বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ১২:০৩ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
শাহজালালের নিরাপত্তা আবারও প্রশ্নবিদ্ধ : পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই থাই এয়ারে বীরদর্পে ওঠে গেল পুলিশের এসআই! অবশেষে গ্রেফতার : প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাশিদা কিছুই জানেন না ! পরিচালক বললেন এটা দুর্ভাগ্যজনক

বিশেষ সংবাদদাতা :  শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সমুন্নত’র কথা বলা হলেও আবার  নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অরক্ষিত হয়ে পড়েছে শাহজালালের ডিপারচার  লাউন্ঞের সব কটি ইমিগ্রেশন প্রবেশ গেট, বোর্ডিং ব্রীজ এলাকা তথা পুরো বিমানবন্দর এলাকা।  এসব এলাকা থেকে সিএএবির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী প্রত্যাহার করায় এ ধরনের ঘটনাঘটলো। বহজাতিক বাহিনী থেকে আগত ‘এফসেক’ সদস্যরা এসব কি পয়েন্টে ডিউটি করছে। আর এর সুবাধে কোন রকম নিরাপত্তা চেকিং ছাড়াই অবাধে যাত্রী ব্যতীত যে কেউ প্রবেশ করছে। আর এ ভাবেই গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে টিজি ফ্লাইটে ঢাকা রেন্ঞের এসআই আশিকুর রহমান অবাধে ইমিগ্রেশন গেট দিয়ে প্রবেশ করে বোর্ডিং ব্রীজ পার হয়ে শেষ নিরাপত্তা চেকিং  (আইনেস) ছাড়াই একদম বিমানে ওঠে বাচ্চা নিয়ে বিমানের সিটে বসে পড়ে। বিমানটি উড্ডয়নের পর ঘটনা ফাস হওয়ার পর পুশব্যাক করে ওই এসআই আশিকুরকে বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয়। আর এটাই হলো শাহজালাল বিমানবন্দরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা ! আর এই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা বলেই যুক্তরাজ্যের কার্গো বিমান পরিবহনে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকঢোল পিটিয়ে নিষেধাঙ্ঘা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,  এক আত্মীয়কে এগিয়ে দিতে পুলিশের পোশাক পরে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্যাংককগামী থাই এয়ারওয়েজের বিমানে উঠে বসেছিলেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আশিকুর রহমান। বিষয়টি ধরা পড়লে ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ রয়েছে বলে পাইলট বিমান চালাতে অস্বীকৃতি জানান। পরে এক ঘণ্টা দেরিতে উড়োজাহাজটি আকাশে ওড়ে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রোববার রাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে। ব্যাংককগামী টিজি-৩৪০ উড়োজাহাজটির রোববার রাত দুইটার সময় ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। পরে সিভিল অ্যাভিয়েশন ও শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে রাত তিনটার দিকে উড়োজাহাজটি এক ঘণ্টা দেরিতে ঢাকা ছাড়ে।

আলোচিত এসআই আশিকুর রহমান ঢাকা রেঞ্জে কর্মরত। সম্প্রতি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) বদলি হয়েছেন। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জ বলে তিনি বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পুলিশ ও বিমানবন্দরে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থা নানাভাবে চেষ্টা করে গেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

১০ শর্তে প্রায় দুই বছর পর আজ রোববার বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো পরিবহনে বাধা কাটে। নিরাপত্তাসহ কয়েকটি কারণে ২০১৬ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাজ্যের ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্ট হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো পণ্য পরিবহনে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর মধ্যেই  এ ঘটনা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বিব্রত করেছে।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, রোববার রাতে ইমিগ্রেশন পুলিশের  ইউনিফরম পরে এসআই আশিকুর রহমান বিমানবন্দরে ঢোকেন। কর্মকর্তারা তাঁকে আটকালে তদন্তের প্রয়োজনে ভেতরে যাওয়া প্রয়োজন বলে তিনি ইমিগ্রেশনের ১ নং গেট  অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকে যান। পরে তাঁকে আবিষ্কার করা হয় থাই এয়ারওয়েজের বিমানের  ভেতরে একদম সিটে বসা অবস্থায়। বিমানটি তখন উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় বিমানে তাঁর বেআইনি অবস্থান শনাক্ত হলে বিমানকর্মীরা তাঁকে নামিয়ে আর্মড পুলিশের হেফাজতে দেন। বিমানটির উড্ডয়ন বাতিল করা হয়। ভ্রমণের ন্যূনতম কাগজপত্র ছাড়া বিমানে কারও উঠে বসার পরে নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখিয়ে বিমান চালাতে অস্বীকৃতি জানান ক্যাপ্টেন।

এরপরে সিভিল এভিয়েশন ও বিমানবন্দরের লোকজন বিমানটির ক্যাপ্টেনের সঙ্গে দেনদরবারের পরে তিনি বিমান নিয়ে আকাশে ওড়েন।

আটকের পর ওই এসআই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেন, তিনি তাঁর মামিকে এগিয়ে দিতে বিমানের ভেতরে গিয়েছিলেন।

এদিকে এ ঘটনায় চরম বিব্রত হয়েছেন বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা। অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। কেউ কেউ বিষয়টিকে গণমাধ্যমে না আনার কথা বলেছেন। তবে বিষয়টি যে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য গুরুতর নিরাপত্তা লঙ্ঘন, তা সবাই স্বীকার করেছেন। সাধারণত বিমানবন্দরের এমন জায়গায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, তল্লাশি ছাড়া কারোরই ঢোকার কথা নয়। আর এ সব নিরাপত্তাজনিত কাজ করে থাকে সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী। কিন্ত বিমানবন্দরের এ সব কি- পয়েন্ট থেকে সিএএবির নিরাপত্তা বাহিনীর ডিউটি প্রত্যাহার করে এফসেক বাহিনীর সদস্যরা  ডিউটি করছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক কাজী ইকবাল করিম রোববার বিকেলে  বলেন, ‘পুলিশের পোশাকের এ ধরনের অপব্যবহার খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা যখন অনেক চেষ্টার পরে একটা ফল (যুক্তরাজ্যের কার্গো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার) পেতে যাচ্ছি, তার আগের দিন পুলিশ কর্মকর্তার এ ঘটনা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা পুলিশের সর্বোচ্চ মহলের কাছে তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করব। আমরা একদিকে চেষ্টা করে যাচ্ছি, আর এর মধ্যে ইউনিফরমধারী কেউ যদি এ রকম করেন, তাহলে তো চলবে না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এ ধরনের ঘটনা ঠেকানো যাবে না।’

তবে এ বিষয়ে বিমানবন্দর থানায় কিছু জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু জানানো হয়নি, আর পুলিশের কোনো লোককে থানা হেফাজতে রাখাও হয়নি।’

বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাশিদা সুলতান,  এ ঘটনার কিছুই জানেন না বলে  জানান। তবে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, আটক আশিকুরকে  দুপুরে ঢাকা রেঞ্জের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।