শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
রাজনীতি : বিএনপির শোকজ, হেফাজত স্তিমিত , মাঠে আওয়ামীলীগ

নিউজ ডেক্স : রাজনীতিতে মস্তানতন্ত্র আর গণতন্ত্র নিয়ে সরব হবার পর এবার অনেকটাই ঢিলেঢালাভাব।বিএনপির দুই নেতাকে- একজন জরুরি সংস্কারের সময়কার নেতা বলে খ্যাত আরেকজন সাংবাদিক-রাজনৈতিকনেতা- এদেরকে শোকজ করা হয়েছে। হেফাজতের আলোচনা- রাজনীতি স্তিমিত হয়ে পড়েছে। বাবুনগরিকে নিয়ে পরস্পর বিরোধি বক্তব্য দেয়া শুরু হয়েছে, ৫ মের ‘শাপলা’র ঘটনাও আলোচনায় আসছে।

রাজনীতিতে বিশেষ করে বিরোধী রাজনীতিতে    হার্ডলাইন, আপস আর সমঝোতার চোরাবালিতে হারিয়ে গেছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বেঁচে থাকতে মাঝে-মধ্যে খানিকটা চাঞ্চল্য তৈরি করতেন , এখন তাও নেই। এখনো অবশ্য শেরেবাংলানগরে অথবা নতুন, পুরাতন পল্টনে কাউকে কাউকে সরব দেখা যায়। প্রাপ্ত তথ্যমতে এর প্রায় পুরোটাই সাজানো। বিরোধী দল না থাকলে সরকারি দলের রাজনৈতিক তৎপরতার প্রয়োজন হয় না। যে কারণে ক্ষমতাসীন দলও মাঠে ছিল না।কিছুদিন ধরে অবশ্য চিত্রটা একেবারেই আলাদা। প্রায় প্রতিদিনই নানা কর্মসূচি পালন করছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ইস্যুতে তৈরি হয়েছে এই পরিস্থিতি। কয়েকটি ইসলামপন্থি দল ভাস্কর্যের বিরোধিতায় মাঠে নেমেছিল। তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ময়দানে সর্বশক্তি দিয়ে আবির্ভূত হয় ক্ষমতাসীন বিভিন্ন সংগঠন। সরকারি আমলা, বিচারকরাও মাঠে নেমে আসেন। উচ্চারণ করা হয়েছে হুঁশিয়ারিও। হুজুরদের পক্ষ থেকে অবশ্য এ নিয়ে পাঁচ দফা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। চিঠি দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে আলেমদের একটি প্রতিনিধিদলের একদফা বৈঠকও হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে বোঝা কঠিন- পরিস্থিতি কোনদিকে গড়াচ্ছে। তিনি অবশ্য দু’টি বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছেন ১. সংবিধানের বাইরে কিছু হবে না ২. কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া হবে না। ভাস্কর্যবিরোধীরা অবশ্য এখন বেশ চাপে রয়েছেন। দৃশ্যত এ নিয়ে উত্তাপ কমে এসেছে। যদিও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো এখনো মাঠে রয়েছে।

ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে রাজনীতিতে এক ধরনের দোষারোপের খেলা থাকলেও বিএনপি এ নিয়ে অনেকটাই নীরবতা পালন করে আসছে। যদিও বিএনপি’র রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই নীরব। খালেদা জিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তির পর গুলশানের বাসায় রয়েছেন। রাজনীতি নিয়ে বা অন্য কোনো ইস্যুতে তিনি কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেননি। অল্প কয়েকবার দলীয় নেতাদের তিনি দেখা দিয়েছেন। তবে সেসব বৈঠকও হয়েছে গণমাধ্যমের আড়ালে। দলের দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক রহমান লন্ডনে। তার বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সে যাই হোক, বিএনপি’র রাজনীতি যখন পাঠ্যপুস্তক পাঠের মতো কিছু ব্রিফিং আর সেমিনারে বন্দি তখন হঠাৎ সোমবার দেখা গেল নাটকীয়তা। জিরো পয়েন্টে একদল লোক জড়ো হয়ে সরকার পতনের জন্য নানা স্ল্লোগান দিতে থাকেন। সেখানে এক পর্যায়ে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমও যোগ দেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা  জানান, সেখানে খুব অল্প সময় অবস্থান করেন তারা। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই অবশ্য পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, সেখানে তাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। তবে ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। পরে জানা যায়, দলের দুই ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং শওকত মাহমুদকে শোকজ করেছে বিএনপি। সুস্থ হয়ে উঠে আগের মতোই পল্টনে ডেইলি ব্রিফিং করা রিজভী আহমেদ এই শোকজের কথা জানান। পরিষ্কার করে বলা না হলেও এটা স্পষ্ট, জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভে হাজির হওয়াতেই শওকত মাহমুদকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, হাফিজ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগের লম্বা ফিরিস্তি দেয়া হয়েছে। জরুরি জমানায় তিনি সংস্কারপন্থি ছিলেন। কিন্তু গত কয়েকবছরে সরকার বিরোধী আন্দোলনে কয়েক দফায় রাজপথ থেকে গ্রেপ্তার হন। আরেকজন ভাইস চেয়ারম্যান অবশ্য কিছুদিন আগে প্রকাশ্যেই দলের নেতৃত্বের সমালোচনা করেন। একাধিক সূত্র বলছে, হাফিজ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে হয়তো কঠোর পদক্ষেপই নিতে পারে বিএনপি। তিনি অবশ্য নোটিশের জবাব দেয়ার পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করে নিজের বক্তব্য জানাবেন বলে জানিয়েছেন।

বিরোধী রাজনীতি যখন দৃশ্যত দিকহারা তখন ডাকসু’র সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও সমমনাদের একটি জোট গঠনের চেষ্টাও দৃশ্যমান। মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলনসহ কয়েকটি সংগঠনকে একসঙ্গে বেশকিছু কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। এসব কর্মসূচিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও নিয়মিত অংশগ্রহণ করে থাকেন। হেফাজতের নতুন নেতৃত্ব নিয়েও নানা আলোচনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু বিরোধী জোটের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর মৃত্যুর পর সে আলোচনা সম্ভবত স্তিমিত হয়ে যাবে।

ড্রইংরুমের আয়েশী রাজনীতিতে হঠাৎ চাঞ্চল্য। একটি ঘণ্টা খানেকের বিক্ষোভ। বিএনপি কেন শোকজের পথে হাঁটলো? প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন পর্যবেক্ষকরা। কোথাও কি কোনো রহস্য? ভাস্কর্য ইস্যুর সমাপ্তি কি আলোচনার টেবিলে। নাকি যেখানে আছে সেখানেই শেষ হবে ঘটনা। হারিয়ে যাওয়া গুঞ্জনের রাজনীতি যেন আবার ফিরে এসেছে।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।