শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
জাপার মহাসচিব রুহুল আমিনের সম্পদ আড়াই কোটি থেকে বেড়ে ৪৪ কোটি !আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপকেও হার মানায়

ডেক্স রিপোর্ট : মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ও তার স্ত্রী রত্না আমিনের ২০ গুণ সম্পদ বেড়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী রিটার্নিং কর্মকর্তা দফতরে দাখিল করা মনোনয়নপত্রের হলফনামায় দেয়া তথ্যে মিলেছে এর প্রমাণ।

২০০৮ সালে যেখানে এ দম্পতির সম্পদের পরিমাণ ছিল আড়াই কোটি টাকা, সেখানে তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৪ কোটি। যদিও স্থানীয় জনসাধারণ মনে করেন, দুর্নীতি দমন কমিশন খতিয়ে দেখলে এ সম্পদের পরিমাণ আরও বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, ‘এরা কি তাহলে আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছিলেন? নাকি রাজনীতির নামে বেপরোয়া অনিয়ম-দুর্নীতির ফসল এ হঠাৎ বেড়ে যাওয়া বিপুল অর্থ সম্পদ? অবশ্যই এর তদন্ত হওয়া দরকার।’

এদিকে বরিশাল জেলার ৬ আসনে মনোনয়ন দাখিল করা আওয়ামী লীগ-বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের প্রায় প্রত্যেকে কোটিপতি। সেসব হরেক রকম কৌতূহলী তথ্য যুক্ত হয়েছে তাদের নিজ নিজ হলফনামায়। অবশ্য একজন তো নিজেকে রীতিমতো বেকার বলে দাবি করেছেন। আবার বেশির ভাগ প্রার্থীর স্ত্রীরা বেশি সম্পদশালী।

বরিশাল জেলার ৬ নির্বাচনী এলাকায় এবার জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ৫১ নেতা। আওয়ামী লীগ-বিএনপি এবং জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে নামা এ এমপি প্রার্থীদের মধ্যে বরিশাল-৬ আসনে মনোনয়ন দাখিল করা জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রত্না আমিন এমপি এবং বরিশাল-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক হুইপ শহিদুল হক জামালসহ ৫ জন নিজেদের উল্লেখ করেছেন সশিক্ষিত হিসেবে।

এছাড়া এদের মধ্যে ২ জন এসএসসি পাস এবং ৩ জনের লেখাপড়া থেমেছে এইসএসসি পাসের পর। ৬ জন পড়াশোনা করেছেন মাদ্রাসা শিক্ষায়। বাকিদের ৪ জন প্রকৌশলী, ৫ জন আইনজীবী, ১৭ জন স্নাতকোত্তর এবং বাকিরা গ্র্যাজুয়েট। নিজেকে বেকার এবং কোনো আয় করেন না বলে উল্লেখ করেছেন বরিশাল-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী সরফুদ্দিন সান্টু।

হলফনামায় দেয়া তথ্যানুযায়ী, প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামা এসব নেতাদের অনেকেই তাদের স্ত্রীদের তুলনায় দরিদ্র। বার্ষিক আয় ৫-৬ লাখ টাকা। অথচ রয়েছে একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি। রাজধানী ঢাকার গুলশান-বনানীর মতো জায়গায় ৫-৬ তলা বাড়ির মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ২৫-৩০ লাখ টাকা।

অনেকে বলছেন, পৃথিবীর কোথাও না হলেও এটি বাংলাদেশ বড় আশ্চর্য বিষয় হিসেবে অন্যতম স্থান দখল করে নিতে পারে। সব মিলিয়ে প্রার্থীদের দাখিল করা এসব হলফনামা নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব তথ্য জানার পর চায়ের টেবিলে ভোটের আড্ডায় নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। তবে দাখিল করা এসব হলফনামা বিশ্লেষণে একটি বিষয় পরিষ্কার যে বর্তমান সংসদে থাকা নেতাদের মধ্যে আসন্ন নির্বাচনেও যারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের প্রায় সবাই-ই ঈর্ষণীয় অর্থ-বিত্তের মালিক।

