ডেক্স রিপোর্ট : রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেট ও ওয়েটিং রুম নির্মাণে প্রায় কোটি টাকা
আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চার
প্রকৌশলীকে অভিযুক্ত করা হয়। টাকা আত্মসাতে জড়িতদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও
দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা হয়েছে। তবে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল মালেকের দপ্তর
থেকে এ-সংক্রান্ত দুর্নীতির নথি গায়েব হয়ে গেছে। এ কারণে বেবিচক গঠিত তদন্ত কমিটি
প্রতিবেদন দাখিল করতে পারছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিযুক্তদের বাঁচাতেই নথিগুলো চুরি করা
হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন- বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. শহীদুজ্জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী
(কিউএস) এ. এইচ. এমডি নুরউদ্দিন চৌধুরী ও নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. শরিফুল ইসলাম।
জানা যায়, গেট নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলীদের বিষয়ে তথ্য ও ফাইল চেয়ে
সম্প্রতি প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠি দেন বেবিচকের পরিচালক (প্রশাসন) জহিরুল ইসলাম। চিঠিতে
বলা হয়, বিমানবন্দরে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর (পিঅ্যান্ডডি/কিউএস) কার্যালয়ের গেট ও ওয়েটিং
রুম নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া
হয়েছে। প্রথমবার চিঠি দেওয়ার পরও প্রয়োজনীয় নথি না দেওয়ায় আবার তাগাদা দিয়ে চিঠি দেওয়া
হয়। এভাবে মোট চারবার চিঠি দেওয়া হলেও দুর্নীতির তথ্য ও দলিলপত্র দেওয়া হয়নি। পরে
বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল ডিভিশন-২) এবং সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (সিভিল
ডিভিশন-২) স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে পরিচালক প্রশাসনকে জানানো হয়, গেট নির্মাণে কোটি টাকার
অনিয়ম-দুর্নীতির পুরোনো ওই ফাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর পরই নথি গায়েব হওয়ার বিষয়টি ধরা
পড়ে।
তবে নথি গায়েবের বিষয়টি অস্বীকার করেন বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল মালেক। চিঠির
কথা উল্লেখ করা হলে তিনি সমকালকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বলেন, দুর্নীতির নথি না পাওয়ার কারণে তদন্ত প্রতিবেদন
দাখিল করা যাচ্ছে না। বেবিচকের প্রকৌশল বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, গেট নির্মাণে
অনিয়ম-দুর্নীতি ও কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে মামলা হলে ২২
লাখ টাকা ফেরত দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে প্রমাণ হয়, ওই গেট নির্মাণে বড় ধরনের অনিয়ম-
দুর্নীতি হয়েছে।
২০১৭ সালে শাহজালালে সিভিল সার্কেলের প্ল্যানিং অ্যান্ড ডিজাইন কোয়ালিটি সার্ভিসের প্রবেশ
পথে একটি গেট নির্মাণ করা হয়। ওই গেট নির্মাণের সঙ্গে অর্থ ব্যয়ের কোনো মিল নেই। অসাধু
ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের যোগসাজশে দুর্নীতি করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক
মো. আশিকুর রহমান গেট নির্মাণে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সিনিয়র উপসহকারী প্রকৌশলী মো.
কামরুজ্জামান ও জহির উদ্দিনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দুদকে সরবরাহ করার জন্য
বেবিচককে চিঠি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান জানান, গেট নির্মাণসহ
বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে। এ
ছাড়া তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার তদন্ত চলছে। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড়
দেওয়া হবে না। তবে দুর্নীতির নথি গায়েব হওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা
হবে।
সূত্র: সমকাল