতে এসে নুরুল হক নুরকে শাসিয়ে যান আগে। যাওয়ার সময় বলেন, ‘আমি কে কিছুক্ষণ পরই বুঝতে পারবি’। এরপরই ডাকসু ভবনের সব লাইট বন্ধ করে দফায় দফায় নুরদের ওপর হামলে পড়ে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। মূলত সনজিত-সাদ্দামের সবুজ সংকেত পেয়েই বেপরোয়া হয়ে ওঠে তাদের অনুসারী নেতাকর্মীরা। হামলার সময় হামলাকারীরা ডাকসু ভবনের কয়েকটি সিসিটিভি ভেঙে ফেলে। এক পর্যায়ে সিসিটিভি না ভেঙে সিসিটিভির ফুটেজ নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হামলার যেন কোন প্রমাণ না থাকে সেজন্য ডাকসুর দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছ থেকে জোর করে ছিনিয়ে নেয়া হয় সিসিটিভির হার্ডডিক্স। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধমে প্রকাশ হওয়া ফুটেজ ও ছবিতে দেখা যায়, অন্তত ২৫জন প্রত্যক্ষভাবে এ হামলায় জড়িত ছিলেন। যাদের সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। হামলায় মারমুখী ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারীরা। এদিকে হামলার পর নিজের ফেসবুক পেইজে বেশ কয়েকটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন সনজিত চন্দ্র দাস। যেখানে তিনি প্রত্যক্ষভাবে হামলাকারীদের সমর্থন দেন। শুধু তাই না হামলার সমালোচনা করায় এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককেও তুলোধুনো করেছেন সনজিত। আর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরাও এ হামলাকে ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে বলেন, একটি গোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে আমাদের বেকায়দায় ফেলার জন্য এ হামলা করেছে। হামলার ঘটনায় গত ২৩ ডিসেম্বর  একটি তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে হামলার বিভিন্ন ফুটেজ ও ছবি পর্যালোচনা করে দেখা যায় অন্তত ২৫জন এ হামলায় জড়িত ছিলেন। তারা হলেন- মুক্তিযুদ্ধ  মঞ্চের সভাপতি  আমিনুল ইসলাম  বুলবুল (ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি), সাধারণ  সম্পাদক আল মামুন (ছাত্রলীগের সাবেক উপ সম্পাদক), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, সাধারণ  সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য,  কর্মী মেহেদী হাসান নিবিড়, ইমরান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন বিন সাত্তার, ফেরদৌস আলম, স্যার এ এফ রহমান  হল সংসদের জিএস রাহিম খান,  মহসিন  হল  সংসদের জিএস  মিজানুর  রহমান  মিজান, সূর্যসেন  হল সংসদের ভিপি মারিয়াম জামান খান সোহান, জিএস সিয়াম রহমান। ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব  হাসান (এফ রহমান হল), শেখ মোহাম্মদ  তুনান, তালাশ ইমরান, শিক্ষা ও পাঠচক্র  সম্পাদক এম ইবনুল হাসান (উচ্ছ্বল), তথ্য ও গবেষণা  সম্পাদক  মাহমুদুল  হাসান  বাবু।

বিজয়  একাত্তর  হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রবিউল হাসান রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ইউনুস, বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক সিফাতুজ্জামান খান,  বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী তপন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ চার দফায় হামলা চালায় ডাকসু ভিপি ও তার অনুসারীদের ওপর। এসময় তারা ডাকসু ভবনের সব লাইট বন্ধ করে দেন। ভাঙচুর করে নুরের কক্ষের আসবাবপত্র। প্রথম দফায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ হামলা চালানোর পর নুরের কক্ষে যান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। এসময় তাদের সঙ্গে তাদের অনুসারীরাও নুরের কক্ষে প্রবেশ করে। সেখানে তারা নুরের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। অন্যদিকে, সনজিত-সাদ্দামের অনুসারীরা নুরের নেতাকর্মীদের ওপর তখনই হামলা শুরু করে। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এক এক করে নুরের কক্ষ থেকে তাদের বের করে বেধড়ক পিটুনী দেয়। অন্যদিকে, সনজিত-সাদ্দামের সঙ্গে নুরের বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে নুর সনজিতকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি কে? আপনি কেন ডাকসুতে?’ তখন সনজিত নুরকে গালি দিয়ে বলেন, ‘আমি কে কিছুক্ষণ পরই বুঝতে পারবি।’ এ ঘটনার পর সনজিত ও সাদ্দাম ডাকসু ভবন থেকে বেরিয়ে যান এবং নেতাকর্মীদের সবুজ সংকেত দেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

তারা বলেন, যাওয়ার সময় সাদ্দাম নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এমনভাবে মারবি যেন মরে না যায়।’ এরপর সনজিত সাদ্দামের অনুসারীরা ভিপি নুরসহ তার অনুসারীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। রক্তাক্ত করা হয় অনেককে। ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয় দু’জনকে। এদিকে ঘটনার শুরুর পর থেকেই বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানীকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি কার্যকর কোন উদ্যোগ নেননি। আর যাদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন তারা হামলা বন্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি। এমনকি মাত্র ১ মিনিট দূরত্বে নিজ কার্যালয়ে অবস্থান করলেও ঘটনাস্থলে গিয়েছেন ঘটনা শেষ হওয়ার পর। এরপর তিনি আহতদের মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য পাঠান। এদিকে ঘটনায় প্রক্টরের নিষ্ক্রিয়তার কারণে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। গত ২৩ ডিসেম্বর  ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শেষে এ দাবি করেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। এ বিষয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর  সন্ধ্যায় প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী মানবজমিনকে বলেন, শিক্ষার্থীদের কাজ মারমারি করা না। তাদের হাতে লাঠি না কলম থাকবে। এটা খুবই দুঃখজনক যে শিক্ষার্থীরা মারমারিতে জড়াবে। তিনি বলেন, উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘঠিত ঘটনার তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত ২৩ ডিসেম্বর  দুপুরে হামলার নেতৃত্বে থাকা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন ও ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তুর্যকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ঢাবি শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ গত ২৩ ডিসেম্বর  সন্ধ্যায় মানবজমিনকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এ ধরণের ঘৃণিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না। তিনি ঘটনার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, একটি গোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে ভিপি নুর ও তার অনুসারীদের ওপর হামলা করেছে। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। সনেট বলেন, আমাদের অন্যতম শক্তি বিভিন্ন ফুটেজ। সেখানেই প্রমাণ হবে কারা হামলার সঙ্গে জড়িত। হামলার ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, কারণ ছাড়াই ছাত্রলীগকে এতে জড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে নুরের দুর্নীতির যে অডিও ফাঁস হয়েছে, সেটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। গণমাধ্যমের সমালোচনা করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, অতীতেও মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে ছাত্রলীগকে জড়ানো হয়েছে। এবারও সেটি করেছে।মানবজমিন

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।