শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অদম্য শেখ হাসিনা

ডেক্স রিপোর্ট : বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২২ এপ্রিল সংখ্যায় করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করা হয়েছে। তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, “প্রায় ১৬ কোটির বেশি মানুষের বসবাস বাংলাদেশে। সেখানে দুর্যোগ কোনো নতুন ঘটনা নয়। আর এই করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন তিনি (শেখ হাসিনা)। তাঁর এই ত্বরিত সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বিষয়টিকে ‘প্রশংসনীয়’ হিসেবে অভিহিত করেছে।” যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিলসহ অনেক দেশে সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা যখন এই ভাইরাস মোকাবেলায় সমালোচিত তখন জনবহুল একটি দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে দৃঢ় মনোবল নিয়ে লড়াইয়ের স্বীকৃতি পেলেন শেখ হাসিনা।

এর আগে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে উল্লেখ করে, নিয়মিত দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি দুর্গত মানুষকে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি সরাসরি মনিটর করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। ৬৪ জেলার ত্রাণ কার্যক্রমের সমন্বয়সাধনের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন ৬৪ জন সচিবকে। সভা করছেন, ভিডিও কনফারেন্সে নিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের খোঁজ, দিচ্ছেন নানা নির্দেশনা। দল-মত না দেখে সঠিক তালিকা তৈরি করে প্রকৃত অসহায় মানুষের কাছে ত্রাণসহ সরকারের সহযোগিতা পৌঁছে দিতে জনপ্রতিনিধি, দলের নেতাকর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিচ্ছেন নির্দেশ। এসএমএসের মাধ্যমেও কেউ সহযোগিতা চাইলে তা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত ৮৫ জন জনপ্রতিনিধিকে বহিষ্কারও করেছেন এরই মধ্যে।

করোনাভাইরাসের মধ্যে বিপুল বেগে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ সৃষ্ট দুর্যোগ পরিস্থিতিও শক্ত হাতে মোকাবেলা করেছেন শেখ হাসিনা। গত ৩ জুন ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে ‘ফাইটিং সাইক্লোনস অ্যান্ড করোনাভাইরাস : হাউ উই এভাকুয়েটেড ডিউরিং আ প্যানডেমিক’ শিরোনামে এক নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “বাংলাদেশ সুপার-সাইক্লোন ‘আম্ফান’ এবং কভিড-১৯ এর মতো দুটি বিপদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। আমরা অন্যদেরকে অনুরূপ বিপদ মোকাবেলায় পাঠ দিতে পারি।”

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। গণপরিবহন ও আন্ত জেলা যানবাহন চলাচল বন্ধ করে সবাইকে বলা হয় ঘরে থাকতে। সাধারণ ছুটি কয়েক দফা বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম সমন্বয় করে আসছেন। এই সংকট মোকাবেলায় তিনি ১ এপ্রিল ৩১টি, ১৬ এপ্রিল ১০টি, ২০ এপ্রিল ১৩টি এবং ২৭ এপ্রিল ১০টি নির্দেশনা দেন। কিভাবে হাঁচি-কাশি দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে তাও তিনি ভিডিও কনফারেন্সে নিজে সবাইকে দেখিয়েছেন। নিজে কাজ করছেন মাস্ক ও গ্লাভস পরে। আসন্ন বাজেট অধিবেশন সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক থেকে শুরু করে অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে প্রয়োজনীয় সভা নিয়মিত করে যাচ্ছেন।

কভিড-১৯ ঠেকানোর লড়াইয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে গণভবন থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামেও অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ১৫ মার্চ আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠান সার্কের নেতাদের সঙ্গে, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের আয়োজনে এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে, ৪ জুন যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত একটি ভার্চুয়াল বৈশ্বিক টিকা সম্মেলনে যোগ দিয়ে মূল্যবান মতামত রাখেন তিনি।

গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পর্যন্ত মোট ১১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারের ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা দেশের মোট জিডিপির ৩.৭ শতাংশ। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের সংস্থাগুলোর জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার, ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্পের চলতি মূলধন সরবরাহের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। তাঁর নির্দেশে করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে ঈদ উপলক্ষে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করে সরকার।

করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন দুই হাজার ডাক্তার ও পাঁচ হজার ৫৪ জন নার্স নিয়োগ দিয়েছে। আরো পাঁচ হাজার স্বাস্থ্য টেকনোলজিস্ট নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সংকট মোকাবেলায় তিন হাজার মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেসব সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যক্ষভাবে করোনাভাইরাস রোগীদের নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের বিশেষ সম্মানী দেওয়া হবে। এ জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ব্যবস্থা করা হয়েছে বীমার। দায়িত্ব পালনকালে যদি কেউ আক্রান্ত হন, তাহলে পদমর্যাদা অনুযায়ী প্রত্যেকে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পাবেন। মৃত্যুর ক্ষেত্রে এই পরিমাণ ৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্য বীমা ও জীবন বীমা বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৭৫০ কোটি টাকা।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।