মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৭:৫৪ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন : কোটা আন্দোলন : আজ প্রজ্ঞাপন জারি না হলে রোববার থেকে ফের আন্দোলন

একুশে বার্তা ডেক্স  : সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলে প্রজ্ঞাপনের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় বিক্ষোভ শেষে টিএসসি এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময়  আগামী ৯  মের মধ্যে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন না হলে আগামী ১৩ মে  রবিবার  থেকে প্রতিটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। গত ৯ মে  বুধবার দুপুরে টিএসসিতে মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।

মানববন্ধনে সংগঠনটির যুগ্ম-আহবায়ক নুরুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পর ২৭ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। অথচ এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। এ নিয়ে সারাদেশের ছাত্রসমাজ ক্ষুব্ধ। ছাত্রসমাজ সব সময় আলোচনার পথ খোলা রেখেছিল। সরকারের পর থেকে ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের যতবার ডাকা হয়েছিল, আমরা গিয়েছি।’ : তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর শিার্থীরা আন্দোলন বন্ধ করে পড়ার টেবিলে ফিরে গেছে। তাদের আবার রাজপথে নামতে বাধ্য করবেন না। বৃহস্পতিবারের মধ্যে যদি প্রজ্ঞাপন জারি করা না হয়, তবে আগামী রবিবার থেকে সারাদেশে ছাত্রসমাজের দাবানল রাজপথ উত্তপ্ত করবে। ছাত্রসমাজ যদি ক্ষেপে যায়, যেকোনো অশুভ শক্তিকে দাঁতভাঙা জবাব দেবে।’

