বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৬ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
„`বেশি বাড়াবাড়ি করলে আবার জেলে পাঠিয়ে দেবো’

ডেক্স রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, বিএনপি যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তবে খালেদা জিয়াকে আবারো কারাগারে পাঠিয়ে দেবো। তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে কোনো কথা নেই, কিন্তু একটা মানুষের গায়ে হাত দিলে ছাড়বো না। আর বিএনপি যে এত লম্ফঝম্প করে তাদের দলের মাথা কোথায়? সবাই তো দুর্নীতিবাজ, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। দেশের মানুষ কেন তাদের পাশে থাকবে?  প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে নির্বাচন। আমরা মানুষের মন জয় করে এবং দেশের উন্নয়ন করেই নৌকার পক্ষে ভোট আনবো। দেশের মানুষ আর সেই অশান্ত পরিবেশ চায় না, শান্তির পরিবেশ চায়, দেশের উন্নতি চায়। তাই দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকেই চায়, কেননা, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা মানে দেশে শান্তি, উন্নয়ন আর অগ্রগতি। জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে গতকাল বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

 

তিনি বলেন, দেশের জনগণ কি একটু ভেবে দেখেছে এই লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদীরা ক্ষমতায় আসলে দেশের অবস্থা কি হবে? করোনা মহামারিসহ দুঃসময়ে বিএনপি’র অস্তিত্ব কোথায় ছিল? তারা তো জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি। বিএনপি যে এত লম্ফঝম্প করছে আর স্বপ্ন দেখছে জনগণ ভোট দিয়ে ভরে দেবে- এত সহজ নয়।

 

বিজ্ঞাপন

দেশের জনগণ কী বিএনপি’র শাসনামলের হাওয়া ভবন, দুঃশাসন, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, দুর্নীতি, লুটপাট, নির্যাতনের কথা ভুলে যাবে? ভুলবে না। দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গেই আছে, বাংলাদেশকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সংসদের সদস্য পারভীন জামান কবিতা, জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।

সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার সময় দেশে কয়টা সরকার ছিল? হাওয়া ভবনে একটা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আরেকটা। হাওয়া ভবনের পাওনা না মিটিয়ে দেশে কোনো উন্নয়নের কাজ হয়নি। কেউ ব্যবসা করতে পারেনি। এক ভাগ হাওয়া ভবনে আরেক ভাগ পিএমওতে তৈরি ব্যক্তিগত উন্নয়নের উইংয়ে দিতে হতো। ব্যবসায়ীদের দু’ভাগ দিয়েই তবে ব্যবসা করতে হতো। তাদের চরম দুর্নীতি, বিদেশে বিপুল অর্থ পাচারের ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআই তদন্ত করে বের করেছে। তদন্ত করে তারা খুঁজে পেয়েছে খালেদা জিয়া ও তার দুই পুত্র তারেক রহমান ও কোকোর পাচারকৃত অর্থের। এফবিআই’র প্রতিনিধি এসে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে এবং সেই মামলায় তারেক রহমানের ৭ বছরের সাজা হয়েছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান এবং ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলাতেও তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত।

 

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তারেক রহমান রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছে। বিএনপি এত লম্ফঝম্প করছে, বিএনপি দলের মাথা কোথায়? সবই তো দুর্নীতিবাজ, সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক আসামি। বিএনপি-জামায়াত জোটের সেই ভয়াল দুঃশাসন, অত্যাচার-নির্যাতন, হাওয়া ভবনের কথা কী দেশের জনগণ ভুলে যাবে? কেন দেশের জনগণ তাদের পাশে থাকবে?   প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, ৩রা নবেম্বর জেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এবং তার স্ত্রী খালেদা জিয়া এটা জানতেন বলে উল্লেখ করেন।  বলেন, জাতির পিতার খুনিদের জিয়াউর রহমান বিদেশে চাকরি দিয়ে পুনর্বাসিত করলেও একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাদের বের করে দেয়। কিন্তু ২০০১ সালে খালেদা জিয়া যখন বিচারের রায়ের তারিখ পড়েছে খুনি বিচারের কাঠগড়ায়, সেই সময় খুনি খায়রুজ্জামানকে, যে ৩রা নভেম্বর জেল হত্যায়ও জড়িত তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরি এবং প্রমোশন দেয় এবং মালয়েশিয়ায় হা্‌ইকমিশনার করেও পাঠায়। খুনি পাশাকে বিদেশে মৃত অবস্থায় প্রমোশন দেয় এবং তার ভাতা ও সবধরনের বেনিফিট পরিবারকে দেয়। তাহলে কী করে অস্বীকার করবে এই হতাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত নয়।

 

