শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ০৭:০৬ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ৫২টি দেশের কুটনীতিকদের সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক :নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানো ঠিক হবে না বলে মতামত ব্যক্ত : আজ নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হচ্ছে : রোহিংগা ফেরত অনিশ্চিত

স্টাফ রিপোর্টার : ‘মিয়ানমারের রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি হলেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফেরত পাঠানোর পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র। আর যতদিন রাখাইনে নিরাপত্তা সৃষ্টি না হবে ততদিন তাদের পাঠানো ঠিক হবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা  বার্নিকাট। গত ২১ জানুয়ারি ৫২ টি দেশের কূটনীতিকদের সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করতে সে দেশের সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চায় রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি হলেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো হোক। তাদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়ার কোন যুক্তিকতা নেই।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ছিলেন অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মান, ইতালি, তুরস্ক, রাশিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এবং জাতিসংঘ, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ফাও), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও রেডক্রসের প্রতিনিধিরা। পরবর্তীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওআইসিভুক্ত দেশগুলোসহ ৫২টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ দিকে রোহিংগাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া নির্ধারিত সময়সীমা ২২ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। কিন্ত রোহিংগাদের ফেরত পঠানো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কবে থেকে ফেরত পাঠানো হবে তা কেউ বলতে পারছে না।
এছাড়া যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার অ্যালিসন ব্রেক বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। অন্যদিকে বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পক্ষে ভারত এই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, জোর করে রোহিঙ্গাদের পাঠানো হবে না। বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করেই তাদের পাঠানোর ব্যবস্থা করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
এর আগে ২০১৭ সালের অক্টোবরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে মন্তব্য করেছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ যে মানবতা দেখিয়েছে তার প্রশংসা করে বার্নিকাট আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে আাছে এবং এ ব্যাপারে সমগ্র বিশ্বকে বাংলাদেশের পাশে থাকার আহবান জানাবে। সে সময় কাওরান বাজারে অবস্থিত পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবন পরিদর্শন করেন মার্শা বার্নিকাট। ওই সময় তিনি সংগঠনটির সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। তিনি পোশাক শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন। মার্শা বার্নিকাট বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক শিল্পের নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে, তবে আরও অগ্রগতি প্রয়োজন। তিনি জানান, এদেশে এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্সের কার্যক্রম শেষ হয়ে গেলে একটি রূপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে সংস্থা দুটির দায়িত্ব সরকারের উপর ন্যস্ত হবে। তাই সংশ্লিষ্ট সকলপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঐক্যমতের ভিত্তিতে এই রূপান্তর প্রক্রিয়া কিভাবে হবে, তা নির্ধারণ করা বাঞ্চনীয়। তিনি বলেন, যেকোন দেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে অস্থিতিশীল পরিস্থিরি দিকে নজর রাখে মার্কিন ক্রেতারা। এসব ক্ষেত্রে অর্ডারের বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হয়ে থাকে। ওই সময় বিজিএমইএ সভাপতি তাকে জানান, এদেশের মানুষ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পছন্দ করে না। তাই নির্বাচন সামনে রেখে দেশে কোন অপ্রতিকর পরিস্থিতিও তৈরি হবে না।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা, দক্ষতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির উপর জোর দেন। তিনি বলেন, লীড টাইম মোকাবেলা করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে এবং প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ ক্রয় করে বন্দরের আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। যেহেতু ক্রেতারা অনেক চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তাদের সোর্সিং কৌশলগতভাবে ঠিক করেন, তাই লিড টাইম বাংলাদেশের সক্ষমতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ গত সাপ্তাতে বার্নিকাট চট্টগ্রাম সফর করেন।
ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করতে হলে রাখাইন রাজ্য টেকসই করা প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ নিশ্চিত করতে রাখাইন রাজ্যে টেকসই উন্নয়ন চায় ভারত। আর টেকসই উন্নয়ন হলেই রাখাইনে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন স্থায়ী হবে। তিনি আরো বলেন, রাখাইন রাজ্যের উন্নয়নের জন্য ভারতের সাথে মিয়ানমারের একটি চুক্তি আছে। কফি আনান কমিশনের রিপোর্টেও সেখানকার জীবনযাত্রার উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি যতদ্রæত সম্ভব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আর এই প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে ভূমিকা রাখতে হবে।

