শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০২:০০ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
বেবিচকের অডিট রিপোর্ট : ‘কিছুই ঠিক নেই বিমানের’: বেবিচকের এক পরিচালকের বিরুদ্ধে অডিট আপত্তির জনশ্রুতি

ডেক্স রিপোর্ট : দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট (এওসি) অডিট-২০২২ এ মোট ৪৯টি আপত্তির (অবজেকশন্স) কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এতে আরও বলা হয়, পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় বিমান নিরাপদে ফ্লাইট পরিচালনা (ফেইল্ড টু এনসিওর সেফ অপারেশন) করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

অডিট আপত্তিগুলো সম্প্রতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে পাঠিয়েছে বেবিচক। এ বিষয়ে তাদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
বুধবার (৯ আগস্ট) বেবিচকের অডিট রিপোর্টটি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে।

অডিট টিমে ছিলেন বেবিচকের পরিচালক (এফএসআর ও আইএ) গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. মুকিত-উল-আলম মিয়া, বেবিচকের প্রিন্সিপাল ফ্লাইট অপারেশনস ইন্সপেক্টর উইং কমান্ডার এআরএম গোলাম ফারুক, বেবিচকের উপ-পরিচালক (এএনএস) এসম লুতফুল কবিরসহ বেবিচকের মোট ১০ জন।

এ দিকে বেচিকের একজন পরিচালকের অডিট রিপোর্ট ধামাচাপা দিয়ে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। বিষয়টি ডিডি অডিট শাহিনা এবং চীফ অডিটর, এডি রফিকুল ইসলাম অস্বীকার করেছেন। ডিডি অর্থ আনোয়ার হোসেন বিষয়টি জানেন না বলে জানান।

অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বর্তমান কার্যক্রম ও নীতিমালাগুলো বেবিচকের অনুমোদিত গাইডলাইন বা নিয়ন্ত্রণের মানদণ্ড মেনে চলছে না। অডিট করে পাওয়া মোট ৪৯টি আপত্তিগুলোর (অবজেকশন্স) মধ্যে এওসি ম্যানেজমেন্ট এবং ফাইন্যান্স সংক্রান্ত ২টি, ফ্লাইট অপারেশন সংক্রান্ত ৭টি, কেবিন সেফটি ১৪টি, এয়ারওয়ার্দিনেস ১০টি, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সংক্রান্ত ১০ টি, ফ্লাইট ডিসপ্যাচড ২টি এবং ক্ষতিকারক মালামাল বহন (ডেঞ্জারাস গুডস) সংক্রান্ত ৪টি।

রিপোর্টে বেবিচকের পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, বিমানের রিলায়েবিলিটি কন্ট্রোল বোর্ড (আরসিবি) নিয়মিত সভা আয়োজন করছে না। অথচ আরসিবির দায়িত্ব হচ্ছে এয়ারক্রাফট, এয়ারক্রাফটের ইঞ্জিনসহ সবধরনের পার্টসের কার্যকারিতা নিয়ে কাজ করে নিরাপদ ফ্লাইট অপারেশন নিশ্চিত করা।

এতে বলা হয়েছে, বিমানের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এর রক্ষণাবেক্ষণে কিছু ত্রুটি রয়েছে। পাশাপাশি বোয়িং- ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনের একটি এয়ারক্রাফটের ভেতরের যে ইউনিভার্সাল প্রিকশন কিটস (ইউপকে) থাকার কথা, সেটি নির্ধারিত স্থানে পাওয়া যায়নি।

সম্প্রতি এয়ারলাইন্সগুলোকে বেবিচক জানিয়েছিল, প্রতিটি এয়ারলাইন্সের কেবিন অপারেশন ও সেফটি ম্যানুয়েল থাকতে হবে যেখানে পাইলট ও কেবিন ক্রুদের ফ্লাইটের বিবরণ, ডিউটির সময়, বিশ্রামের সময় উল্লেখ থাকবে। কিন্তু বিমানের কাছে সেই সেফটি ম্যানুয়েল পাওয়া যায়নি। কোনো ক্রুকে কখন কোন ধরনের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে তার কাগজও দেখাতে পারেনি তারা।

রিপোর্টে বলা হয়, বিমানের বহর সংখ্যার অনুপাতে ফ্লাইট অপারেশন নিরাপদ করতে হলে যত সংখ্যক কেবিন ক্রু দরকার, বিমানের সেই সংখ্যক নেই। বিমানের যেসব বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে বিভিন্ন স্টেশনে পোস্টিং পেয়েছেন (গ্রেড-৬ অফিসার) তারা কোন ট্রেনিং নিয়েছেন সে বিষয়েও কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। বিমানের এয়ারক্রাফটগুলো কোন ইন্স্যুরেন্সের কাভারেজে রয়েছে তারও কোন কাগজ পায়নি অডিট টিম।

সম্প্রতি গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য বিমান ৮১ জন গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিসটেন্ট নিয়োগ দিয়েছে। তবে তাদের মাঠে কাজ করতে পাঠানোর আগে বেবিচকের নির্ধারিত বাধ্যতামূলক ট্রেনিং করানো হয়নি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

অডিট রিপোর্টে বিমানকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বেবিচক। বেবিচক বলেছে, বিমানের অপারেশনাল কাজের জন্য যেসব পদে পর্যাপ্ত লোক নেই সেখানে লোকবল নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়াও বিমানের যেসব বিষয়ে আপত্তি পাওয়া গেছে সেগুলো কীভাবে সমাধান করা হবে সেজন্য বিমানকে একটি কারেক্টিভ অ্যাকশন প্ল্যান (সিএপি) বানাতে হবে।

অডিট রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের সংশ্লিষ্ট কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।