শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১২:২৭ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
স্বাধীনতার ঘোষক এবং আমৃত্যু এক গণতন্ত্রীর নাম শহীদ জিয়া

ড. কর্ণেল অলি আহমদ, বীর বিক্রম

শহীদ জিয়া  ’ ৭১ সনে জাতির দূর্দিনে নিজের জীবন বাজি রেখে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। অসম সাহসিকতার পরিচয় দেন। দেশবাসিকে দিকনির্দেশনা দেন এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিঃস্বার্থভাবে যুদ্ধে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান। তার এই ঘোষণার কারণে জনগণ উজ্জীবিত হয়, দিকনির্দেশনা পান। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রায়ত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮২তম জন্মবাষির্কীর ক্রোড় পত্র থেকে তার এই লেখাটি সংগৃহিত।

জাতি ধর্ম ও দলমত নির্বিশেষে সকলে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরে দ্বিতীয় বার ৩০ মার্চ অপর এক ঘোষণার মাধ্যমে,নিজে তিনি কমান্ডার হন চীফ অব বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সেস ঘোষণা করেন। ঐ সময় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সীমান্ত পার হয়ে আশ্রয় নেন। ভারত সরকারের সহযোগীতা অতি অল্প সময়ে মধ্যে তারা নিজেদেরকে সংগঠিত করেন এবং ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সাল প্রবাসে বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। মেজর জিয়া অন্যান্য অফিসারদের ন্যায় একজন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি ‘জেড ফোর্সের’ ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং যুদ্ধ পরিচালনা করেন।  এরই মাধ্যমে তিনি জনগণ, দেশের আইন ও রাজনীতিবিদদের প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধার প্রমাণ দিয়েছেন।

১৯৭৫ সনের ৭ নভেম্বরের সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে শহীদ জিয়া সরাসরি দেশ শাসনের সাথে জড়িয়ে হন। তার আগেই দেশে মার্শাল ল’ চালু ছিল। ক্ষমতাসীন হবার পর সবাইকে বলতেন, সামরিক সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়েছে, না কোন স্থায়ী পদ্ধতি গড়ে তোলার সম্ভব হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে এমন একটি মহান উদ্দেশ্য নিয়ে সৃষ্টি করেছেন। অনুরুপ ভাবে প্রত্যেক মানুষ জন্মের পর থেকে পায় প্রয়োজনীয় অনুশীলন এবং গড়ে ওঠে তার জীবন পদ্ধতি। ঠিক তেমনিভাবে তিনি মনে করতেন , সামরিক পোশাক পরিহিত অবস্থায় তার দায়িত্ব হলো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, রাষ্ট্র পরিচালনা করা নয়। এছাড়াও  ঐ সময়ে দেশের প্রধান সমস্যা ছিল, আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনা। তাই তিনি ১৯৭৫- এর ডিসেম্বরের পর থেকে সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে. বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেত্ববৃন্দের সাথে আলাপ-আলোচনা শুরু করেন। এরই ফলশ্রুতি হিসেবে ১৯৭৭ সনে ‘হ্যা-না’ ভোট এবং ১৯৭৮ সনে সরাসরি জনগণের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। অতঃপর ১৯৭৯ সনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে  বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। নিরক্ষরতা দূরীকরণ, শিল্প বিপ্লব ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও মেহনতি মানুষের প্রতি ছিল তার অগাধ শ্রদ্ধাবোধ। তিনি তার কর্মকান্ড ও কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্যে সুখী, সমৃদ্ধশালী ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

শহীদ জিয়া ছিলেন একজন ত্বরিৎকর্মা পুরুষ, স্বচ্ছ ও স্পষ্ট ধারণার অধিকারী। তিনি ছিলেন অত্যন্ত চৌকস, প্রাজ্ঞ ও সুদক্ষ অফিসার এবং স্বল্পভাষী। যে কোন পরিস্থিতিতে দ্রুত, সুপরিকল্পিত ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত  গ্রহণে ছিলেন সক্ষম। তার স্মৃতিশক্তি ছিলো অত্যন্ত প্রখর। অনেক সময় লক্ষ্য করেছি ছোটখাটো বিষয়ও তিনি এড়িয়ে যেতেন না। যেমন- রাস্তায় ভিক্ষুক কোথায় দাঁড়াতো, পুলিশ কোথায় কিভাবে দায়িত্ব পালন করতো, কোথায় রাস্তা ভাঙা ইত্যাদি সবকিছু লক্ষ্য করতেন এবং পরে বঙ্গভবনে পৌঁছানোর পর, ঐসব সমস্যার ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন। যথাসময়ে তা কার্যকরী হয়েছে কিনা, তাও তিনি খোঁজ খবর নিতেন। কখনো তাকে কোন বিষয় ভুলতে দেখিনি।

তিনি ছিলেন একজন বিশাল হৃদয়ের অধিকারী এবং ভালো মনের মানুষ। অনেক সময় দেখেছি স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসার শিক্ষাকেরা তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্যে দু/চার লক্ষ টাকা সাহায্যের জন্যে, তার সাথে দেখা করতেন। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতেন, ঐ টাকা দিয়ে কী কী উন্নয়ন করা সম্ভব হবে, তা যেন ব্যাখ্যা করেন। এতে কিন্তু অনেকে ভয় পেতেন এবং মনে করতেন হয়তো, তিনি বেশি টাকা দাবী করেছেন এবং রাষ্ট্রপতি তার উপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাদের ব্যাখ্যা  শুনার পর অনেক সময় দেখা যেতো, তিনি তাদের বলতেন যে, এত অল্প টাকা দিয়ে কি ঐ উন্নয়ন করা সম্ভব? আরো বেশি টাকা প্রয়োজন এবং অনুরূপভাবে দরখাস্ত দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিতেন।

তিনি বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারী, আধা-সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে নতুনভাবে সংস্কার, সুশৃঙ্খল, সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী এবং আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। সকল স্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। তিনি ছিলেন একজন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মহান রাষ্ট্রনায়ক, দেশপ্রেমিক, সাহসী, সৎ, চৌকষ এবং পারদর্শী নেতা। ১৯৮১ সালের ৩০ মে এ মহান নেতার ইন্তেকালে জাতি এক অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়।অামাদের অর্থনীতি : লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট রাজনৗতিবিদ

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।