নির্ধারিত সময়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু হচ্ছে না। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী আজ সোমবারের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাঠপর্যায়ের অনেক প্রস্তুতি বাকি। তাই আজ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া শুরু হচ্ছে না। কবে নাগাদ প্রত্যাবাসন কাজ শুরু হবে, তার কোনো সময়সীমা সম্পর্কেও কেউ কিছু বলতে পারছেন না।

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের অবহিত করেন। তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে সই হওয়া সব চুক্তির বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছেন। এ ছাড়া মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশটির কাছে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআরকে যুক্ত করতে জাতিসংঘের এ সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করবে বাংলাদেশ। এদিকে কূটনীতিকরা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে তাদের ফেরত পাঠানো যাবে না।

বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, ভারত, চীন, জাপান, কাতার, ইইউ রাষ্ট্রদূতসহ ৫২টি কূটনৈতিক মিশনের প্রধান উপস্থিত ছিলেন। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অবশ্যই নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় হতে হবে।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত বছরের ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিদোয় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবস্থাপত্র সই করে মিয়ানমার। ওই ব্যবস্থাপত্র সইয়ের দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কাজ শুরুর কথা উল্লেখ রয়েছে। সে অনুযায়ী আজকের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু হওয়ার কথা। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া তদারকি করার জন্যে গত ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় এক বৈঠকে দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে প্রত্যেক দেশের ১৫ জন করে সদস্য নিয়ে ৩০ সদস্যবিশিষ্ট ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ (জেডব্লিউজি) গঠন করা হয়।

ওই বৈঠকেই জেডব্লিউজির কার্যপরিধিও চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি নেপিদোয় জেডব্লিউজির প্রথম বৈঠকে মাঠপর্যায়ে প্রত্যাবাসনের কার্যক্রম সুনির্দিষ্ট করে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ নামের দু’দেশের মধ্যে আরও একটি ব্যবস্থাপত্র সই হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে বলা হচ্ছে, মিয়ানমার প্রতিদিন তিনশ’ করে রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে। তবে কিছুদিন পর প্রত্যাবাসনের এ সংখ্যা বাড়বে। আগামী দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শেষ হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দাবি করছেন। কিন্তু বাস্তবে নির্ধারিত সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুই হচ্ছে না। ফলে দু’বছরে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কাজ সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। তাছাড়া প্রতিদিন খুব কমসংখ্যক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হওয়ায় পুরো প্রত্যাবাসন সম্পন্ন হতে অনেক বছর লেগে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আজ শুরু হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ, পুনর্বাসন ও প্রত্যাবাসনবিষয়ক কমিশনার সরকারের অতিরিক্ত সচিব আবুল কালাম রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘ওই রকম (আজ প্রত্যাবাসন শুরু করার) কোনো প্রস্তুতি নেই। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে অ্যারেঞ্জমেন্ট সই হয়েছে। জেডব্লিউজি গঠন ও কার্যপরিধি সই হয়েছে। ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্টও সই হলো। ফলে একটা ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। এখন আমাদের বাস্তব প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।’

বাস্তব প্রত্যাবাসন শুরু করতে কতদিন সময় লাগতে পারে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে ট্রানজিট ক্যাম্প প্রস্তুত করতে হবে। কিছু কিছু লজিস্টিক প্রয়োজন হবে। রোহিঙ্গাদের গ্রামভিত্তিক ও পরিবারভিত্তিক তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। মিয়ানমারের কাছে তালিকা পাঠানোর পর ওই দেশ তা যাচাই করে দিলে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার দিক পর্যালোচনার পর তাদের পাঠানো শুরু হবে।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম আরও বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন করতে চাই। ফলে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে তাদের সম্মতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের দিক থেকে তারা রোহিঙ্গাদের জীবিকায়নে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে- সেটা জানাও জরুরি। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর অনেক কাজ এখনও বাকি। এসব কাজ সংক্ষিপ্ত করার কোনো সুযোগ নেই।’ প্রসঙ্গত মিয়ানমারে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বর্তমানে ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। প্রত্যাবাসনের আলোচনার মধ্যে এখনও রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের আসা থামছে না।