নানা কর্মসূচি: এর আগে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে সকালে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে সেখান থেকে তিনি সরাসরি সকাল সাড়ে ৭টার পর বনানী কবরস্থানে জাতীয় নেতাসহ ১৫ই আগস্ট নিহতদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর কলঙ্কজনক অধ্যায় ও কালো ছায়ার দিন ৩রা নভেম্বর। প্রতিবারের ন্যায় এবারো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমগ্র বাঙালি জাতির সঙ্গে সশ্রদ্ধচিত্তে মর্যাদা ও বেদনার সঙ্গে শোকাবহ দিবসটিকে স্মরণ করে।

 

ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধুর মতো আমাদেরও বিপদ হতে পারে: শেখ সেলিম

 

এদিকে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, যাকে তাকে বিশ্বাস করা যাবে না। আপন-পর চিনতে হবে। ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধুর মতো আমাদেরও বিপদ হতে পারে। তাই যাকে তাকে বিশ্বাস করবেন না। অতীত জেনে কাজ করবেন। তিনি বলেন, আওয়ামী পরিবারের লোকদের দিয়ে কাজ করাবেন। কেউ আমাদের কাছে ঢুকলো, আর তাকে দিয়ে কাজ করাবেন, এ বিশ্বাস করলে ঠিক হবে না। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য শেখ সেলিম বলেন, খালি স্লোগান দিলে হবে না। সেদিনও স্লোগান দিয়েছিল। বাকশাল যখন তৈরি হয়, তখন বলেছিল  বঙ্গবন্ধু যেখানে আমরা আছি সেখানে। বঙ্গবন্ধু কবরে চলে গেলেন, কিন্তু একজন লোকও সেদিন বের হলো না। সেদিন প্রশাসনের ১০ জনও বের হলে খুনিরা পালানোর জায়গা পেতো না। তিনি বলেন, ১৫ই আগস্টের মতো আরেক কলঙ্কিত অধ্যায় হচ্ছে ৩রা নভেম্বর। মোশতাক, জিয়া, ফারুক, রশিদ ১৫ই আগস্টে বঙ্গবন্ধু শিশু, নারীসহ একই পরিবারের ১৮ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

 

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে খুনিরা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিল উল্লেখ করে সেলিম বলেন, ‘কিছুদিন যাওয়ার পরে তাদের মনে হলো জেলখানায় ৪ নেতাকে রাখলে পাকিস্তানের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। সেই জন্য তাদের হত্যা করলো। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে খুনিরা যখন সেনানিবাসে ঢুকলো, তখন সেনাপ্রধান বা সেনা কর্মকর্তারা বাধা দেয়নি। এর অর্থ হলো- এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে কেএম সফিউল্লাহ, জিয়া, খালেদ মোশাররফ, শাফায়েত জামিলসহ সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। শুধু তাই নয়, তারা রেডিও স্টেশনে দৌড়ে যায়। সেখানে গিয়ে মোশতাক সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। বঙ্গবন্ধুকে যে ৩২ নম্বরে হত্যা করে ফেলে রেখেছিল, সেই খবর তারা জানে। কিন্তু একজন সেনা কর্মকর্তাও সেখানে যায়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব হয়েছিল বলে দাবি করেন শেখ সেলিম।

 

তিনি বলেন, সেই দ্বন্দ্বের ফল হচ্ছে ৩রা নভেম্বর। সেদিন খালেদ মোশাররফ ক্ষমতা দখল করেন। তিনি জিয়াকে সেনানিবাসে বন্দি করে রাখেন। সাধারণ মানুষের ধারণা হয়েছিল খালেদ মোশাররফ হয়তো বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু হলো বিপরীত। তিনি ক্ষমতা দখল করলেন, আর জেলখানায় ৪ নেতাকে হত্যা করা হলো। সেই ঘটনা খালেদ মোশাররফ গোপন রেখেছিলেন বলে দাবি করে শেখ সেলিম বলেন, সেই সময় তিনি বঙ্গভবনে মোশতাক, ফারুক, রশিদদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে বঙ্গবন্ধু ও ৪ নেতার খুনিদের বিশেষ বিমানে করে ব্যাংককে পাঠিয়ে দিলেন। জাসদের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ও গণবাহিনীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুকে টার্গেট করা। জিয়া বন্দি অবস্থায় কর্নেল তাহেরের সঙ্গে পরামর্শ করে ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লব করে। জিয়া মুক্ত হয়ে ক্ষমতা দখল করে। জিয়াউর রহমান মুক্ত হয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরামর্শে লিবিয়াতে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিল বলে দাবি করেন তিনি। তাহের ও জিয়াউর রহমানের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব হয় উল্লেখ করে শেখ সেলিম বলেন, কর্নেল তাহেরের শর্ত জিয়াউর রহমান মানে না। সেই সময় সৈনিকদের বিপ্লব হয়। তাদের স্লোগান ছিল সেনা-জনতা ভাই ভাই, অফিসারের কল্লা চাই। একশ’র বেশি কর্মকর্তাকে হত্যা করে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করলো। আর ছিল একটা একটা বাকশাল ধর, সকাল বিকাল নাস্তা করো। এসব কথা নেতাকর্মীদের মনে রাখতে হবে।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।