শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
পুলিশের মাথাব্যথা ১১৭২ জঙ্গি, ১৪৭ জন বিদেশে পালিয়ে গেছে : রাজধানীঢতে জংগিদের পোস্টারিং, পুলিশ সদর দপ্তরের বার্তা পেয়ে পুলিশ নড়েচড়ে ওঠেছে

ডেক্স রিপোর্ট : নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর কর্মকান্ড থামছেই না। আচমকা হামলা চালাচ্ছে তারা। প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। সর্বশেষ ঢাকার আদালতপাড়ায় পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে ছিনিয়ে নিয়েছে দুই দুর্ধর্ষ জঙ্গিকে। এতে টনক নড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কর্তা ব্যক্তিদের। জঙ্গি-প্রতিরোধে তারা দফায় দফায় বৈঠক করছে।প্রশ্ন ওঠেছে জনাকীর্ন আদালত চত্বর থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে ফিল্মিস্টাইলে দুই জংগি ছিনিয়ে নিয়ে গেল- এটা পুলিশের ব্যর্থতা, কেন জংদিদের পায়ে ঢান্ডাবেড়ি পড়নো হয়নি।

পুলিশ জানতে পেরেছে, জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর লাইমলাইটে আসার চেষ্টা করছে। কিছুদিন আগে নিষিদ্ধ সংগঠনটি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিরুদ্ধে সারাদেশে পোস্টারিং করেছে।  গা-ঢাকা দেওয়া সদস্যরা গোপনে বৈঠক করছে। তারা অনলাইনে মিটিং করে নির্দেশনা দিচ্ছে।

আবার হিযবুত তাহরীরের ১ হাজার ১৭২ জঙ্গি ‘লাপাত্তা’। তাদের মধ্যে ১৪৭ জন দেশের বাইরে পালিয়ে আছে বলে ধারণা। সংগঠন চালাতে তারা হুন্ডিতে টাকা পাঠাচ্ছে বলে জেনেছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করে সরকার। তারপরও তাদের সাংগঠনিক কর্মকান্ড থেমে নেই। গোপনে তারা অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। অভিযোগ উঠেছে, নব্য জেএমবি নামে কলকাঠি নাড়ছে হিযবুত তাহরী-ই। সংগঠন পরিচালনার জন্য বিদেশ থেকে টাকা আসছে। তাছাড়া প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি সহায়তা করছে। জঙ্গিবাদের অভিযোগে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৩ দেশে তাদের নিষিদ্ধ করা হয়। সংগঠনটির মূল কমিটিতে কারা আছেন কেউ জানে না। তাদের কেউ চেনেও না। ফলে মূল নেতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছে। সরকার নিষিদ্ধ করলেও সংগঠনটির কোনো ক্ষতি হয়নি। সভা, সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠক তারা করেই চলেছে।

পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, নিষিদ্ধ করার পর তাদের কর্মকান্ড আরও বেড়েছে। নানা কৌশল অবলম্বন করেও শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের নেতাদেরও গ্রেপ্তার করতে পারছে না আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। মাঝেমধ্যে পোস্টার সাঁটানো বা লিফলেট বিলি করার সময় পুলিশ বা  র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ছে কিছু মাঠকর্মী। সংগঠনের শীর্ষ নেতাসহ বড় নেতারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সক্রিয়। তারা গোপনে কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। মেজর জিয়াও হিযবুত তাহরীরকে সহায়তা করছেন বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিযবুত তাহরীরের কর্মকা- মনিটরিং করা হচ্ছে। জামিনে হিযবুতের অনেক সদস্য মুক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের হদিস মিলছে না তা সত্য। তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাদের শক্তিদাতাদের খুঁজে বের করার চেষ্টাও চলছে। হিযবুতসহ সবকটি জঙ্গি সংগঠনের কর্মকান্ড আমাদের নজরে আছে। রাতের আঁধারে তারা পোস্টারিং করছে। এসব ঠেকাতে থানাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

