শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
সৌদী আরব ও বাংলাদেশে বিমানের ৭ ক্রু গ্রেফতার : দুই শতাধিক বিমান কর্মী মাদক ও সোনা চোরাচালানে জড়িত : তল্লাশির আওতায় আসছে বিমানের কেবিন ক্রুরা

একুশে বার্তা প্রতিবেদন :  চোরাচালান-মাদকপাচারসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে সৌদী আরবে ও বাংলাদেশে বিমানের ৭ কেবিন ক্রু গ্রেফতার হওয়ার পর তল্লাশির আওতায় আসছে বিমানের কেবিন ক্রুরা। তাদেরকে বিমান থেকে নামার পর আন্তর্জাতিক বর্হিগমন ও আগমনি যাত্রীদের মতো তল্লাশির আওতায় আনা হবে বলে খোদ কাস্টমসের উর্ধতন কর্তা ব্যক্তি মতামত ব্যক্ত করেছেন। এ দিকে মাদক পাচারের দায়ে সৌদীতে গ্রেফতার হওয়া বিমানের দুই কেবিন ক্রুকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে বিমানের জন সংযোগ কর্মকর্তা জানান।।

সংশ্লি।ষ্ট সূত্রে জানা গেছে,বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কতিপয় নারী ও পুরুষ ক্রু। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভাড়া খাটছেন পাচারকাজে। কেউ কেউ আবার শক্তিশালী চোরাচালান সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রকও। তাদের হাতেই ফ্লাইট শিডিউল থেকে শুরু করে যাবতীয় দেখভালের দায়িত্ব। শুধু ক্রুরাই নয়, বিমানের নিরাপত্তা রক্ষী, প্রকৌশল থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীও জড়িয়ে পড়েছেন সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রাপাচার চক্রে।

বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অন্তত অর্ধশত ক্রুসহ দুই শতাধিক বিমানকর্মী চোরাচালানে জড়িত। এদের কাজ বিমানবন্দর পর্যন্ত সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রা বহন করা। মাদক পাচারেও জড়িয়ে পড়েছেন কেউ কেউ। গত সপ্তাহে সৌদির বিয়াদে ইয়াবা ও ভায়াগ্রাসহ দেশটির পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছেন দুই বিমান ক্রু। একই দিন ১২ লাখ টাকার চোরাচালানের পণ্য পাচার করতে গিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে ধরা পড়েন ৫ নারী বিমান ক্রু। এর আগেও চোরাচালানের সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন বেশ কয়েকজন বিমানকর্মী।

এদিকে বিমানকে ব্যবহার করে চোরাচালান, মাদক কারবারসহ নানা অপকর্মে ক্রুরা জড়িয়ে পড়ায় দেশ-বিদেশে ক্ষুণœ হচ্ছে বাংলাদেশের সরকারি এয়ারলাইনসটির ইমেজ। সব সিকিউরিটি উতরে দেশ থেকে মাদক নিয়ে বিদেশের মাটিতে ধরা পড়ায় প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্টদের নজরদারির বিষয়টিও। দুয়েকটি ঘটনায় ক্রুরা ধরা পড়লেও চোরাকারবারের মূলহোতারা এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত মঙ্গলবার রিয়াদের ‘রেডিসন ব্লু’ হোটেলে ইয়াবা-ভায়াগ্রাসহ গ্রেপ্তার হন দুই কেবিন ক্রু আরিফ পাঠান রুহিদ ও ফেরদৌস আল মামুন। তবে সাত দিন পেরিয়ে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি বিমান কর্তৃপক্ষ।

একই দিন শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ১২ লাখ টাকা মূল্যের চোরাচালান পণ্যসহ গ্রেপ্তার পাঁচ বিমান ক্রুÑ মর্জিনা আক্তার এলিন, সালমা সুলতানা, ফারজানা গাজী, মইন উদ্দিন আদনান ও রোমান সিকদারের বিরুদ্ধেও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে। যদিও বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। রিয়াদ থেকে অভিযুক্ত ক্রুদের বিরুদ্ধে আপডেট তথ্য পাওয়া গেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, কেবিন ক্রু আরিফ ও মামুনকে শেল্টার দিতেন বিমানের গ্রাহক শাখার এক কর্মকর্তা। টাকার নেশায় সপ্তাহের যে কটি দুবাই ও সৌদিগামী ফ্লাইটে তারা কাজ করতেন প্রতিটি ট্রিপেই বাংলাদেশ থেকে ইয়াবার চালান পাঠাতেন। এসব মাদক শরীরে বিশেষভাবে লুকিয়ে নেওয়া হতো। পরে এক একটি ইয়াবা ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি দামে সরবরাহ করতেন বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের কাছে। এভাবে দিনের পর দিন তারা আকাশপথে ইয়াবার চালান খালাস করলেও গত মঙ্গলবার ভোরে বেশ কিছু ইয়াবা ও ভায়াগ্রা ট্যাবলেটসহ রিয়াদে তারা গ্রেপ্তার হন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) শাকিল মেরাজ বলেন, রিয়াদে পুলিশের হাতে মাদকদ্রব্যসহ আটক কেবিন ক্রু আরিফ পাঠান রুহিদ ও ফেরদৌস আল মামুন বর্তমানে রিয়াদের পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। তাদের বিষয়ে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। তবে কোনো আপডেট তথ্য এখনো আমরা পাইনি। ঘটনা ও অভিযোগের বিস্তারিত জানার পরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. শহিদুল ইসলাম  বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে সন্দেহভাজনদের তল্লাশি কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। সম্প্রতি অবৈধভাবে আনা মোবাইল ফোন সেট ও কসমেটিক্সসহ বাংলাদেশ বিমানের পাঁচ বিমান ক্রুকে আটক এবং রিয়াদে মাদকসহ দুই ক্রু গ্রেপ্তার হওয়ার পর এ বিষয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি এয়ারপোর্ট থেকে বহিঃগমন ও বিদেশ থেকে ফেরত আসা সাধারণ যাত্রীদের মতো বিমানের ক্রুকেও এখন তল্লাশির আওতায় আনা হচ্ছে। এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।