শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ০১:৪৯ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
ঘটনাবহুল সিরিজ দক্ষিণ আফ্রিকার

স্পোর্টস ডেস্ক  : এক সিরিজে কত ঘটনা। কোনটাকে প্রাধান্য দেবেন আপনি। যার শুরু হয়েছিল দু’দলের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, নিষেধাজ্ঞা-মুক্তিতে। মাঝে ঘটে যাওয়া বল টেম্পারিং কান্ড, আরো কত কি! শেষটাও হলো স্মরণীয়। একদিকে ঐতিহাসিক জয়ের আনন্দঅশ্রæ, অন্যদিকে পরাজয়ের বেদনাকাব্য।
শেষ কবে অস্ট্রেলিয়া এমন যাচ্ছেতাইভাবে কোন সিরিজ হেরেছিল সেটাও আসতে পারে আলোচনায়। ৪-০ ব্যবধানে অ্যাসেজ জয়ের পর দক্ষিণ আফ্রিকায় পা রাখা, অতঃপর ৩-১ ব্যবধানে পরাজয়। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে জোহানেসবার্গের বাতাস ভারী হয়ে উঠে মরনে মর্কেলের বিদায়ের সুরে। ওদিকে অজি কোচ হিসেবে ড্যারেন লেহম্যানেরও খেলে পেলেছেন শেষ টেস্ট।
ওয়ান্ডারার্সের মাঠে জয়ের মঞ্চটা সেই দ্বিতীয় দিন থেকেই প্রস্তুত করে আসছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ দিনে বাকি ছিল কেবল আনুষ্ঠানিকতা। জিততে হলে শেস দিনে করতে হবে ৫২৪ রান। এর চেয়ে হাতের ৭ উইকেট নিয়ে দিন পার করার চেষ্টাটাই তুলনামূলক সহজ! কিন্তু স্মিথ-ওয়ার্নারদের হারিয়ে বিধ্বস্ত অস্ট্রেলিয়ার সেই শক্তি কোথায়। ভার্নন ফিল্যান্ডার সেটাকে করে তোলেন আরো অসম্ভব। ফল? ৯০ মিনিটের আগেই সব শেষ। ৩ উইকেটে ৮৮ রান থেকে ১১৯ রানেই শেষ টিম পাইনের অস্ট্রেলিয়া। হার ৪৯২ রানের। ১৯৩৪ সালের পর রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তার চেয়েও বড় মহত্ব ১৯৭০ সালের পর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া গেরো ছাড়ানো। প্রায় পাঁচ দশক পর ঘরের মাঠে অজিদের বিপক্ষে সিরিজ জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা।
দিনের প্রথম বলেই বিদায় নেন মার্শ ভ্রাতৃদ্বয়ের অগ্রজ শন। ঐ ওভারেই দুই বল পর ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন ছোট ভাই মিচেলও। একই পথের পথিক ছিলেন অধিনায়ক টিম পাইন, প্যাট কামিন্স ও চাদ সেয়ার্স। ১২ রানের ব্যবধানে নেই ৬ উইকেট! ছয়টিই ফিল্যান্ডারের শিকার। ইনিংসে ২১ রানে ৬ উইকেট নেন ফিল্যান্ডার, ম্যাচে ৫১ রানে ৯টি। অজিদের শেষ উইকেটের প্রচেষ্টা (!) থেমে যায় ১৯ রান ও ৬ ওভার পাড়ি দেয়ার পর, রান আউটটে।
তবে এসব কোন কিছুর জন্যে নয়, ক্রিকেট ইতিহাসে এই সিরিজ স্বরনীয় হয়ে থাকবে স্মিথ-ওয়ার্নারদের নেক্কারজনক প্রতারণার কারণে। বল টেম্পারিংয়ের নতুন ইতিহাস গড়ে অস্ট্রেরিয়া। পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়ে কেপটাউনে তৃতীয় টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে অজি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দেন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের বল