জানা যায়, গত মঙ্গলবার (৮ মে) বেলা ১১টায় মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার। তারই অংশ হিসেবে গতকাল এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে এ কর্মসূচি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিার্থী এসে জড়ো হয়। তারপর সেখান থেকে মিছিলযোগে আন্দোলনকারীরা টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে সমবেত হয়। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে আন্দোলনকারীরা সারিবদ্ধভাবে রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে তাদের মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। : এরপর তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল করেন। মানববন্ধন ও মিছিলের ব্যানারে লেখা ছিল ‘আর নয় কালপেণ, দ্রুত চাই প্রজ্ঞাপন’। মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। তারা বলেন, সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের যে ঘোষণা দেন, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করার দাবি জানান। প্রজ্ঞাপন জারি নিয়ে কোনো টালবাহানা হলে ছাত্রসমাজ তা মেনে নেবে না বলেও জানান তারা। : উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা ৫৬ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলনে নামে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরণ পরিষদ। এর আগে গত ৮ এপ্রিল রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের পর দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পরে নামে সরকারি চাকরিতে অনীহা দেখানো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও। এ নিয়ে ১২ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। : এরপর ছাত্ররা কাসে ফিরে গেলেও গত ২৬ এপ্রিল দ্রুত প্রজ্ঞাপন না হলে আবার আন্দোলনে নামার ঘোষণা আসে। পরদিন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক আলোচনায় বসেন কোটা আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে। জানান, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে গত ২ মে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি কোটা বাতিলের বিষয়ে যে কথা বলেছেন, সেটা পাল্টাবে না। তবে প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও এখনো প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ার বিষয়ে গত সোমবার (৭ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছিলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল বা সংস্কারের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। তার এ বক্তব্যের পর মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরণ পরিষদের নেতারা। : রাবি প্রতিনিধি জানান, রাবি প্রতিনিধিসরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রজ্ঞাপন আকারে দ্রুত প্রকাশের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিার্থীরা। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ঘন্টাব্যাপী এ কর্মসূচির আয়োজন করেন শিার্থীরা। : মানববন্ধনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ শিক্ষার্থীর দাবি মেনে নিয়ে সংসদে কোটা বাতিল করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমাদের বলা হয়েছিল ৭ মে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এদিকে জনপ্রশাসন দফতর থেকে বলা হচ্ছে, আমরা সরকারের থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি। সরকার ও জনপ্রশাসন আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে যেন লুকোচুরি খেলায় মেতেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দল নই, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী। কোনো আন্দোলনকারীকে হয়রানি করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী এর তীব্র প্রতিবাদ জানাবে। মনে রাখবেন, পৃথিবীতে ছাত্র আন্দোলন কখনও বৃথা যায়নি। আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে পিছপা হব না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি, চাকরিতে মেধাবীদের সুযোগ দিয়ে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ আয়ের দেশ করার সুযোগ দিন। একই দাবি জানিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম মুবিন বলেন, আমাদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করি। বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে দমিয়ে আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নিলেও এখনও তা কার্যকর হয়নি। আমরা প্রাধানমন্ত্রীর বিরোধী নই, সব সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশেই থাকতে চাই। আমরা কোনো বৈষম্য চাই না। আমরা চাই সমান অধিকার। মেধার মূল্যায়ন করে দেশকে এগিয়ে নেয়াই আমাদের কাম্য। : ফলিত পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মোর্শেদুল আদনানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের আরিফুজ্জামান, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যব্যবস্থা বিভাগের শেখ মাসুদ, দর্শন বিভাগের নাহিদ, ইতিহাস বিভাগের সায়েম, অর্থনীতির আব্দুল হালিম প্রমুখ। মানববন্ধনে হাজারো শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। : প্রজ্ঞাপন প্রকাশের দাবিতে ইবিতে মানববন্ধন : ইবি প্রতিনিধি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকাশের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ভাস্কর্য ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’-এর পাদদেশে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। : শিক্ষার্থীদের দাবি, গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর প্রজ্ঞাপন জারি করার ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। কোটা বাতিল ঘোষণা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের যদি বাধা বা কোনো প্রকার হয়রানি করা হয় তবে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। : কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনের দাবিতে শাবিতে মানববন্ধন : সিলেট অফিস জানায়, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রজ্ঞাপন আকারে দ্রুত প্রকাশের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৯ মে) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে শতাধিক শিার্থী অংশগ্রহণ করেন। : মানববন্ধনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরণ পরিষদের সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আমরা বাস্তব রূপ দেখতে চাই। ঘোষণার ২৯ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় আমরা আশাহত। : এসময় তাদের হাতে ‘আর নয় কালপেণ দ্রুত চাই প্রজ্ঞাপন, গেজেট নিয়ে টালবাহানা চলবে না চলবে না, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বাস্তবায়ন চাই, দ্রুত প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়ন চাই’ সম্বলিত পোস্টার দেখা যায়। : মানববন্ধনরত এক শিার্থীর কাছে তাদের দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২বার করে ঘোষণা দেয়ার পরেও এখনও কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় আমরা স্তম্ভিত। আমরা চাই অতিদ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করা হোক। : সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরণ অধিকার পরিষদ শাবি শাখার আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন বলেন, আসলে আমরা কোটা বাতিল চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম কোটা সংস্কার। তবুও প্রধানমন্ত্রীর দাবিকে আমরা অত্যন্ত সম্মানের সাথে মেনে নিয়েছি। : কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতির আজ ২৯ দিন পার হয়ে গেলেও কোন প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় আমরা হতাশ। আশা করি প্রধানমন্ত্রী খুব দ্রুত আমাদের দাবি মেনে নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবেন। : আজকের মানববন্ধনের পরেও প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে পরবর্তীতে আর কোন কর্মসূচি আছে কিনা এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, দেখেন! বারবার রাস্তায় নামার ইচ্ছা আমাদের নেই। তবুও প্রধানমন্ত্রী অতিদ্রুত প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়ন না করলে কেন্দ্রীয় কমিটি অনুযায়ী যে ঘোষণা দেয়া হবে সে অনুযায়ী আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

উল্লেখ্য, গত ১২ এপ্রিল জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারি চাকরিতে সবধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।