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রত্না আমিন তার দাখিল করা হলফনামায় নিজেকে উল্লেখ করেছেন সশিক্ষিত হিসেবে। ৫৫ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯৬ টাকা আয় দেখান রত্না এবং তার স্বামী আরেক সংসদ সদস্য জাপা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের ব্যাংকে জমা নগদ অর্থ, শেয়ার এবং অন্যান্যসহ মোট অস্থাবর সম্পদের মূল্য দেখানো হয়েছে ৪০ কোটি ৯৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮৫৫ টাকা।

নির্বাচনী এলাকা এবং রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান মিলিয়ে এ দম্পতির মালিকানায় রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩শ’ শতাংশ জমি। যার মূল্য বলা হয়েছে, ২ কোটি ৮২ লাখ ১৫ হাজার ৫৮৪ টাকা।

এছাড়া আরও ৩০ কাঠা জমি দেখানো হলেও সেটির মূল্য হলফনামায় উল্লেখ করা হয়নি। অবশ্য তাদের স্বামী-স্ত্রীর ব্যবহারের জন্যে রয়েছে ৬টি গাড়ি। এর মধ্যে ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো রয়েছে কমপক্ষে ৩টি। হলফনামায় ১০০ ভরি স্বর্ণ থাকার কথাও উল্লেখ রয়েছে।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় দাখিল করা হলফনামায় দেয়া তথ্যানুযায়ী স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে ২ কোটি ৪৮ লাখ ২১ হাজার ৬৮০ টাকার সম্পদের মালিক ছিলেন রুহুল আমিন ও রত্না আমিন। কিন্তু মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে ২০১৮ সালে এসে সেই সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে ৪৩ কোটি ৭৬ লাখ ৯৩ হাজার ৪৩৯। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে ২০ গুণেরও বেশি বেড়েছে এ রাজনৈতিক পরিবারের সম্পত্তি।

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে বরিশালের ৬ আসনে প্রার্থী হিসেবে হলফনামা দাখিল করা ৫১ জনের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তিও জাতীয় পার্টির। তিনি হলেন বরিশাল-৩ আসনে মনোনয়ন দাখিল করা জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু। হলফনামায় দেয়া তথ্যানুযায়ী স্নাতক ডিগ্রিধারী এ নেতার বার্ষিক আয় ৬ কোটি ১০ লাখ ৮৪ হাজার ৪৬৪ টাকা।

নগদ অর্থসহ তার অস্থাবর সম্পত্তির মূল্যমান টাকার অংকে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৩০ হাজার ৪৫৩। স্থাবর সম্পদের মূল্যমান ২১ কোটি ৪৭ লাখ ৪৩৭ টাকা। এছাড়া গোলাম কিবরিয়ার ঋণের পরিমাণ ৭৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৩৮। এসবের বাইরে ১৫০ তোলা সোনা রয়েছে টিপুর।

৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে এমপি হওয়া বরিশাল-৪ আসনের এমপি আওয়ামী লীগ নেতা পঙ্কজ নাথের সম্পদের বর্ণনাও ঈর্ষণীয়। এবারও দলীয় মনোনয়ন পাওয়া পঙ্কজ তার হলফনামায় নিজের বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছেন ৩৫ লাখ ৫০ হাজার ১৭ টাকা। নগদ অর্থসহ তার অস্থাবর সম্পত্তির মূল্যমান টাকার অংকে ১ কোটি ৩২ লাখ ৯ হাজার ৮৭। এক্ষেত্রে তার স্ত্রীর মালিকানায়ও রয়েছে ৩৩ লাখ ৪৪ হাজার ২২ টাকার অস্থাবর সম্পদ।

স্থাবর সম্পদ প্রশ্নে স্ত্রীর তুলনায় দরিদ্র পঙ্কজ। তার স্ত্রী যেখানে ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩ টাকার স্থাবর সম্পদের মালিক সেখানে পঙ্কজের সম্পদের পরিমাণ ২৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া ৮ লাখ টাকা দেনা রয়েছে পঙ্কজের।

ক্ষমতাসীন দলের হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে বর্তমানে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদায় থাকা বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২ কোটি ৪৮ লাখ ৫৮ হাজার ১৩৭ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মূল্যমান টাকার অংকে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৫১ হাজার ২২২।

স্ত্রী শাহান আরা আবদুল্লাহর মালিকানায় রয়েছে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৮৬ হাজার ৫৮৪ টাকার অস্থাবর সম্পদ। এছাড়া ৬০ একর জমি এবং ১ কোটি ৮১ লাখ ৪৫ হাজার ২৫৮ টাকা ব্যায়ে নির্মিত একটি ভবন রয়েছে হাসানাতের।

