শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৯:১২ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
সিএএবির ঠিকাদারি বিভাগে (ইএম) ভুতের আছর! উপসহকারি প্রকৌশলী আবুবকর সিদ্দিকের নিয়োগ প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিকপত্র : আইন কর্মকর্তার ‘না’: প্রকৌশলী সেলিমের চাকরিতে যোগদান কয়বার ? দুটি সহকারি প্রকৌশলী(ইএম) পদ খালি থাকার পরও পদায়ন করা হচ্ছে না

বিশেষ সংবাদদাতা : সিভিল এভিয়েশনের ( ইএম) প্রকৌশল বিভাগে ভুতের আছর লেগেছে। ৩৩ বছর ০৩ মাস ৫ দিন বয়সে উপসহকারি প্রকৌশলী (ইএম) পদে আবুবকর সিদ্দিককে চাকরি দেয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে দাপ্তরিকপত্র দিয়েছে বিমান সচিবকে। এ দিকে ২০০১ সালে উপসহকারি প্রকৌশলী (ইএম) পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগদানকৃত প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম মন্ডল এবং মাহমুদ হাসান সেলিমের জেষ্ঠতা নিয়ে জগাখিচড়ি করেছে সিএএবি কর্তৃপক্ষ। ৪ দিনে আগে চাকরিতে যোগদান করলেও প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান সেলিমকে জেষ্ঠ তালিকায় মন্ডলের জুনিয়র করে জেষ্ঠতার তালিকা প্রনয়ণ করা হয়েছে।
এ দিকে দুটি সহকারি প্রকৌশলী (ইএম) পদ খালি থাকার পরও বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত যিনি পরিক্ষায় প্রথম, ভাইভায় প্রথম এসিআর ভাল- তাকে গত ডিপিসি কমিটিতেও পদোন্নতি না দিয়ে- বিতর্কিত- যার বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আপত্তিপত্র, যিনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করছেন, দুদকের মামলা রয়েছে- সেই তাদেরকেই ওই পদে পদোন্নতির ব্যাপারে কলকাঠি নাড়ছে সিএএবি কর্তৃপক্ষ- এমন আলোচনা- সমালোচনা শোনা যাচ্ছে সিএএবির প্রকৌশল দপ্তরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির মনজুরি আদেশে ১৯৯৬ সালে একটি প্রকল্পে সহকারি প্রকৌশলী (ইএম) পদে ২ জন এবং উপসহকারি প্রকৌশলী পদে ৪ জনসহ মোট ৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। সহকারি প্রকৌশলী পদে জাকারিয়া, সুভাশিষ বড়–য়া এবং উপসহকারি প্রকৌশলী পদে শাহিনুর আলম, আছালত হোসেন খান, মো. সফিকুল আলম, আয়েশা হক নিয়োগ পান।্নিয়মানুযায়ী প্রকল্প শেষ চাকরি শেষ। কিন্ত তাদের চাকরি শেষ হয়নি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ২০১০ সালে নতুন করে পদ সৃষ্টি করে তাদেরকে রাজস্ব খাতে নেয়া হয়। এ জন্য কোটি টাকার ওপরে খরচ করতে হয় বলে তারা বলে বেড়ান। এ ক্ষেত্রে সিএএবি কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন টেবিলে দিতে হয় আরো কয়েক লাখ টাকার নজরানা বলেও তারা বলে বেড়ান। সংস্থাপন/ বর্তমানে জন প্রশাসন, অর্থ, আইন ও বিমান মন্ত্রণালয়ে হয়ে তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থায়ীকরন করা হয়। এদের মধ্যে বর্তমানে ২ জন নির্বাহী প্রকৌশলী বাকি ৪ জন সহকারি প্রকৌশলী পদে দিব্যি চাকরি করছেন। কিন্ত তাদের চাকরি ২০১০ সালে রাজস্ব খাতে স্থায়ীকরণ করা হলেও ২০১০ সালের বদলে ১৯৯৬ সালের জেষ্ঠতা দেয়া হয়- যা সরকারি চাকরি বিধি লংঘন বলে অনেকে মনে করেন।