কূটনীতিকদের ব্রিফ করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী : রোববার বিকালে দু’দফায় মুসলিম দেশ ও অন্যান্য দেশের দূতদের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ডেকে ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। কূটনীতিকদের ব্রিফ করার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন। ব্রিফিংয়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সমাজ মিয়ানমার সংকটের শুরু থেকেই বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদেরও সাহায্য করছে। আমরা তাদের বলেছি, ভবিষ্যতেও যাতে এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘ওরা যাবে কোথায়, থাকবে কোথায়। এখন কিছু লোক তো আসবেই। যখন তারা প্রথম এসেছিল- কী বিশৃঙ্খল ছিল। আপনারা যারা কক্সবাজারে গিয়েছেন তারা দেখলে অবস্থাটা বুঝতে পারবেন।’ নো ম্যান’স ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রত্যাবাসন করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান মন্ত্রী।

মাহমুদ আলী আরও বলেন, ‘ভেরিফিকেশন ফর্মটা হবে ফ্যামিলি বেজড। হেড অব দ্য ফ্যামিলি একজনকে রেখে বাকি নামগুলো ওই ফর্মে তোলা হবে। এই ফর্মগুলো ফিলাপ করতে হবে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে আমরা জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাকে যুক্ত করব। তারা আমাদেরকে একটি মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের ড্রাফট দিয়েছে। ওটার ওপর কাজ হচ্ছে। এটা ফাইনাল হয়ে গেলে বাংলাদেশ ও ইউএনএইচসিআরের মধ্যে চুক্তি হয়ে যাবে।’

মিয়ানমার জাতিসংঘকে যুক্ত করতে নীতিগতভাবে রাজি হয়েছে। তবে প্রথমেই জাতিসংঘের কোনো সংস্থাকে তারা যুক্ত করবে না। তবে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী যুক্ত করবে বলে জানিয়েছে। এ সময় ১৯৯২-৯৩ সালের উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ওই সময়ও রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমার প্রথমে জাতিসংঘকে যুক্ত না করে পরবর্তী সময়ে করেছিল। তারা রেডক্রসকেও যুক্ত করতে রাজি হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে জাপান, চীন ও ভারত সহযোগিতা করছে। ইন্ডিয়ার সঙ্গে মিয়ানমারের একটি মেমোরেন্ডাম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যেসব দেশের দূতাবাস মিয়ানমারে আছে সেসব দেশকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঠিক কোন দিন থেকে শুরু হবে সেরকম তারিখ-টারিক বলা খুব মুশকিল। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ২৩ জানুয়ারি প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়টি সে দেশের গণমাধ্যমে এসেছে।’ এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা কী বলছে সেটা তাদের কাছে জানতে চান।’

রোহিঙ্গারা যেতে চাচ্ছে না বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বের হওয়া খবরের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যেতে না চাইলে তো জোর করে পাঠিয়ে দেয়া যাবে না। আমাদের চুক্তির সব জায়গায়ই স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কফি আনানের রিপোর্টেও সেটা আছে।’ তিনি বলেন, ‘এ জন্যই আমরা কাজ করছি। যখন রোহিঙ্গারা জানতে পারবে মিয়ানমারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। তাদের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করছে। এসব বিষয় দেখলে তখন তারা নিজেরাই যেতে উৎসাহী হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘ফিরিয়ে নেয়া রোহিঙ্গাদের যেন ক্যাম্পে আটকে রাখা না হয়, সে বিষয়েও আমরা কথা বলেছি। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, লাওস ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে মিয়ানমারের বর্ডার আছে। কয়েক মাস আগে এসব দেশের দূতদের রাখাইন পরিদর্শনে নেয়া হয়েছিল। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি যাতে আবারও এমন উদ্যোগ নেয়া হয়। এমন উদ্যোগ নিলে আমি নিজেও যেতে পারি।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।