শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০২:২৫ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
ঢাকা বন্ড কমিশনারেট : দু’ডিসির স্পীডমানি বাণিজ্য : দৈনিক আয় ৮ লাখ , মাসে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা

নিউজ ডেক্স : ঢাকার কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের ইউপি শাখায় কর্মরত দুই উপ-কমিশনারের দৈনিক অবৈধ উপার্জন ৮ লাখ টাকা বলে অভিযোগ ওঠেছে।তবে সংশ্লিষ্ট কমিশনাররা এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ। একজন তো প্রসংগ তুলতেই ফোন লাইনটি খেলে দেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগে এ তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে- দু’উপ-কমিশনার ইউপি শাখা-১ ও ইউপি শাখা-২ এ কর্মরত থেকে বন্ড লাইসেন্সধারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ইউপি (ইউটিলাইজেশন পারমিশন) দিয়ে প্রতি ইউপি থেকে ৫ হাজার টাকা করে ব্যক্তিগতভাবে ¯স্ডীড মানি হিসেবে নিচ্ছেন।

বন্ড কমিশনারেট সূত্রে জানা যায়, ৬টি বন্ড ডিভিশনে ৩টি দেখেন উপ-কমিশনার ইউপি শাখা-১ ও বাকি তিনটি দেখেন উপ-কমিশনার ইউপি শাখা-২। এ ৬টি ডিভিশন-এর অধীনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দৈনিক ইউপি নিয়ে থাকেন ১৫০ থেকে ১৭০টিরও বেশি।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, গড়ে দৈনিক ১৬০টি ইউপি হয়ে থাকে সে হিসাবে দু’কর্মকর্তা প্রতিদিন ৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে নিয়ে যায়। সে হিসাবে প্রতি মাসে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা তাদের থাকে। এছাড়াও তারা অন্য আরও বেশ কয়েকটি খাত থেকে প্রতি মাসে বিপুল অংকের অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকেন। ইউপি শাখার সাবেক এক সহকারী কমিশনার বলেছেন, প্রতিটি ইউপিতে যে ৫ হাজার টাকা করে নেয়া হয় যা তো ঘুষ না ¯িপ্রট মানি। এ প্রসঙ্গে একজন ব্যবসায়ী জানালেন, ¯িপ্রট মানি যদি প্রতি ইউপিতে ৫ হাজার টাকা করে নেয় তাহলে তারা ঘুষ নেয় কত!
বন্ড সূত্রে জানা যায়, দু’ উপ-কমিশনার বন্ড কমিশনারেটের এক ইন্টার্নাল বদলীর আদেশে গত ২০২০ এর ২৬ আগস্ট থেকে ইউপি শাখা-১ ও ২ এ কর্মরত রয়েছেন। এ বিষয়ে একাধিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা জানালেন, দু’ উপ-কমিশনার দু’জনকে ম্যানেজ না করলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ঝামেলায় ফেলে দেয়, তাই বাধ্য হয়ে তাদের চাহিদা মতো টাকা দিয়ে থাকেন। ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করেছে, একেতো প্রাপ্যতা কম তার উপরে এদের চাহিদার শেষ নেই। চাহিদা মাফিক টাকা না দিলেই এসুতো ওসুতো, এ কাগজ নেই ও কাগজ নেই দেখিয়ে নেমে আসে আইনি নানা ঝামেলা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় অভিযোগপত্রে যা উল্লেখ রয়েছে তার যথার্থ প্রমান মিলছে।

এ ব্যাপারে একাধিক ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বন্ড কমিশনারেট হলো ঘুষের সাম্রাজ্য, এখানে ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয় না। বিশেষ কৌশলে তারা এ ঘুষের টাকা নিয়ে থাকেন। কেউ যাতে জানতে না পারে দেখতেও না পারে সেজন্য প্রতিটি গেটে রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সে দু’উপ-কমিশনারের একজন হলেন বিসিএস-২৯ ব্যাচের ও অন্যজন হলেন বিসিএস-৩০ ব্যাচের কর্মকর্তা। তারা ইতিপূর্বে যেসব কমিশনারেট ও কাস্টমস হাউসে কর্মরত ছিলেন সেখানে ঘুষ-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতাই ছিল তাদের কাজ। ঘুষ ছাড়া তারা কোন ফাইলে স্বাক্ষর করেন না।
বর্তমানে তারা প্রত্যেকেই শত কোটি টাকার মালিক জানালেন ২৯ ব্যাচের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক কর্মকর্তা। বন্ড কমিশনারেটের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ভাষায়, কিছু অসাধু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণে সৎ ও ভালো কর্মকর্তারা কোণঠাসা হয়ে রয়েছেন, অসৎ কর্মকর্তাদের কারণে সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিপদে পড়েন। ঢাকা বন্ড কমিশনারেটের ইউপি শাখায় কর্মরত উপ-কমিশনার মোসা: ইফতেখার জাহান-এর কাছে ফোন দিলে তিনি ফোনটি রিসিভ করে সালাম বিনিময়ের পর প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ করলে ফোনটি কেটে দেয়। তারপর একাধিকবার ফোন দেয়ার পর তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ দু’উপ-কমিশনারের দুর্নীতির বিষয়ে ঢাকা বন্ড কমিশনারেটের কমিশনারকে ফোন দিলে তার পি.এ জানালেন, স্যার অন্যত্র বদলি হয়েছেন, খুব ঝামেলার ভেতরে রয়েছেন, তাই কথা বলতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের কোন কথা থাকলে তাকে বলতে হবে।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।