শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ১১:০১ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
ডিএনসিসি কম্ভুকর্ন : সাবেক মেয়র আনিসুল হকের স্বপ্নের সেই সড়কটি এখন আগের রূপে ফিরেছে, বসছে মাদকসেবীদের হাট,‘টুনাইনট ‘ কার্যক্রম, ট্রাকস্ট্যান্ডের পুরনো সেই যৌবন!

একুশে বার্তা ডেক্স : মেয়র আনিসুল হক সড়ক। রাজধানীর সাতরাস্তা থেকে তেজগাঁও রেললাইন পর্যন্ত সড়টির নামকরণ করা হয়ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রের নামে। প্রায় আধা কিলোমিটার সড়ক এক সময় পুরোটাই দখল করে গড়ে উঠেছিল ট্রাকস্ট্যান্ড। সড়কটি থেকে স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে নিজের স্বপ্নের মতো সাজিয়ে ছিলেন তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক। এজন্য তাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তবে সাবেক মেয়রের সেই স্বপ্নের সড়কটি এখন আবার আগের মতো ট্রাকস্ট্যান্ডে রূপ নিয়েছে। প্রায় সময়ই মূল সড়কের ওপর রাখা হয় সারি সারি ট্রাক কাভার্ডভ্যান। সড়কের দুই পাশে কোথাও এক লাইন, কোথাও দুই লাইনে পার্কিং করে রাখা থাকে এসব যানবাহন। বসছে মাদকসেবীদের হাট, পুরনো যৌবন ফিরে পেয়েছে এই সড়কে, চলছে ছিনতাই, রাহজানি, অসামাজিক কার্যক্রম, দেখার যেন কেউ নেই, ডিএনসিসি কম্ভুকর্ন।

প্রায় ১০০ ফুট চওড়া এই সড়কে কখনো কখনো একসঙ্গে দু’টি যানবাহন চলা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ফলে এই স্থানে প্রায়ই লেগে থাকে যানজট। ঘটে নানারকম দুর্ঘটনা। দখল হয়েছে ফুটপাথও। ট্রাক, কাভার্ডভ্যানের ব্যাক সাইট ফুটপাথের ওপর তুলে রাখায় পথচারীরা পড়েন বিপাকে। কোথাও কোথাও ফুটপাথে গাড়ি রেখে পথচারীদের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখানে সন্ধ্যা নামলেই বেড়ে যায় নানা অপকর্ম। ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের আশেপাশে ও নিচের ফাঁকা স্থানে বসে মাদকের আসর। চলে দেহব্যবসা। অনেক সময় তাদের হামলার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়া প্রায়ই পথচারী ও রিকশা, সিএনজি যাত্রীদের গতিরোধ করে ছিনিয়ে নিচ্ছে টাকা-পয়সা, মোবাইলসহ সঙ্গে থাকা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কারণে তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকায় অবৈধভাবে দখল হওয়া জায়গা উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। যদিও দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বলে আসছে অবৈধভাবে দখল হওয়া স্থানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সাতরাস্তা থেকে রেললাইন পর্যন্ত সড়কে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বহু বছরের ট্রাকস্ট্যান্ডটি ২০১৫ সালে উচ্ছেদ করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক। যে কারণে সে সময় বিক্ষুব্ধ চালক ও শ্রমিকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। হয়েছেন অবরুদ্ধ। তখন দখলদারদের ইটপাটকেল আর পুলিশের টিয়ারশেলের মধ্য দিয়ে সড়কটিকে ‘পার্কিংমুক্ত’ করে সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেন তিনি। পরে রাস্তাটির সংস্কার করে আরো প্রশস্ত করেন। তার সময়ে ঢাকার সবচাইতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সড়ক হিসেবে এটিকেই বিবেচনা করা হতো। আনিসুল হকের মৃত্যুর পর থেকে ফের দখলদারদের হাতে চলে যায় সড়কটি।

