শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১২:০৭ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : প্রতিকূলতা জয় করেই টিকে থাকতে হবে

ডেক্স রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, সব প্রতিকূলতা জয় করেই আমাদের টিকে থাকতে হবে। করোনাভাইরাসে মরি, গুলি খেয়ে মরি, অসুস্থ হয়ে মরি, মরতে একদিন হবেই। এই মৃত্যু যখন অবধারিত সেটাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি ভয় পাইনি। কখনো ভয় পাবো না। আমি যখন বাংলাদেশে ফিরে আসি, সেটা ছিল সেই বাংলাদেশ, যেখানে আমার বাবা, ভাই, বোন, শিশু ভাইটিকে পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছিল। আমাদের পরিবারের বহু সদস্য বুলেটবিদ্ধ, আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী বুলেটবিদ্ধ বা সিপ্লন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন।
গতকাল জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা এ কথা বলেন। এর আগে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সংসদ অধিবেশনে অংশ নেয়ায় নিজের আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

সংসদ নেতা বলেন, করোনার মধ্যে এলো আম্পান। আমরা ২৪ লাখ মানুষকে পশুপাখিসহ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছি। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের সম্পদের কিছু ক্ষতি হলেও মানুষের জান তো বাঁচাতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের সবচেয়ে বড় বিপদ। যারা ছোটখাট কাজ করতো তারা কর্মহীন হয়ে পড়ে। প্রতিটি মানুষের খোঁজ নিয়ে তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছি। ত্রাণ তহবিল থেকে সাহায্য দেয়া হয়েছে। আমি ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি শিল্পীদের সহযোগিতা করতে হবে। কিছু জিনিস আছে, মানুষের নজরে আসে না। কিছু জনগোষ্ঠী সবার অগোচরে থেকে যায়। তাদের কষ্ট লাঘবেও আমি চেষ্টা করছি। তাদের কাছে সহযোগিতা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি। একজন মানুষও যেন না খেয়ে থাকে। আমাদের দলের নেতা-কর্মী যে যেখানে আছে প্রত্যেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। আপনজন লাশ ফেলে যায় ভয়ে। পুলিশ কিন্তু তাদের জানাজা দাফন করেছে। আমাদের ছাত্রলীগের ছেলেরা ধান কাটায় সহযোগিতা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সবারই কাজ করার সুযোগ ছিল না। যারা নিয়মিত চাকরির বেতন পেতেন তার বাইরে কিছু লোক থাকেন, যারা ছোটখাট কাজ করে খান, ব্যবসা করে খান, এমন প্রতিটি মানুষের খবর নিয়ে তাদের ঘরে ঘরে খাবার দেয়ার ব্যবস্থা করি। এমনকি রিকশার পেছনে যারা আর্ট করে, সাংস্কৃতিককর্মী তাদেরকে কিছু সরকারিভাবে, কিছু আমাদের ত্রাণ তহবিল থেকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছি। আর্টিস্ট বা শিল্পী কিংবা শিল্পীদের সহযোগিতা করে যারা, তাদের কথা কেউ ভাবে না। এই ভাবনাটা কিন্তু আমার নিজের না, সত্যিকারের কথা বলতে কি- এটা শেখ রেহানার চিন্তা। সেই কিন্তু খুঁজে খুঁজে তাদের সাহায্য দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।

নিজের প্রিয় শিক্ষক এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী বা যাই-ই হই না কেন, স্যারকে আমি সবসময় নিজের শিক্ষক হিসেবেই সম্মান করতাম। তার বয়স হয়েছিল। তার চিকিৎসার সব ধরণের ব্যবস্থাও করেছিলাম। এই দুঃসময়ে অনেক বিশিষ্টজনকে আমরা হারিয়েছি। কাকে ছেড়ে কার কথা বলবো। প্রকৌশলী জামিলুর রেজা চৌধুরী পদ্মা সেতু নির্মাণে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন, সবসময় খোঁজ-খবর রাখতেন। তার অবদান সকলে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮১ সালে ফিরে আসার পর যাদেরকে সবসময় পাশে পেয়েছি প্রয়াত সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা তাদের একজন। অত্যন্ত সাহসী, ত্যাগী ও সাহসী নেতা ছিলেন। প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে প্রথম কাতারে থেকে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন অসুস্থ্য থেকেও এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে সহায়তা দিয়েছেন। আমি মানা করা পরও শুনেননি, উল্টো বলেছেন মানুষের কাছে না গেলে তার ভালো লাগে না। প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ বেগম প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যখন অনার্সে পড়ি, তখন মাস্টার্সের ছাত্রী ছিলেন মমতাজ বেগম। একসঙ্গে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল করেছি। প্রয়াত সংসদ সদস্য কামরুন নাহার পুতুল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা প্রতিবাদ করেছেন তাদেরকে অনেককেই জিয়াউর রহমান হত্যা করেছে। সাবেক এমপি পুতুলের স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান পটলকে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের কাছে এ জন্য আলাদাভাবে ত্রাণ দিয়ে রেখেছি যাতে তারা সাহায্য পান। যে যেখানে আছে, যে যেটুকু পেরেছে প্রত্যেকেই সাহায্য করেছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষও সাহায্য করেছে।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।