বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০২:২৫ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
দলিল রেজিস্ট্রি : ঘুষ থেকে রেহাই পেলেন না  ডেপুটি এটর্নি  জেনারেল!

নিউজ ডেক্স: কুষ্টিয়ায় জমির দলিল সম্পাদনে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা ডেপুটি এটর্নি জেনারেল বিএম রফেলও ঘুষ থেকে রেহাই পেলেন না, তার থেকেও  ১০ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করা হয়েছে। আগেও কুষ্টিয়ার সাব রেজিস্টা্রাকে ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে ধরে ফেলে দুদক। কিন্ত এর পরও তাকে আবার সেই পদেই বহাল করা হয়।

কুষ্টিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে মঙ্গলবার (২২ জুন) ডেপুটি এটর্নি জেনারেল বিএম রফেল এর কাছে রেজিস্ট্রি অফিসের দুই কর্মচারীর ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি ও পরে দফা-রফায় দর কমিয়ে ১০ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করা হয়। ওই ডেপুটি এটর্নী জেনারেল এর ফেসবুক স্ট্যাটাসে ঘুষ আদায়ের ভয়াবহ এ চিত্র উঠে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি এটর্নি জেনারেল জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক লোন নিতে মঙ্গলবার বিকেলে কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে আসেন। জমির বন্ধকী দলিল সম্পাদনের পর অফিসের করনিক মুকুল ও পিয়ন আক্কাস ডেপুটি এটর্নি জেনারেল এর কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। এসময় তিনি তার পরিচয় দেন এবং দাবিকৃত টাকার বিপরীতে রশিদ দাবি করেন। তার পরিচয় জানার পর দুর্নীতিবাজ ওই দুই কর্মচারী দর কমিয়ে ৩০ হাজার টাকার স্থলে ২৫ হাজার ঘুষ দাবি করেন। এসময় ব্যাংক কর্মকর্তাসহ এটর্নি জেনারেল এর বড় ভাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ওই এটর্নি জেনারেল রেজিস্ট্রি অফিস ত্যাগের পর তার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে দুর্নীতিবাজ ওই দুই কর্মচারী ১০ হাজার টাকা আদায় করেন।

এদিকে ঘটনার পর পরই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিএম রফেল তার ফেসবুক নিজ আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, “এসেছিলাম কুষ্টিয়া সাব রেজিস্টার অফিসে জমি রেজিস্ট্রি করতে। এসে দেখলাম ঘুষ বাণিজ্য কাকে বলে। করনিক মুকুল ও পিয়ন আক্কাস প্রকাশ্যে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ চায়। নিজের পরিচয় দেওয়ার পরও নূন্যতম সম্মান না দেখিয়ে এটা এখানকার নিয়ম বলে তারা দাবি করেন। পরে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে কাজটি শেষ করলাম। দেখার কেউ নাই।”

এদিকে ফেসবুকে ঘুষের বাণিজ্যের বিষয়টি উঠে আসায় সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে তোল-পাড় শুরু হয়। টাকা ফেরতসহ বিষয়টি মিমাংসা করতে সাব-রেজিস্ট্রে অফিসের কর্মকর্তারা করতে দৌড়-ঝাঁপ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা হালে পানি পাননি।

 

উল্লেখ্য, কুষ্টিয়া সদরসহ জেলার সব রেজিস্ট্রি অফিসে গড়ে উঠা শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্রের রোষানলে পড়ে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও ঘুষ বাণিজ্যসহ দলিল প্রতি অতিরিক্ত টাকা আদায়ে বাধ্য করা হয়। এর আগে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ ও অফিস সকারী রফিকুল ইসলাম ঘুষের ১ লাখ ৪ হাজার ৪ শত ঘুষের টাকাসহ দুদকের অভিযানে হাতে-নাতে ধরা পড়েন। চলমান ওই মামলায় জামিনে মুক্তি লাভের পর ওই সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রতকে পুনরায় এখানে স্বপদে বহাল রাখা হয়। ফলে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দলিল লেখক সমিতির যোগসাজশে গড়ে উঠা সিন্ডিকেট চক্র হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য।

এর আগে ২০১৯ সালের জানুয়ারি কুষ্টিয়া সদর সাবরেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ অফিস সকারী রফিকুল ইসলাম ঘুষের টাকাসহ দুদকের অভিযানে হাতেনাতে ধরা পড়েন। কুষ্টিয়া সদর সাব রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ জানান, বিএম রফেল আমার দপ্তরে এসেছিলেন জমি রেজিস্ট্রি করতে। আমি দ্রুত উনার জমি রেজিস্ট্রি করে দিই। এ বিষয়ে দুই কর্মচারীর ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।

জেলা রেজিস্ট্রার প্রভাকর সাহা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবগত। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।