বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
প্রশ্নপত্র ফাঁস : ১২ রাঘব বোয়ালের প্রতি গোয়েন্দা নজরদারি

একুশে বার্তা ডেক্স : প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের ১২ রাঘব বোয়ালের প্রতি নজরদারি শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। এই ঘটনার সাথে ওই রাঘব বোয়ালদের যোগসাজশের বিষয়ে গোয়েন্দারা অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানা গেছে। এর মধ্যে কয়েকজন রয়েছেন যারা ক্ষমতার অনেক কাছাকাছি বলে জানা গেছে।

বিভিন্ন সময় পরীক্ষা শুরু হলেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর পাওয়া যায়। তবে বরাবরই এ খবর উড়িয়ে দিয়ে আসছেন শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা। তবে এ বছর ব্যাপক হারে এই ফাঁসের খবর পাওয়া যায়। এ বছরও প্রথম দিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও অনেকেই প্রশ্নপত্রসহ পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে আটক হন।

এর মধ্যে পরীক্ষার্থীরাও রয়েছেন। যাদেরকে প্রশ্নপত্রসহ আটক করেছে পুলিশ তাদের মধ্যে রয়েছেন অভিভাবক এবং শিক্ষকেরাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরকেও আটক করা হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে। কিন্তু গ্রেফতার হচ্ছে না শুধু মূল হোতারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিক্ষা বোর্ডের অনেক কর্মকর্তাই রয়েছেন যারা বছরের পর বছর বোর্ডে চাকরি করছেন। তিন বছরের জন্য ডেপুটেশনে এসে ৭-৮ বছর চাকরি করছেন এমনও অনেকে আছেন। তারা নানা অপরাধী সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস, নম্বর শিটে পরিবর্তন, বেশি নম্বর পাইয়ে দেয়া ইত্যাদির সাথে তারা সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বছরের পর বছর তারা বোর্ডে কর্মরত থাকায় অনেক কিছুই তাদের চোখের ইশারায় ঘটে থাকে। নানা অপরাধের সাথে তারা জড়িত থাকলেও বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে তারা। তারা ক্ষমতার খুবই কাছাকাছি। যে কারণে অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন তারা। তদন্ত তাদের কাছ পর্যন্ত পৌঁছছে না। এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে রাজি হন না খোদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও।

এ দিকে সম্প্রতি যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন তাদের অনেকেই বলেছেন, অনেক হাত বদল করে তারা এই প্রশ্ন পেয়েছেন। তারা বলেছেন, এর পেছনে কারা এবং মূল হোতা কারা তা তারা জানেন না। তারা কারো কাছ থেকে পেয়েছেন আর কিনে নিয়ে তা অপরের কাছে বিক্রি করেছেন। অনেকটা শেয়ার কেনাবেচার মতোই। হাত বদল হচ্ছে দাম বাড়ছে। আবার সময় শেষ হয়ে গেলে কারো কাছে কোনো মূল্য নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশ গোয়েন্দারা এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা তদন্তে নেমে অনেক রাঘব বোয়ালের নাম পেয়েছেন। এর মধ্যে ১২ রাঘব বোয়াল রয়েছেন যারা বিভিন্ন দফতরে কর্মরত। বেশির ভাগই বোর্ডে কর্মরত রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হতে শুরু করে পরিদর্শক এবং সিস্টেম অ্যানালিস্ট পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। এদের অনেকেই ডেপুটেশনে বোর্ডে এসেছেন। কিন্তু তারপর বোর্ডকে ঘরবাড়ি বানিয়ে নিয়েছেন। নিয়মানুযায়ী তিন বছর পরে বদলি হওয়ার কথা থাকলেও অনেকে ৬-৭ বছর বোর্ডে চাকরি করছেন এমনও রয়েছেন।

অনেকে রয়েছেন, যারা শিক্ষকতা করে বছরে যে টাকা উপার্জন করেছেন, বোর্ডে দায়িত্ব পালন করে ঘণ্টায় সেই টাকা উপার্জন করছেন। যে কারণে ঘুরে ফিরে অনেককে ম্যানেজ করে তারা শিক্ষা বোর্ডেই থেকে যাচ্ছেন। এমনকি, সাধারণ কর্মচারীরাও কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অধিদফতর ও বোর্ডে চাকরি করে। তাদের একটি বড় উপার্জন হচ্ছে প্রশ্নপত্র ফাঁস। কিন্তু এই সিন্ডিকেটের কেউ গ্রেফতার হচ্ছে না।

সম্প্রতি রাজধানীর পৃথক দুই এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় শিক্ষামন্ত্রীর পিও মোতালেব এবং মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিনকে। এই দুই কর্মচারীকে গ্রেফতার করার পর খোঁজ নিয়ে জানা যায় তারা কোটি কোটি টাকার মালিক। বাড়ি-গাড়ি, নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক তারা। এমনকি নাসির তার শ্বশুরবাড়ি এলাকায় একটি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। এদের সাথে মন্ত্রণালয়ের একটি বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে। যারা দীর্ঘ দিন ধরে পরীক্ষায় জালিয়াতিসহ নানা অসৎ কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত। মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট অনেক দফতরের কিছু অসাধু লোককে নিয়ে তাদের সিন্ডিকেট রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নাসির ও মোতালেব গ্রেফতার হলেও তাদের ওই সিন্ডিকেটের সবাই এখনো সক্রিয়। তাদের অনেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।