সরজমিন দেখা যায়, ভূমি ও জরিপ অধিদপ্তরের সামনের সড়কজুড়ে রাখা হয়েছে ট্রাক। মেয়র আনিসুল হক সড়কের দুই পাশেই সারি সারি রাখা হয়েছে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। কোথাও চলছে ট্রাক মেরামতের কাজ। যন্ত্রাংশ খুলে রাখা হয়েছে প্রধান সড়কে, কোথাও আবার ফুটপাথে। মদিনা মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় এলোমেলো করে রাখা হয়েছে কাভার্ডভ্যান। সেখানে শ্রমিকরা অনেকেই এসব গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে কাজ করছেন। আনিসুল হক সড়কের মসজিদ মার্কেটের সামনে দিয়ে উত্তরদিকের সড়কটি পুরোপুরি দখলে চলে গেছে বিকল হয়ে যাওয়া ট্রাক মেরামতকারীদের। সেখানে চলছে নতুন ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের বডি সংযোজনের কাজ। বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হওয়া যানবাহনের ইঞ্জিন মেরামতের কাজ চলছে। এছাড়া সিএসডি গুদামের ২ নম্বর গেট, বিজি প্রেস স্টাফ কোয়ার্টার, সিএসডি ভাঙা গেট মোড় হয়ে পুরনো এফডিসি সড়কের পুরোটাই ট্রাক, পিকআপ ও ছোট ট্রাকগুলো রাখা হয়েছে। অথচ মেয়র আনিসুল হক সড়ক দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করছে। এই পথেই ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার থেকে সাতরাস্তা হয়ে তেজগাঁও মহাখালী, বনানী, গুলশান, নিকেতনে হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করছে। প্রায় ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট এবং কয়েকটি গণমাধ্যমসহ বহু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এই সড়ক ব্যবহার করছেন। সড়কটি দখল হয়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত চলাচলে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আওলাদ হোসেন নামের এক ট্রাক চালক জানান, সাবেক মেয়র আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর থেকেই সড়কটিতে গাড়ি রাখছেন। ট্রাক ভাড়া না হলে এই সড়কেই সবাই পার্কিং করে রাখেন। গাড়ির কাজ থাকলেও এখানেই সারানো হয়। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য সব সময়ই আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সংগঠনের নামে চাঁদা নেয়া হয়। পুলিশ মাঝেমধ্যে সড়ক থেকে গাড়ি সরানোর চেষ্টা করলেও নেতারা ওসব ম্যানেজ করে। মদিনা মসজিদ সংলগ্ন সড়কে ট্রাক মেরামতকারী শিপু জানান, আমাদের এখানে জায়গা না থাকায় সড়কে গাড়ি রেখেই কাজ করতে হচ্ছে। সড়কে গাড়ির যন্ত্রাংশ রাখা হয়েছে। অনেক সময় কাজ করতে গিয়ে রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। মানুষ হাঁটাচলা করার সময় গালমন্দ করেন। বিজি প্রেস স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে গাড়ি পরিষ্কার করছেন ফাহিম। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে এখানেই গাড়ি রাখা ছিল। আশেপাশে যত ছোট বড় ট্রাক আসে, তার বেশিভাগই এখানে রাখা হয়। অনেকে মাসের পর মাস গাড়ি রাখছেন। ট্রাকস্ট্যান্ডের জন্য জায়গা না থাকায় এখানেই পার্কিং করতে হয়। মাঝেমধ্যে পুলিশ এসে ধাওয়া করে। তখন সবাই ট্রাক নিয়ে চলে যান। অতঃপর আবার ট্রাক রাখা হয়।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক শ্রমিক নেতা জানান, প্রতিদিন ২-৩ হাজার গাড়ি কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির মালামাল লোড-আনলোড হয়। অনেক সময় দিনের বেলায় লোড কিংবা আনলোড করা যায় না। রাতে করতে হয় এসব কাজ। আবার অনেকদিন এসব গাড়ি বসে থাকতে হয়। এতে পার্কিংয়ের জায়গা লাগে। ফলে শ্রমিকরা কোথাও জায়গা না পেয়ে মেয়র আনিসুল হক সড়কে গাড়ি রাখেন। মালিক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন যে পরিমাণে চাঁদা আদায় করে, তা দিয়ে একটা নিদিষ্ট এলাকায় ট্রাকস্ট্যান্ড ও পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি ও বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রুস্তম আলী খান মানবজমিনকে বলেন, সাবেক মেয়র আনিসুল হক এই সড়ক থেকে ট্রাক-কভার্ডভ্যান উচ্ছেদের পর থেকে আমরাও চাই না জায়গাটা বেদখল হোক। এখন সড়কে মাঝেমধ্যে ট্রাক-কভার্ডভ্যান থাকে। তবে ঈদের সময় ও ছুটির দিনে কিছু গাড়ি এখানে অবস্থান করে। প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালামাল নিয়ে ঢাকায় ঢুকছে। মালামাল লোড-আনলোডের জন্য মাঝেমধ্যে সড়কে ট্রাক থাকে। তবে আমরা সবাইকে  বলে রাখছি, এখানে কোনো ট্রাক দীর্ঘ সময় যেন না থাকে। এছাড়া ট্রাকস্ট্যান্ডের জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। যেটা আছে, তাও রেলওয়ের জায়গা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসির ফুটপাথ ও সড়কে কিছু পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে তা নিলামে দেয়া হবে। ফুটপাথ ও সড়কে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সেপ্টেম্বর থেকে মোবাইল কোর্ট ও নিলাম কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মানবজমিন

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।