এ ক্ষেত্রে সিএএবির সাবেক উপপরিচালক ক্যাপ্টেন অব. ইকরাম উল্লাহ স্বাক্ষরিত ১০ম গ্রেড পদধারি (ইএম) চুড়ান্ত জেষ্ঠতার তালিকায় মো. শাহিনুর আলম উপসহকারি প্রকৌশলী পদে চাকরিতে প্রথম যোগদানের তারিখ ২৩-০৬-১৯৯৬, সিনিয়র উপসহকারি প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির তারিখ : ১৫-০২-২০১১ , যদিও তার চাকরি রাজস্ব খাতে ২০১০ সালে, সেই ক্ষেত্রে তার জেষ্ঠতার তারিখ ২০১০ সাল থেকে গণণা হওয়ার বিধান থাকলেও ১৯৯৬ সালের যোগদানের তারিখকেই সিনিয়রটি হিসেবে কাউন্ট করা হয়েছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দর : জেনারেটর ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগে ৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা হয়েছে। এরা হলেন : নির্বাহী প্রকৌশলী মিহির চাদ দে , সহকারি প্রকৌশলী ভবেশ চন্দ্র রায় , সিনিয়র উপসহকারি প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম মন্ডল , কক্সবাজার বিমানবন্দরের ম্যানেজার হাসান জহির এবং ঠিকাদার ( ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল) শাহাবুদ্দিন।
প্রকৌশলী আবুব্করের নিয়োগ কি বৈধ : ৩৩ বছর ০৩ মাস ৫ দিন বয়সে শূন্য পদে বিঙ্ঘপ্তির মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ না দেয়ায় নিয়োগ শর্তের ব্যত্যয় ঘটেছে বলে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিকপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত দাপ্তরিকপত্র বিমান সচিবকে প্রদান করা হয়েছে, সিএএবির চেয়ারম্যানকেও অনুলিপি দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন ওঠেছে নিয়োগ প্রক্রিয়া লংঘন করে কি উপসহকারি প্রকৌশলী (ইএম) পদে আবুবকর সিদ্দিককে চাকরি দেয়া হয়েছে?
কোন নিয়োগ বিঙ্ঘপ্তি ছাড়াই, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ ছাড়াই একটি সাধারন নোটে বয়স উত্তীর্ণ হলেও উপসহকারি প্রকৌশলী পদে আবুবকর সিদ্দিককে চাকরি দেয়া হয়।
এ দিকে উপসহকারি প্রকৌশলী স্বপন কুমার সাহার চাকরির ইস্তফাপত্রও জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে কিনা- তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। গত ১০ বছরে প্রকৌশলী আবুবকরের জন্য সরকারকে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে।
শুধু তাই নয়- তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর( ইএম)-এর নোটে আবুবকরকে পদোন্নতি দিয়ে সহকারি প্রকৌশলী চলতি দায়িত প্রদান করা হয়েছে। প্রকৌশলী আবুবকর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রিট মামলা, কোর্ট কন্টটেম্প মামলা করেছে।
সিএএবির আইন কর্মকর্তার ফাইলিং নোট-এ প্রকৌশলী আবুবকর সিদ্দিককে সহকারি প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির মতামত প্রদান করা হয়েছে। উক্ত নোটে স্বাক্ষর করেন সংস্থার আইন কর্মকর্তা। উক্ত নোটে আবুবকর সিদ্দিককে বিঙ্ঘপ্তি ও পরিক্ষার মাধ্যমে উপসহকারি প্রকৌশলী (ইএম) পদে নিয়োগ দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে গত ১০ অক্টোবর/২০১৭ জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০৬ নং দাপ্তরিকপত্রের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে নিয়ন্ত্রনকারি মন্ত্রণালয় হতে এ বিষয়ে পত্র পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে ।