হলফনামায় দেয়া তথ্যানুযায়ী বরিশাল-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া শাহে আলমেরও রয়েছে বিপুল অর্থবিত্ত। তার এবং তার স্ত্রীর বার্ষিক আয় যথাক্রমে ৪২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৯৭ ও ৪ লাখ ১২ হাজার টাকা। দু’জনার মালিকানায় থাকা নগদ অর্থ ও অন্য অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৫ টাকার।

এ দম্পতির স্থাবর সম্পদের মূল্যমান ৭৮ লাখ ৪৫ হাজার ২ টাকা। এছাড়া ৪০ ভরি সোনা, ২টি মৎস্য ও একটি পোলট্রি খামার রয়েছে তাদের। দেনা ১ কোটি ৬১ হাজার ৮২২ টাকা।

দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ-বিত্তের মালিক বরিশাল-৫ (সদর) আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া দলের যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। তার বার্ষিক আয় ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৯৮৮ টাকা। বিচারাধীন থাকা ১৩ মামলার আসামি সরোয়ারের স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে সম্পদের পরিমাণ ৬ কোটি ২৮ লাখ ১২ হাজার ৯২৬ টাকা। কোনো রকম দায়-দেনা নেই এ বিএনপি নেতার।

স্ত্রীর তুলনায় বেশ দরিদ্র বরিশাল-২ আসনে বিএনপির প্রার্র্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করা সরফুদ্দিন সান্টু। বর্তমানে বেকার সান্টুর নেই কোনো বার্ষিক আয়। তবে আয় না থাকলেও হলফনামার তথ্যানুযায়ী ৯৯ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ৪টি গাড়ি রয়েছে সান্টু পরিবারের। তার নিজের নগদ অর্থসহ অস্থাবর সম্পদের মূল্য যেখানে ১ কোটি ৪৫ লাখ ২১ হাজার ৭২৮ টাকা সেখানে তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মূল্যমান টাকার অংকে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৫।

এ আসনে মনোনয়ন দাখিল করা বিএনপির আরেক হেভিওয়েট নেতা সাবেক হুইপ শহিদুল হক জামালের বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৭৫ হাজার ২০০ টাকা। ২ তলা ২টি এবং ৬ তলা একটিসহ ৪টি বাড়ির মালিক এ বিএনপি নেতা এবং স্ত্রীর নগদ অর্থ ও অস্থাবর সম্পত্তির মূল্যমান টাকার অংকে ৩ কোটি ৬ লাখ ১০৫।

বরিশাল-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করা দু’জনের একজন সাবেক এমপি জহিরুদ্দিন স্বপনের দাখিল করা হলফনামায়ও মিলেছে বিপুল অর্থ-বিত্তের হিসাব। ১৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা বার্ষিক আয় করা স্বপন ও তার পরিবারের অস্থাবর সম্পত্তির মূল্যমান ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৩৪ হাজার ৮০৫। এছাড়া দালান, জমি এবং ফ্ল্যাটসহ আরও প্রায় কোটি টাকার সম্পদের বর্ণনা তিনি দিয়েছেন তার হলফনামায়।

বরিশাল-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করা বিএনপির সেলিমা রহমান এবং অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিনও তাদের সম্পদের তালিকায় দিয়েছেন কোটি কোটি টাকার অর্থ-বিত্তের বর্ণনা। জয়নুলের স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে রয়েছে ২ কোটি ৭২ লাখ ৮৭ হাজার ৮২০ টাকার সম্পদ। সেলিমার স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৬৭ লাখ ১৯ হাজার ৬৭ টাকা।

বরিশালের ৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী হওয়া নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলাও সেলিমার বিরুদ্ধে। ৩২টি মামলার আসামি তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫টি মামলার আসামি জয়নুল।

দাখিল করা হলফনামায় বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পদের বর্ণনায় যারা কোটি কোটি টাকার মালিক তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন বরিশাল-১ আসনে বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান, বরিশাল-৩ এ স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান ও সেখানকার বর্তমান এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ টিপু সুলতান ও বরিশাল-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি আবুল হোসেন।

এছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করাদের মধ্যেও রয়েছেন বেশ কয়েকজন কোটিপতি বিত্তশালী প্রার্থী। যুগান্তর

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।