র‌্যাব ও পুলিশের দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশ থেকে হিযবুতের জন্য টাকা আসছে। অর্থ-সহায়তাকারীদের মধ্যে লন্ডন, পাকিস্তান, হংকং ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক রয়েছেন। বাংলাদেশে কোন কোন অঞ্চলে তাদের কমিটি ও কার্যালয় আছে তার সন্ধান পাওয়া গেছে। বিভাগীয় অঞ্চলগুলোতে একাধিক কমিটি কাজ করছে। এসব কমিটির মাধ্যমে তারা দাওয়াতি কার্যক্রম চালায়। সংগঠনটির মহিলা ইউনিটও রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের দলে ভেড়ানোর জন্য তাদের “দাওয়াতি টিম” মাঠে কাজ করছে। তারা মোবাইল ফোনের অ্যাপস ব্যবহার করে তথ্য আদান-প্রদান করে বেশি।’

কর্মকর্তারা বলেন, ‘৯৫টি দেশে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমেরিকায় শক্তিশালী কমিটি রয়েছে। ভারতবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও ওই দেশে হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রম আছে। মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান, সুদান, লিবিয়া, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, তুরস্কসহ অন্যান্য দেশে হিযবুত তাহরীর সক্রিয়। তবে জঙ্গি কার্যকলাপের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ান ফেডারেশন, পাকিস্তান, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, কাতার, সুদান, ওমান, জর্ডান, সিরিয়া, ইরাক, মিসর, লিবিয়া, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, আজারবাইজান, তুরস্ক ও তিউনিসিয়া সরকার হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। তারপরও ওইসব দেশে তাদের প্রচারণামূলক কার্যক্রম আছে।

পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের ডিআইজি মনিরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে জানান, নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের কর্মকান্ড এখনো আছে। তবে তারা অনেকটাই দুর্বল। জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর আমরা নজরদারি করছি। প্রায়ই জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ জামিন নিয়ে আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছে না। আবার অনেকে ঠিকানা বদল করেছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। আত্মগোপনে থাকা জঙ্গিদের সন্ধান করা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিযবুত তাহরীরের সদস্য আছে ১০ হাজারের বেশি। তাদের অনেকেই কলেজ-বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের মধ্যে তালিকাভুক্ত ১ হাজার ১৭২ জঙ্গির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের সন্ধান করতে সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোতে। বার্তায় বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে ১৪৭ জন দেশের বাইরে পালিয়ে গেছে। তারা বিদেশে বসেই টাকা পাঠাচ্ছে।

বিশেষ বার্তা পেয়ে পুলিশ ও র‌্যাব পলাতক জঙ্গিদের ধরতে কাজ শুরু করেছে। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিষিদ্ধ অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর চেয়ে হিযবুত তাহরীর বেশি ভয়ংকর। তারা শিক্ষিত জঙ্গি। দেশের বাইরে যারা পালিয়ে আছে তাদের ধরতে ইন্টারপোলে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আমরাও চেষ্টা করছি।’

কিছুদিন আগে হিযবুত তাহরীর সারাদেশে পোস্টারিং করেছে। পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘জনগণকে দুর্দশায় নিমজ্জিত রেখে আওয়ামী-বিএনপি নেতাদের রাজনৈতিক খেলা নিশ্চিত প্রতারণা। ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি, ব্যাপক বেকারত্ব, তীব্র জ্বালানি সংকট এবং ভঙ্গুর অর্থনীতির কারণে জনজীবন দুর্দশায় নিমজ্জিত। জনগণের দুর্দশার কারণ হচ্ছে আওয়ামী-বিএনপির শাসকগোষ্ঠীর দশকের পর দশকের দুর্নীতি এবং তাদের পশ্চিমা প্রভুদের পুঁজিবাদী নীতির বাস্তবায়ন। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য, পশ্চিমাদের হাতিয়ার আইএফএম-বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন অনুসরণ করে পৃথিবীর বহু দেশের অর্থনীতি পরনির্ভরশীল ও ধ্বংস হয়ে গেছে। অথচ হাসিনা সরকার দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে তার অনিবার্য পতন ঠেকাতে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছে। আর বিএনপি আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের হস্তক্ষেপের মাধ্যমেই বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক সমাঝোতা আশা করে। আওয়ামী-বিএনপির রাজনৈতিক খেলায় যে-ই জিতুক, শাসকগোষ্ঠীর দুর্নীতি কিংবা দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাদী নীতির বাস্তবায়ন বন্ধ হবে না। এ খেলায় জনগণই হচ্ছে পরাজিত পক্ষ।’

হিযবুত তাহরীরের এ ধরনের পোস্টার দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে। উত্তরা, মিরপুর, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়কে ও অলিগলিতে এসব পোস্টার দেখা গেছে। দেশ রূপান্তর

 

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।