উক্ত নোটে আরো বলা হয়েছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে দৈনিকভিত্তিক উপসহকারি প্রকৌশলী (ইএম) পদে নিয়োগকৃত নিজাম উদ্দিনকে( ১৯৮৭ সালে নিয়োগকৃত শ্রীমান কান্তি বড়–য়া, উপসহকারি প্রকৌশলী (ইএম) ইস্তফা দেয়ার কারনে) নিয়মিত পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।
একইভাবে স্বপন কুমার সাহা ইস্তফা দিলে তার শূন্যপদে গত ০৬-০৪-১৯৯৭ তারিখে আবুবকর সিদ্দিককে উপসহকারি প্রকৌশলী (ইএম) পদে কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেন। নিয়োগ পাওয়ার পূর্বে তিনি ইলেকট্রিশিয়ান পদ হতে ইস্তফা প্রদান করেন।
মন্ডল : প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম মন্ডলের বিরুদ্ধে শুধু দুদকের মামলাই নয়- কর্তব্য কাজে গাফিলতি, উদাসীনতা, সরকারি টাকা খরচের অপচয়, ৫ বছর যাবত ওএসডি , জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে দোষী, বিভাগীয় মামলা এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রধান প্রকৌশলীর আপত্তিপত্র রয়েছে। তার সার্ভিস রেকডর্ খারাপ। তারপরও পদোন্নতির তালিকায় তার নাম তালিকাভুক্তকরণ করা হয়েছে।
দুই প্রকৌশলীর জেষ্ঠতা : জেষ্ঠতার তালিকায় প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চৌধুরি ১১-০৭-২০০১ তারিখে স্বাক্ষরিত মন্ডলের ১ম যোগদানের তারিখ: ১৮-০৬-২০০১খ্রি: এবং মাহমুদ হাসান সেলিমের যোগদানের তারিখ: ১৪-০৬-২০০১। সে ক্ষেত্রে সেলিম ৪ দিনের সিনিয়র।
প্রকৌশলী সেলিমের চাকরিতে যোগদানের তারিখ দুই রকম। একবার ১৪-০৬-২০০১ এবং আবার ১৬-০৬-২০০১খ্রি: চাকরিতে যোগদানপত্র দৃশ্যমান করেছে সিএএবি কর্তৃপক্ষ। তিনি নিজেই প্রশ্ন করছেন- তিনি চাকরিতে কয়বার যোগদান করেছেন। প্রকৌশলী সেলিমের দাবি তিনি ১৪-০৬-২০০১ খ্রি: একবারই ১ম চাকরিতে যোগদান করেছেন, ২য়বার যোগদানের প্রশ্নই ওঠে না । তার দাবি তার চাকরিতে যোগদানের তারিখ টেম্পারিং করা হয়েছে।।
গত ০৫-১১-২০০৩ তালিখের সহকারি পরিচালক প্রশাসন আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ স্বাক্ষরিত জেষ্ঠতা প্রনয়ন তালিকাপত্রের দাপ্তরিকপত্রের চাহিদা মোতাবেক জেষ্ঠতার তালিকায় সেলিমের ১ম যোগদানের তারিখ ১৪-৬-২০০১ খ্রি। তার দাবি টেম্পারিং করে তার ১ম যোগদানের তারিখ ১৬-০৬-২০০১ তারিখ অন্তর্ভুক্ত করেও সেলিমকে মন্ডলের জুনিয়র করে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কিন্ত মন্ডলের ১ম যোগদানের তারিখ ১৮-০৬-২০০১ খ্রি: তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও সেলিম ২ দিনের সিনিয়র। কিন্ত তাকে মন্ডলের জুনিয়র করে জেষ্ঠতার তালিকা করা হয়েছে।
গত ২৭-১১-২০১৮ তারিখের ডিপিসি কমিটির মিটিংয়েও সেলিমকে মন্ডলের জুনিয়র করে জেষ্ঠতার তালিকা করা হয়েছে।
কিন্ত গত ১৫-০২-২০১১ এক দিনেই একত্র ৬ জনকে সিনিয়র উপসহকারি প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।