শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০১:১০ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
গণপূর্তের রুম্মান গোয়েন্দা নজরদারিতে : ফেসে যেতে পারেন সিন্ডিকেড সদস্যরা

নিউজ ডেক্স : গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে মাঝবয়সী এক ব্যক্তিকে নিয়ে বেশ কৌতূহল তৈরি হয়েছে। তিনি আসেন দামি গাড়ি চড়ে; বসেন কিছু নির্দিষ্ট কর্মকর্তার কক্ষে। কাজ শেষে বেরিয়ে যান। যাওয়ার পথে লিফটম্যান ও পিয়নের হাতে ধরিয়ে দেন টাকা। এই রুম্মান গোয়েন্দা নজরদারিতে, একটি গোয়েন্দা তার গতিবিধি খতিয়ে দেখছে। তার সাথে ফেষে যেতে পারেন গণপূর্তের কতিপয় প্রভাবশালী উর্ধতন কর্মকর্তা।এ নিয়ে দৈনিক দেশ রূপান্তর এক প্রতিবেদন তুলে ধরেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,

মাইনুল হাছান রুম্মান। তিনি মূলত গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তেজগাঁও আর গুলশান এলাকার প্লট নিয়ে কাজ করেন। মূল ফাইল থেকে কাগজপত্র সরিয়ে নিয়ে নিজেকে আমমোক্তার বলে প্লটের মালিকানা দাবি করে প্রকৃত মালিকদের হয়রানি করেন এই রুম্মান। আবার কৌশলে নথিপত্রে এসব অবৈধ কাগজ রেখে কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দাপ্তরিক চিঠিপত্র তৈরি করতে পারলে তা দেখিয়ে দেশের বড় বড় আবাসন কোম্পানির কাছ থেকে বায়না করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এসব করতে গণপূর্ত অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-প্রকৌশলীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ২০১৩ সালে আয়কর ফাইল খোলা এ ব্যক্তির সম্পদের পরিমাণ মাত্র কয়েক বছরে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে রয়েছে প্লট ও ফ্ল্যাট।

রহস্যজনক এ রুম্মানের অস্বাভাবিক পরিমাণ সম্পদ ও সাধারণ মানুষকে হয়রানির বিষয়ে সম্প্রতি সরকারের দায়িত্বশীল একটি গোয়েন্দা সংস্থা কাজ শুরু করেছে। রুম্মানের সঙ্গে তার সিন্ডিকেটের কিছু কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী ফেঁসে যেতে পারেন বলেও জানিয়েছেন সংস্থাটির এক কর্মকর্তা।

জানা যায়, মাইনুল হাছান রুম্মান বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই গণপূর্ত অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শাখায় যাতায়াত শুরু করেন। একসময় বাড্ডার বাসিন্দা রুম্মান বর্তমানে গুলশানের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। তিনি নিজে দুটি ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়েন। তার নিজ নামে থাকা দুটি গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো চ-১৩-৯৫১৩ এবং ঢাকা মেট্রো চ-১৯-৬১৫৪। দুটি গাড়ির দাম কোটি টাকার বেশি।

গণপূর্ত ঘিরে রহস্যময় এ রুম্মানের রয়েছে একটি সিন্ডিকেট। তারা ফাইল ও নথিপত্র দেখে তাকে জানানোর পর তিনি কিছু ভুয়া কাগজপত্র ঢুকিয়ে দেন। এরপর শুরু হয় সংশ্লিষ্ট প্লট মালিকের হয়রানি। এক পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা দালাল দিয়ে রুম্মান প্লট মালিকের কাছে টাকা দাবি করে প্রস্তাব পাঠান। এরপর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মালিক বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে তা মিটিয়ে ফেলেন। এভাবে গত কয়েক বছরে রুম্মানের হাতে ৩০ থেকে ৩৫ জন প্লট মালিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার প্লট মালিক।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কয়েক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি তেজগাঁও এলাকার একটি প্লটে মালিকানা দাবি করে রুম্মান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ প্লটের মালিকানা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই তিনি প্লটটি দেশের দুটি বড় আবাসন কোম্পানির কাছে বিক্রির নামে টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর প্রতিষ্ঠান দুটি খোঁজ নিয়ে রুম্মানের এসব অপকর্মের কথা জানতে পারে। প্রতিষ্ঠান দুটির পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

সূত্র জানায়, রুম্মান কর অঞ্চল-১ এর ৫ নম্বর কর সার্কেলের করদাতা। ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর ই-টিআইএন গ্রহণ করেন। ২০২১-২২ করবর্ষে তার জমা দেওয়া রিটার্নে মোট আয় ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন তিনি। রিটার্নে তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য দুটি গাড়ি আছে বলেও উল্লেখ করেছেন। তার নগদ  ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ জানিয়েছেন ৩ কোটি ৭৬ লাখ ১৮ হাজার ৬৬০ টাকা। রিটার্নে তার মোট সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ৪ কোটি ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ১৬০ টাকা এবং নিট সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ৪ কোটি ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ১৮৬ টাকা। তিনি মোট কর দিয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ১৮০ টাকা। প্রদেয় করের ১ লাখ ৫ হাজার টাকা গাড়ি দুটি নবায়নকালে দিয়েছেন। করের বাকি ৩ হাজার ১৮০ টাকা তার সকল আয় ও সম্পদের ওপর নিয়মিত কর হিসেবে দিয়েছেন বলেও স্পষ্টভাবে রিটার্নে দেখিয়েছেন। এক বছরে সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ দেখিয়েছেন ৯০ হাজার ৩৭ টাকা। কর যোগ্য আয় দেখিয়েছেন ৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা। ব্যয় দেখিয়েছেন ৪ লাখ ১৯ হাজার ৯৬৩ টাকা। তিনি দুটি গাড়ির মধ্যে ঢাকা মেট্রো চ-১৩-৯৫১৩ এর দাম দেখিয়েছেন ২১ লাখ টাকা। অন্য গাড়ির দাম হিসেবে রিটার্নে উল্লেখ করেছেন ২৮ লাখ। এর নম্বর ঢাকা মেট্রো চ-১৯-৬১৫৪। অলঙ্কার হিসেবে ৪০ ভরি সোনা দেখিয়েছেন। চারটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা।

রুম্মানের এসব কর্মকা- সম্পর্কে তার বক্তব্য জানার জন্য ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেকে মিথ্যা হিসাব উল্লেখ করে কর ফাঁকি দিচ্ছেন। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’

 

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।