মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫৩ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
‘যে মতিয়া চৌধুরি আমার নেতার চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছিল- সেই আওয়ামী লীগে যাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করা হচ্ছে, কেমনে যাই’

একুশে বার্তা ডেক্স : কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, আওয়ামী লীগে যাওয়ার জন্য রাতদিন ডাকাডাকি করা হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত ৭৫’র বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিরোধ যুদ্ধে জাতীয় মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধাদের মিলনমেলায় তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর স্যান্ডেল যারা টেনেছে তারা আজ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী। যে আওয়ামী লীগের জন্ম দিয়েছে লতিফ সিদ্দিকী তাকেই বহিষ্কার করা হয়েছে আওয়ামী লীগ থেকে। এখন রাতদিন আওয়ামী লীগে যাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করা হচ্ছে। আমি কীভাবে যাব? যে মতিয়া চৌধুরী আমার নেতার চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছিল তার পাশাপাশি বসে রাজনীতি করব? আমার পক্ষে তা সম্ভব না। যেখানে হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেননের মতো লোক বসে আছে। যারা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ছিলেন তাদের সঙ্গে কীভাবে যাব? এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ এমন হবে জানলে আমি বঙ্গবীর যুদ্ধে যেতাম না।
দীর্ঘ ১৯ বছর পর সহোদর সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে একই মঞ্চে বসেন কাদের সিদ্দিকী।

এ সময় তিনি ভাইয়ের পক্ষেও কথা বলেন। আওয়ামী লীগে তার অবদানের কথাও তুলে ধরেন। কাদের সিদ্দিকী বলেন, আজ প্রায় ১৯ বছর আমরা দুই ভাই পাশাপাশি কোনো জনসভায় বসিনি। খুব সম্ভবত ১টা জানাজায় আমরা একত্রিত হয়েছিলাম। তিনি বলেন, ৭৫’এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় আমরা প্রতিরোধ গড়েছিলাম। কিন্তু সরকারিভাবে আমাদের স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। আমি বলব, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের মাধ্যমে যদি জাতির কলঙ্ক মোচন হয়ে থাকে, তাহলে আমরা শুধু সরকারের স্বীকৃতি নয়, জাতীয় স্বীকৃতি চাই। যদি স্বীকৃতি না দেয়া হয় তাহলে আজ ঘোষণা করা হোক আমরা সেদিন প্রতিবাদ করে ভুল করেছি। আমাদের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর করা হোক। তিনি বলেন, যদি স্বীকৃতি না দেয়া হয়, তাহলে মুখ বুজে বসে থাকব না। আমি মনে করি এই স্বীকৃতি আদায় হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। একই সঙ্গে বলতে চাই- কোনো মানুষ যদি পিতৃপরিচয় হারিয়ে ফেলে, কেউ যদি পিতৃপরিচয় অস্বীকার করে, তাহলে তার আর কিছু থাকে না। তাকে কিন্তু সামাল দেয়া খুব কঠিন হয়ে যায়। এটা মনে রাখতে হবে সরকারকে। কাদের সিদ্দিকী বলেন, বঙ্গবন্ধু জেল থকে বের হলে আমরা তার সঙ্গে তখন কথা বলতে পেরেছি। আমার বাবা কথা বলতে পেরেছে। কিন্তু এই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য, দেখা করার জন্য তিনবার চেষ্টা করেছি। তার পিএসদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে কোনো সাড়া পাইনি। তাকে না পেয়ে শেষে চিঠি দিয়েছি। যেন এই অনুষ্ঠানে সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাইনি বরং আজকের এই মিলনমেলায় যেন না আসতে পারে কেউ তার জন্য রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমরা ইয়াহিয়ার জন্য রাস্তাঘাট বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু দেশের ভেতর এমন শত্রুতা আগে কখনো দেখিনি। তিনি বলেন, আজকে চারিদিকে সরকারের জয়জয়কার। যেদিকে তাকাই সেদিকে আওয়ামী লীগ, সেদিকে শেখ হাসিনা। ভবিষ্যতে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো জানি না। আল্লাহ কখন কার জন্য কী লিখে রাখেন আমরা কেউ জানি না। তিনি বলেন, আজকে রাজনীতির জন্য এই সভা আহ্বান করা হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা এটা। রাজনীতি যারা করে তারা শুধু ক্ষমতা দেখে। অনেকের মধ্যে কোনো কৃতজ্ঞতাবোধ নেই। নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, একজন একদিকে শ্রমিক নেতা অন্যদিকে সরকারের মন্ত্রী। তিনি আজকে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি কারও পাশে দাঁড়াই না। ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে দাঁড়াই। এ জন্যই পত্রিকায় দেখে আমন্ত্রিত না হয়েও চলে এসেছি আজকের প্রোগ্রামে। আমি রাজনৈতিক নেতৃত্ব কাদের সিদ্দিকীকে স্বীকার করি না। তবে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও ১৫ই আগস্ট পরবর্তী প্রতিরোধ যুদ্ধকে স্বীকার করি। তার নেতৃত্বেই সেদিন প্রতিরোধ যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলাম। বক্তৃতা করবো না। কারণ আমি যা বলবো তা বোঝার ক্ষমতা, প্রজ্ঞা এ দেশের রাজনীতিবিদদের নেই। কারও বিরুদ্ধে বলি না। কারণ আমি তাদের বিরুদ্ধে বলব এই যোগ্যতা তারা রাখে না। তারা ড্রয়িং রুমের নেতা। ভারত থেকে আগত সূধীর চন্দ্র দাস বলেন, স্বীকৃতিটুকু আমাদের প্রত্যাশা। আর কিছু চাই না। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর শেখ হাসিনা যাতে দেশে আসতে পারে তার পরিস্থিতি তৈরি করতে হয়েছিল আমাদের। তখন আজকের মসনদে যারা আছেন তারা কোথায় ছিলেন? এখন কেন স্বীকৃতিটুকু দেয়া হচ্ছে না। আমরাই প্রতিবাদ করেছিলাম। প্রতিবাদ সঠিক হয়েছিল কি না জনগণ মূল্যায়ন করবেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কাদের সিদ্দিকীর ছোট ভাই বাবুল সিদ্দিকী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক, কাদের সিদ্দিকীর সহধর্মিণী নাসরিন কাদের সিদ্দিকী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার প্রমুখ।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।