টেম্পারিংয়ের কথা। আইসিসি স্মিথকে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করে, আর পুরো দলকে জরিমানা করে ম্যাচ ফির পুরোটাই। কিন্তু সম্মান ঐতিহ্য হারানো ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া অভিযুক্ত স্মিথ ও ওয়ার্নারকে নিষিদ্ধ করে পুরো এক বছর। ফেরার পর এক বছর অধিনায়কত্ব করতে পারবেন না স্মিথ, ওয়ার্নার কখনোই না। মাঠে বল টেম্পারিং কার্যকর করা তরুণ খেলোয়াড় ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে নিষিদ্ধ করে ৯ মাস।
সিরিজের মাঝপথে অধিনায়ক-সহ আধিনায়ককে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর দুরাভিসন্ধি হয়ত অস্ট্রেলিয়া করেনি। ডি ভিলিয়ার্স-আমলারাও পেয়ে যান প্রিয় সতীর্থকে বিদায়ের মধুর উপলক্ষ্য। সিরিজ সেরার পুরষ্কার নিতে এসে মর্কেলকে মিস করার কথা বলেন সিরিজের আরেক আলোচিত নাম কাগিসো রাবাদা। ‘তার রসিকতা, তার নেতৃত্বকে খুব মিস’ করবেন বলে জানান এই পেসার। সিরিজ জয়ে দলের বোলারদের ৮০ উইকেট নেয়ার সক্ষমতাকে প্রাধান্য দিলেও অনেকটা সময় জুড়ে মর্কেলের গুনগানেই কাটিয়ে দেন অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস।
আর মর্কেল? কথা বলতে গিয়ে ভাষা খুজে পাচ্ছিলেন না অশ্রসিক্ত এই পেসার। ধরা গলায় জোহানেসবার্গ দর্শকদের অভিভাদনের জবাবে বিদায়ী পেসার বলেন, ‘এমন আবেগঘন দিনে কথা বলা কষ্টের। আমাকে দেয়া সকল সুবিধার জন্য সং¯িøষ্ঠ সকলকে ধন্যবাদ।’ বিদায়ের এই দিনেও পেশাদারিত্বকে ভুলে যাননি ৩৩ বছর বয়সী। এমন বিদায় উপহার দেয়ার জন্য ম্যাচসেরা ফিল্যান্ডারকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। সতীর্থদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তাদেরকে খুব মিস করব, তারা আমার ভাই।’
শেষ টেস্টে বলার মত কিছু করেননি। দুই ইনিংস মিলে নিয়েছেন ৩ উইকেট। তবে এই ইনিংসের জন্য নয়, পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই তিনি যা দিয়েছেন ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকাকে তা ইতিহাস হয়েই রবে। ৮৬ টেস্টে ৩০৯টি উইকেট নেয়া তো একেবারেই ছেলেখেলা নয়। ওয়ানডেতে ১১৭ ম্যাচে তার নামের পাশে ২৬৮ উইকেট।
স ং ক্ষি প্ত স্কো র
দক্ষিণ আফ্রিকা : ৪৮৮ ও ৩৪৪/৬ ডিক্লে.
অস্ট্রেলিয়া : ২২১ ও (লক্ষ্য ৬১২) ৪৬.৪ ওভারে ১১৯ (রেনশ ৫, বার্নস ৪২, খাজা ৭, হ্যান্ডসকম্ব ২৪, শন ৭, মিচেল ০, পাইন ৭, কামিন্স ১, লায়ন ৯, সেয়ার্স ০, হ্যাজেলউড ৯*; রাবাদা ০/১৬, ফিল্যান্ডার ৬/২১, মহারাজ ১/৪৭, মর্কেল ২/২৮, মারক্রাম ০/৬)।
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৯২ রানে জয়ী।
সিরিজ : ৪ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : ভার্নন ফিল্যান্ডার (দক্ষিণ আফ্রিকা)।
সিরিজ সেরা : কাগিসো রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা)।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।